সীতাভোগ মিহিদানাতেও এখন নতুন গুড়ের স্বাদ
সেই আমল থেকে একই স্বাদ রেখে তৈরী হত। সেই ঐতিহ্যের স্বাদের পরিবর্তন করার কথাও কেউ কোনওদিন ভাবেনি। ২০২০ সালে এসে প্রথমবার বর্ধমানের বিখ্যাত সীতাভোগ-মিহিদানার স্বাদ বদলালো। চিনির মিষ্টতা আর মিলছে না বর্ধমানের সীতাভোগ-মিহিদানায়। খাতায়-কলমে ১১৫ বছর পরে এদিন থেকে সীতাভোগ-মিহিদানার সঙ্গে যুক্ত হল নলেন গুড়ের নামও। রসগোল্লার মতোই এবার বর্ধমানে মিলছে নলেন গুড়ের সীতাভোগ-মিহিদানা। নলেন গুড়ের মিষ্টতার সঙ্গে সুগন্ধও মিলেছে সীতাভোগ-মিহিদানায়।
১৯৭৬ সালের ১৫ নভেম্বর আকাশবাণীর কলকাতা “ক’-তে প্রচারিত হয়েছিল বর্ধমানে মিষ্টান্ন শিল্পী নগেন্দ্রনাথ নাগের ভাষণপত্র। সেখানে নগেন্দ্রনাথবাবু লিখেছেন, বড়লাট লর্ড কার্জন বর্ধমানের রাজার আমন্ত্রণে শহরে এসেছিলেন ১৯০৪ সালের ১৯ আগস্ট। তার আপ্যায়নে গোলাপবাগে ভোজসভা বসেছিল। সেখানে নগেন্দ্রনাথবাবুর বাবা ভৈরবচন্দ্র নাগের ওপর দায়িত্ব পড়েছিল মিষ্টান্ন প্রস্তুতের। ভৈরববাবু মিহি আকারে তৈরী দুই মিষ্টান্ন পরিবেশন করেছিলেন বড়লাটকে। যা খেয়ে লর্ড কার্জন ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। ভৈরবাবুকে শংসাপত্রও দিয়ে যান বড়লাট ।
তারপরে জওহরলাল নেহরু, লালবাহাদুর শাস্ত্রীও খেয়েছিলেন সেই মিষ্টান্ন । সীতাভোগ ও মিহিদানার স্বাদ সেই কার্জনের আমল থেকে একইরকম ছিল। চিনির মিষ্টতেই মিষ্টতা পেয়েছে ছানা, চালগুড়ি-সহ বিভিন্ন উপকরণে তৈরী ওই মিষ্টান্ন দু’টি। বর্ধমান শহরে ভৈরবচন্দ্র নাগের হাতে জন্ম হলেও গণেশ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার খ্যাতি অর্জন করে এই মিষ্টান্ন প্রস্তুত ও বিপণনে। জগৎজোড়া নাম হয়েছে তাদের। তারাই এবার স্বাদের বদল ঘটাল সীতাভোগ-মিহিদানার। শুক্রবার থেকে তিনদিন নলেনগুড়ের বাহার মিলবে তাদের তৈরি সীতাভোগ মিহিদানায়।
এই সময় নলেনগুড় পাওয়া যায়। তাই তাঁরা নলেন বাহার চালু করেছেন। দামটাও একটু বেশী করতে হয়েছে। চিনির ঘিয়ের সীতাভোগ প্রতি কেজি ২২০ টাকা। আর মিহিদানা ২০০ টাকা। নলেন গুড়ের সীতাভোগের দাম করা হয়েছে ২৬০ টাকা প্রতি কেজি। মিহিদানার দাম করা হয়েছে ২০ টাকা প্রতি কাপ নলেন গুড়টা যেহেতু গড়িয়ে যায় সেই কারণে কাপেই বিক্রী করছেন।
নদীয়া জেলা থেকে আনানো হয়েছে নলেন গুড়। বিশুদ্ধতা দেখে নেওয়া হয়েছে। বর্ধমানের সুনাম অক্ষুপ্ন রাখতে এটা করতেই হয়েছে । শহরবাসী ও বাইরে থেকে যাঁরা এখানে কিনতে আসেন তাঁদের পছন্দ হবে স্বাদ । গুণগত মানেরও মিলবে।