বাটা মসলার স্বাদ, উনুনে রান্না ও কলাপাতা-মাটির ভাঁড়ে খেতে আসতেই হবে এখানে
পশ্চিম কলকাতার একটি হোটেল। চারপাশে ঝুলছে হ্যারিকেন, দেওয়ালে কুলোয় আঁকা লক্ষীর পা, বাইরের লাগোয়া উঠোন জুড়ে লাউডগা, দেওয়ালে আঁকা রয়েছে বাহারি সব ছবি।২০১৯-এর কলকাতায় আপনি পেতে পারেন এইসব দৃশ্য। দৃশ্যের সঙ্গে মিলিয়ে মিলবে বিভিন্ন পদের খাবার। তাও আবার ঘরোয়া ভাবে রান্না করা।
খিদিরপুর ফ্যান্সি মার্কেটের সামনে ১৬/২ কার্ল মার্স সরণি। সেখানেই পাওয়া যাবে অতি প্রাচীন ইয়ং বেঙ্গল হোটেল। চারপাশে অসংখ্য গাছের পাশাপাশি শোনা যাবে পাখিদের মিষ্টি আওয়াজ। এই হোটেল তৈরী হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ৯৪ বছর আগে। হোটেলটি নিজের হাতে তৈরী করেছিলেন অধুনা বাংলাদেশের তারাপদ গুহরায়। সাধারণ মানুষ যাতে সস্তায় ভালো ঘরোয়া খাবার খেতে পারেন, এই ভাবনা থেকেই তাঁর ইয়ং বেঙ্গল হোটেল নির্মাণ।
ইয়ং বেঙ্গল হোটেলে ভাত, ভাল, সবজি, মাছ, লেবু, পেঁয়াজ, কাঁচালঙ্কা আপনাকে পরিবেশন করা হচ্ছে কলাপাতায়। দোকানে এলেই স্বচক্ষে দেখতে পাওয়া যায় সমস্ত রান্না হচ্ছে মাটির উনুনে। এমনকি জল দেওয়া হচ্ছে মাটির ভাঁড়ে। এখানে বিউলির ডাল, আলু পোস্ত থেকে উচ্ছে ভাজা, মাছের মাথা দিয়ে বাঁধাকপি, কচু শাক, মুড়ির ঘণ্ট, মোচার কোন্তা, কাঁচকলার কোপ্তা, ডাল পেস্ট করে বড়ার ঝাল কোনোকিছুই বাদ নেই। বাঙালি যে খাবার খেতে ভুলে গেছে, যে খাবারের স্বাদ তার জিভ থেকে প্রায় সরে যেতে বসেছে, সেই ঐতিহ্যই ৯৪ বছর ধরে ধারণ করে রেখেছে ইয়ং বেঙ্গল। তবে এই হোটেলের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এবং বিশেষ খাবার হল পঞ্চরত্বু, যা সবরকমের সবজি এবং মুগভাল দিয়ে তৈরী করা হয়।
মাংসের মধ্যে পাওয়া যাবে মটন কষা এবং চিকেন কষা। তবে ইয়ং বেঙ্গল মানেই মাছের আস্তানা। কী না মাছের পদ নেই এখানে। চিংড়ি মোচার ঘন্ট, কাতলা মাছের ডিমের ঝাল, কাতলা কালিয়া, পমফ্রেট মাছের তেলঝাল, চিংড়ির মালাইকারি, ট্যাংরার ঝাল, ইলিশ ভাপা-সহ আরও বিভিন্ন মাছের পদ। এখানকার রান্নার আরও একটা বড়ো গুণ হল বাইরের কোনো মশলা ব্যবহার করা হয় না। আদা বাটা, জিরে বাটা, লঙ্কাবাটা, পোস্ত বাটা, রসুন বাটা, পেয়াজ বাটার মধ্যে দিয়ে সমস্ত রান্না করা হয়। ব্যবহৃত হয় ঘানির তেল। আপনার পছন্দমতো বাড়ির রান্না পাবেন একেবারে সাধ্যমতো দামে।