মাছ, মাংস কিনে ভরুন এ বার বায়ো-প্লাস্টিকে
আলু-বেগুন-উচ্ছে তো বটেই, এমনকী একশো গ্রাম কাঁচা লঙ্কাও আলাদা প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগে ভরে নিতে অভ্যস্ত বাঙালি। কিন্তু একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক সামগ্রী বন্ধের বিরুদ্ধে লাগাতার প্রচারের ফলে অনেকেই সেই অভ্যাস বদল করছেন। থলে হাতে বাজারে যাওয়ার নস্টালজিয়া, সাথে প্রকৃতি প্রেম – প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ দোকানদার দিতে চাইলেও তা না-নিয়ে বাঙালি এখন জিনিস ভরছেন বাজারের থলেতে।
কিন্তু মাছ-মাংস কেনার ক্ষেত্রে প্লাস্টিক ব্যবহারের অভ্যাস ছাড়তে নারাজ অনেকেই। কিন্তু ভেবে দেখুন, প্লাস্টিকের বাড়বাড়ন্ত তো বড়জোর তিন দশকের। তার আগে কি মানুষ মাছ-মাংস কিনে খেত না? ছোটবেলায় আমরা দেখেছি শালপাতায় মুড়ে খবরের কাগজে তা ব্যাগ চালান করে দিতেন দোকানি। মাছ কিনেও ভরা হত সেই ব্যাগে। বাজার করে আনার পর সেই ব্যাগ রোজ ধুয়ে রাখা হত।
সেই অভ্যাস কিন্তু আজও বজায় রেখেছে নোনাপুকুরের রয়্যাল মিট শপ। এখনও খাসির মাংস শালপাতায় মুড়েই ক্রেতাকে দেওয়া হয়। এবার প্লাস্টিক-বিরোধী অভিযানের অঙ্গ হিসেবে বাজারে পচনশীল বায়ো-প্লাস্টিকের ব্যাগ বাজারে আনছে ট্র্যাকমার্ক ইন্টারন্যাশনাল এবং ইন্টারন্যাশনাল এক্সপোর্ট হাউজ। বায়ো-প্লাস্টিক বলা হলেও আদতে তা প্লাস্টিক নয়।
সংস্থার আশিস ঘোষ বলেন, ‘ভুট্টার স্টার্চ থেকে তৈরি সম্পূর্ণ পচনশীল ওই ক্যারিব্যাগের খুচরো দাম জিএসটি-সহ খুচরো বাজারে দাঁড়াবে ৮০ পয়সা। যাতে ২ থেকে ৪ কেজি ওজন পর্যন্ত মাছ, মাংস অনায়াসে বহন করা যাবে।’ তিনি জানান, ফেব্রুয়ারি থেকে কলকাতার বাজারে ওই ব্যাগ পুরোমাত্রায় এসে যাবে। বায়ো-প্লাস্টিক নিয়ে গবেষণা চলছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজেও।
বায়ো-প্লাস্টিক ছাড়াও কচুরিপানার মতো কিছু বস্তু থেকে প্লাস্টিকের বিকল্প সামগ্রী তৈরির চেষ্টা চলছে। পরিবেশকর্মী তথা অর্থনীতিবিদ মণীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘খবরের কাগজ, ব্রাউন পেপার, পার্চমেন্ট পেপারকে ব্যবহার করে নতুন পদ্ধতিতে বেশি সব্জি ও অন্যান্য সামগ্রী বহনের উপযোগী ব্যাগ করা হচ্ছে। হাতলগুলি তৈরি হবে কচুরিপানা থেকে তৈরি দড়িতে। পার্চমেন্ট পেপার থেকে তৈরি ব্যাগ মাছ-মাংস ও জলীয় পদার্থ বহনের পক্ষে আদর্শ।’ বেশ কয়েক বার ব্যবহার করা গেলেও তার দাম কিছুটা বেশি।
আসুন না, পৃথিবীর স্বার্থে আমরা পুরোনো অভ্যাসে ফিরে যাই, ফিরিয়ে আনি শালপাতা, থলেকে।