স্বাস্থ্য বিভাগে ফিরে যান

ছোটদের মাথাব্যথা – লক্ষণগুলি জানেন তো?

January 26, 2020 | 2 min read

গবেষণা বলছে প্রতি ১-২ সপ্তাহে প্রায় ৩০ শতাংশ শিশুই অন্তত একবার অল্প বা মাঝারি ধরনের মাথার যন্ত্রণায় কষ্ট পায়। বয়ঃসন্ধিকালে (১২-১৫ বছর ) প্রায় ৬০ শতাংশ স্কুল পড়ুয়ার ২-৩ মাসের মধ্যে একবার মাথাব্যথা হবেই, যা বেশ বাড়াবাড়ি পর্যায়ে যেতে পারে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। লক্ষণ থাকলে সাবধান হন।

ছোটদের মাথাব্যথা| ছবি সৌজন্যে: bbs

প্রাথমিক কারণ

টেনশনজনিত: অতিরিক্ত মানসিক চাপ নিলে মাথার দুধারে ব্যথা হতে শুরু করে। পারিপার্শ্বিক অবস্থার সঙ্গে শিশু মানিয়ে নিতে না পারলে এই অসুবিধা হয়। মাথা ভারী হতে থাকে, মাথায় কিছু একটা চাপানো রয়েছে মনে হয়। 

ঘুমের সমস্যা, স্কুলের কোনও সমস্যা, বাড়িতে কেউ বকাবকি করলে, বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে মনোমালিন্য কিংবা পরীক্ষার চাপ বা অতিরিক্ত পরিশ্রম হলে তার প্রভাবে এমন যন্ত্রণা শুরু হয়।

মাইগ্রেন: মাইগ্রেন মাথার একদিক থেকে শুরু হয়ে আস্তে আস্তে অন্য দিকে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ব্যথা কমে আবার শুরু হয়।এই যন্ত্রণায় মাথা দপদপ বা টিপটিপ করে। মাথাটা ভারী হয়ে থাকে, যেন মাথার উপর কিছু একটা চাপানো রয়েছে। গা-বমি ভাব বা বমি হতে পারে। যন্ত্রণা হলে সবেতেই বিরক্ত লাগে। 

তীব্র আলো জ্বাললে, জোরে কথা বা আওয়াজ হলে, টিভি-গান চললে অস্বস্তি হতে থাকে।। হালকা অন্ধকার ঘর ও শান্ত পরিবেশে চোখ বন্ধ করে রাখলে আরাম লাগে।কিছু ক্ষেত্রে রোগীর চোখের সামনে ঝকঝকে আলোর ফুলকি বা কালো কিছু আচমকাই ছুটে বেড়ায়। শরীরের একদিকে ঝিমঝিম বা অসাড় ভাব হতে পারে।

গৌণ কারণ

ভাইরাল সংক্রমণ থেকে সর্দি-কাশি-ভ্বর বা ডায়রিয়া হওয়ার আগে মাথাব্যথা হয়। নাকে সাইনুসাইটিসের জন্যও এমন হয়।ফ্যারিন্সাইটিস বা গলার সংক্রমণ, দাঁতের সমস্যা বা ইনফেকশন থেকেও মাথাব্যথা হয়।

কখন জটিলতা প্রকাশ পায়

সেরিব্রাল স্ট্রোক: বাচ্চাদেরও কিন্তু ব্রেন স্ট্রোক হতে পারে। মাথার যন্ত্রণার পিছনে মস্তিষ্কে টিউমার লুকিয়ে থাকতে পারে। হেমারেজ বা রক্তক্ষরণ- চোট বা অন্য কারণে মাথায় রক্তপাত হলেও এমন হয়।

ইন্ট্রাক্রেনিয়াল হাইপারটেনশন: এক্ষেত্রে অনেক সময় মস্তিষ্কের অভ্যন্তরীণ চাপ বেড়ে বাচ্চাদের মাথা যন্ত্রণা হয়। মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে কোনও রকম সংক্রমণ হলেও কিন্তু বাচ্চাদের মাথাব্যথা হতে পারে।

ব্যথার মাত্রা কেমন হলে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ বা নিউরোলোজিস্টের পরামর্শ জরুরী?

  • মাথার যন্ত্রণার সঙ্গে বারবার বমি। 
  • বাচ্চার চোখে দেখতে অসুবিধা। 
  • হঠাৎ করে শরীরের একদিক দুর্বল হয়ে যায়, যা অনেকদিন থাকে।  
  • ভারসাম্য বজায় রাখতে সমস্যা অর্থাৎ শিশু হাটাচলার সময় টাল খেলে।

সাডেন অ্যান্ড সিভিয়ার হেডেক অর্থাৎ আগে হয়নি এমন তীব্র ব্যথা শুরু হয়। মাথার যন্ত্রণার তীব্রতায় ঘুম ভেঙে যায় ও বমি শুরু হলে। যদি বাচ্চার মাথার যন্ত্রণার সঙ্গে খিঁচুনি হয় অথবা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে  এবং এক জিনিসকে দুটো দেখলে বুঝতে হবে সমস্যা গুরুতর। | মাথায় ব্যথা ও মাথার আকার হঠাৎ করে বড় হয়ে গেলে সাবধান।

চিকিৎসা

যে কোনও মাথাব্যথাই নির্দিষ্ট চিকিৎসার মাধ্যমে নির্মূল করা সম্ভব। আর মাইগ্রেনের ক্ষেত্রে সঠিক জীবনযাপনই নিয়ন্ত্রণের আসল উপায়। তবে যন্ত্রণা যে কারণেই হোক না, বথার ওষুধ মাসে ৪-৫ বারের বেশি কখনওই খাওয়া চলবে না। সারতে না চাইলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। 

টেনশনজনিত যন্ত্রণার কারণটি জীবন থেকে বাদ দিতে হবে ও প্রয়োজনে সাইকোথেরাপিস্টের কাছে শিশুকে নিয়ে যেতে হবে। টিউমার, ইন্ট্রাকেনিয়াল হাইপার টেনশন বা মস্তিষ্কে রক্তপাতজনিত সমস্যায় অপারেশন জরুরি।

কি করণীয়

  • শিশুর ডিহাইড্রেশন মাথা যন্ত্রণার মূল কারণ। তাই শিশুকে জলীয় খাবার যেমন জল, ঝোল, ডাল, স্যুপ, ফ্রুট জুস, ইত্যাদি বেশি খাওয়ান। 
  • চকোলেট, আইস ক্রিম, কোল্ড ড্রিংক, ফাস্ট ফুড, কৃত্রিম রসায়ন বা রং মেশানো প্রসেসড ফুড়, কফি, চাউমিন, মোমো ও টক জাতীয় খাদ্য বাদ রাখুন। 
  • রোজ নিদিষ্ট সময়ে শিশুকে ঘুমোতে হবে ও উঠতে হবে। 
  • বাচ্চার কোনও কারণে মানসিক চাপ হচ্ছে কিনা সেদিকে নজর রাখা জরুরি। 
  • মাথাব্যথা অনুভব করলে চাপ না দিয়ে কিছু ঘণ্টা বিশ্রাম জরুরি।

তথ্যসূত্র: সংবাদ প্রতিদিন

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Migraine, #Cerebral Stroke, #Hypertension, #Child Health, #Child Headache

আরো দেখুন