বাংলার আলপনা – বয়ে চলেছে ধর্মনিরপেক্ষতার বার্তা
বাংলার আলপনা – হাতে আঁকা রঙিন এই শৈল্পিক সৃষ্টি জগৎবিখ্যাত তার উপাদানের জন্য। চালের গুঁড়ো ও ময়দা দিয়ে তৈরি এই চিত্রকলা বিভিন্ন শুভ অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আলপনা শব্দের উৎপত্তি সংস্কৃত শব্দ আলিম্পনা থেকে। এই শব্দের মানে প্লাস্টার করা। একসময় এই লোকশিল্প বাংলার বধুরা বাড়িতে করতেন। শুধু সজ্জা বাড়ানোই না এই আলপনাকে সুখ, শান্তিও প্রতীক হিসেবেই মানা হয়।
প্রতি পরিবারে মা থেকে মেয়েদের মধ্যে অতিবাহিত হয়ে আসছে এই শিল্প। শুধু মেয়েরাই নয়, আলপনা দেওয়ার শিল্প রপ্ত করেছে পুরুষরাও। শান্তিনিকেতনের এই চারুকলার ইতিহাস শতাব্দী প্রাচীন। বৈদিক নিয়ম মেনে ক্ষিতিমোহন সেন কবিগুরুর অনুপ্রেরণায় এই কলাকে শান্তিনিকেতনে নিয়ে আসেন। ক্ষিতিমোহন সেনের স্ত্রী কিরণবালা দেবী একজন দক্ষ আলপনা শিল্পী ছিলেন। এরপর রবীন্দ্রনাথ সুকুমারি দেবীকে আনেন পড়ুয়াদের এই শিল্প শেখাতে। সুকুমারি দেবীও ছিলেন এক দক্ষ আলপনা শিল্পী।
১৯০৯ সালে নন্দলাল বসু ও অসিত হালদারকে লেডি হেরিংহ্যাম ও ভগিনী নিবেদিতা অনুরোধ করেন অজন্তা চিত্রকলার ছবি আঁকতে। নন্দলাল বসুর জন্য অজন্তা গুহা খুলে দেওয়া হয়। ১৯১৯ সালে নন্দলাল বসুকে শান্তিনিকেতনের কলা ভবনের অধ্যক্ষ হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। তিনি সুকুমারি দেবীর আল্পনায় মুগ্ধ হয়ে আলপনা শিল্পকে আরও বিস্তৃত করার সিদ্ধান্ত নেন।
এই আলপনায় মূলত তুলে ধরা হয় প্রকৃতিকে, যেমন শাঁখ, সূর্য, তারা ইত্যাদি। নন্দলাল বসু এই আলপনায় রঙ ও শেডের মাত্রা যোগ করেন। ফলে আরও বাস্তব চিত্র ফুতে উঠতে শুরু করে আলপনার মাধ্যমে। আজকের যুগে তাই আলপনার নিজস্ব শৈল্পিক ভাষা স্বকীয়তায় সমুজ্জ্বল।