কলকাতা বিভাগে ফিরে যান

চৌরঙ্গীতেই ছিল এশিয়ার প্রাচীনতম স্পেনসাস হোটেল

December 5, 2019 | 2 min read

১৮৬৭ সাল, বিলেত থেকে ব্যারিস্টার হয়ে ফিরছেন মিস্টার ডাট (মধুসূদন দত্ত)। কিন্তু পরম বন্ধু বিদ্যাসাগর মহাশয়ের পছন্দ করা ২৩ নম্বর সুকিয়া স্ত্রিটের বাড়িটি মিস্টার ডাট গ্রহণ করলেন না। তাই দেশে ফেরা মাত্রই নিজের জন্য ঘর বুক করলেন বিলাসবহুল স্পেনসাস হোটেলে। স্পেনসাস হোটেল- যা ছিল ইউরোপীয় জীবনধারার এক অন্যতম নিদর্শন।

কলকাতার মধ্যে হয়তো চিরকালই থেকে যাবে একখণ্ড ইউরোপ। তা শুধু বাজার-অর্থনীতির কারণে নয়। এই শহর ইংরেজরা সাজিয়েছিল তাদের সমস্ত নিজস্বতা দিয়ে। তাদের হাত ধরে কলকাতায় ছায়া ফেলেছিল মধ্যযুগের লন্ডন। এসেছিল কেক পেস্ট্রি। কফিশপের তর্ক-আড্ডার পরিসর। বিয়ারের ধোঁয়াটে গন্ধ, আর হোটেলের লাগামহীন উল্লাস। বিলেত থেকে এসে বাড়ি না-পাওয়া অবধি কোথায় থাকবে ইউরোপীয় মানুষেরা? তাদের কথা ভেবেই কলকাতায় তৈরি হয়েছিল স্পেনসেস হোটেল।

১৮৩০সালে এই হোটেল তৈরী করেন মিস্টার স্পেনস নামের কোনো এক ব্যক্তি। তাঁর বিস্তৃত পরিচয় আজ মেলা কঠিন। স্পেনসেস হোটেলকে তিনি বানিয়েছিলেন চোখ ধাঁধানো জৌলুসে। বলা হয়, ভারতবর্ষ তো বটেই, গোটা এশিয়া মহাদেশেই নাকি এই হোটেল ছিল প্রথম ‘হোটেল’। প্রথম কিনা, তা নিয়ে ধন্ধ থাকলেও, স্পেনসেসের খ্যাতি ছিল আকাশছোঁয়া। তৎকালীন বিভিন্ন লেখা পড়ে বোঝা যায়, খোদ ইউরোপেও পৌঁছেছিল এর খ্যাতি। গভর্নমেন্ট হাউজের ঠিক উত্তরে ছিল প্রাচীনতম এই হোটেল। ১৮৪১ সালে এই হোটেলের আ্যাটাচড বাথরুমসহ একটি রুমের ভাড়া ছিল ৩০০ টাকা। অবশ্য একমাসের জন্য। অতিথি সংখ্যা বাড়লে ২০ টাকা করে মাথাপিছু অতিরিক্ত চার্জ। সেই যুগে মহার্ঘ বললে কম বলা হয়।

কোথায় ছিল এই হোটেল? প্রাচীন বইপত্র, ছবি জানাচ্ছে গভর্নমেন্ট হাউজের অতি নিকটেই। তবে দিক নিয়ে একটা জটিলতা আছে। ১৮৮০ সাল নাগাদ হোটেলের এই জায়গাটি সরকার নিয়ে নেয়। অনেকের মতে আজ যেখানে দাঁড়িয়ে আছে, এ-জি বেঙ্গলের বিশাল অট্টালিকা, সেটা নাকি ওই হোটেলটির অবশেষেই নির্মিত।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

আরো দেখুন