সেরা মোয়া মানেই জয়নগর
শীতকালের মোয়া বলতেই আমরা বুঝি জয়নগরের মোয়া। দক্ষিণ চব্বিশ পরগণায় এই জয়নগর এলাকাতেই মোয়ার প্রচলন কোন এক অতীতে শুরু হয়েছিল যা এখন সর্বত্র ছড়িয়েছে। এই মোয়ার মূল উপাদান সুগন্ধী কনকচূড় ধানের খই যা শুধু এই জয়নগর এবং তার সংলগ্ন এলাকাতেই চাষ হয়। এর সঙ্গে আছে এই অঞ্চলের উৎকৃষ্ট খেজুর রস থেকে তৈরী নলেন গুড়। সেই থেকেই মোয়ার সঙ্গে জয়নগরের নামটা জড়িয়ে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে।
অবশ্য জয়নগরের ঠিক আগের স্টেশন বহড়ুর মোয়াও নিজ গুণে বিখ্যাত এবং বহড়ুর ব্যাবসায়ীরা নিজেদের মোয়াকে ‘বহড়ুর মোয়া’ নামেই বিক্রী করেন। কার মোয়া সেরা এই নিয়ে জয়নগর আর বহড়ুর মধ্যে একটা প্রতিযোগিতাও আছে।
২০১৪ সালে জয়নগরের মোয়া GI (Geographical Indication) Tag পায়। এর দরুণ এই এলাকার ভৌগলিক বিশেষত্ব কনকচূড় ধানের খই ব্যাবহার করে আর স্বীকৃত পদ্ধতি মেনে তৈরী করা মোয়াই জয়নগরের মোয়া বলে বিবেচিত হবে। যে সমস্ত নথিভুক্ত ব্যবসায়ীরা এই পদ্ধতি মেনে মোয়া তৈরী করবেন তাঁরা তাঁদের প্রোডাক্টে GI Logo ব্যাবহার করতে পারবেন। এর ফলে মোয়ার একটা বেসিক স্ট্যান্ডার্ড তৈরী হয়েছে যাতে ক্রেতা এবং ব্যাবসায়ী দুপক্ষরই সুবিধা।
শীতকাল এলেই সর্বত্র শুরু হয়ে যায় জয়নগরের মোয়ার বিক্রি। নামে জয়নগরের মোয়া হলেও আদতে জয়নগরে তৈরী মোয়া কমই আছে। এছাড়াও দাম এবং কোয়ালিটি বিভিন্ন রকম হয় আর এই ভিড়ের মধ্যে ভালো মোয়া খুঁজে পাওয়াও কঠিন ব্যাপার। খোদ জয়নগরে কষ্ট করে পৌঁছতে পারলে অবশ্যই উৎকৃষ্ট মোয়া লাভ হবে।
শীতের সিজনে জয়নগর আর বহড়ু এলাকাতেই ছোটবড় মিলিয়ে অন্তত গোটা দেড়শো মোয়ার দোকান বসে। স্থানীয় অনেকেই এই সিজনে মোয়া বানান, ঘরে ঘরে তৈরী হয়, সেগুলোও এই দোকানগুলির মাধ্যমে বাজারে আসে। তাদের সবগুলোই যে ভালো কোয়ালিটির তাও নয়। দাম সস্তা রাখার জন্য নিম্নমানের মোয়াও দেদার বিক্রী হয়। সেজন্য জয়নগর বহড়ুর সব মোয়াই যে সেরা মোয়া এমনটিও ব্যাপার নয়। সেজন্য উৎসাহী
মোয়াবিলাসীদের জন্য জয়নগরের তিনটি দোকানের সন্ধান দেওয়া হলঃ-
শ্রীকৃষ্ণ মিষ্টান্ন ভান্ডার (বুঁচকিবাবুর দোকান)
জয়নগরের অন্যতম পুরোনো দোকান। ১৯২৯ সালে দুই বন্ধু পুর্ণ চন্দ্র ঘোষ আর নিত্যগোপাল সরকার মিলে দোকান চালু করেন। এবছর সেরা কোয়ালিটির মোয়া বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা কিলো। ৫০০ গ্রামের বাক্সে মোয়া বিক্রি হয়। এর কমেও আছে, তবে অতদূর গেলে সবচেয়ে ভালো জিনিসটাই নেওয়া বাঞ্ছনীয়। নলেন গুড় এখানে ২০০ টাকা কেজি।
রামকৃষ্ণ মিষ্টান্ন ভান্ডার
শ্রীকৃষ্ণ মিষ্টান্ন ভান্ডার ছাড়িয়ে মূল রাস্তা ধরে লক্ষীকান্তপুরের দিকে একটু এগোলেই বাঁহাতে পড়বে রামকৃষ্ণ মিষ্টান্ন ভান্ডার। এখানের মোয়াও জয়নগরে বিখ্যাত। দোকানের মালিক অশোক কয়াল যিনি জয়নগর মোয়া নির্মাণকারী সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। এখানেও সেরা কোয়ালিটির কাঁচামাল থেকে বানানো মোয়া আর নলেন গুড় পাবেন।
মাকালী সুইটস (খোকনের মোয়া)
শেয়ালদা থেকে ট্রেনে এলে ১ নং প্ল্যাটফর্মে নেমে বেরোনর মুখেই বাঁহাতে প্রথম দোকান মাকালী সুইটস বা খোকনের মোয়া। বেশ সাজগোজ করা আলো ঝলমলে দোকান। রঙিন ফ্লেক্সে মালিক খোকনবাবুর সঙ্গে মিরের হাস্যমুখ, এছাড়া আরো দুএকজন টলিউডি সেলিব্রিটির ছবি। সব্বাই খোকনের মোয়া খেয়ে খুশি আর প্রশংসা করে গেছেন।
খোকনবাবুর দোকান বছর পঁচিশেকের পুরোনো। এটি মূল দোকান, এছাড়া স্টেশনের উল্টোপারে মেন রাস্তার উপর দত্ত কমপ্লেক্সে এনাদের আর একটি দোকান আছে। খোকনবাবুর দোকানের বৈশিষ্ট্য হল ক্ষীরের মোয়া। সাধারণ মোয়ার থেকে এর পাক একটু আলাদা। মোয়া গড়ার পর ওপরে খোয়া ক্ষীরের গুঁড়োর পুরু আস্তরণ দেওয়া হয়। এই মোয়ার পাক নরম, মিষ্টির পরিমাণ অত্যন্ত মার্জিত। ক্ষীরের মোয়ার দাম ৩৬০ টাকা কেজি। ৫০০ গ্রামের বাক্সে বিক্রী হয়। নলেন গুড় এখানে ৩০০ টাকা কেজি।