বিনোদন বিভাগে ফিরে যান

দশ বছর আগে ভাবিনি ‘পরিচয়’ কোনওদিন রিলিজ করব, এখন পরিস্থিতি আলাদা: অনুপম রায়

March 5, 2020 | 3 min read

আগামী ৭ই মার্চ আয়োজিত হতে চলেছে ‘কোরাস ২০২০’। আয়োজক – সিটিজেন স্পিক ইন্ডিয়া। বিভিন্ন অভিনেতা, সংগীতশিল্পী, কবি এবং নৃত্যশিল্পীরা তাদের শিল্পের মাধ্যমে সমাজের বর্তমান অবস্থার বিষয়ে নিজেদের মনের কথা বলবেন। নজরুল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে এই অনুষ্ঠান।

তার আগে এই অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক অনুপম রায় মুখোমুখি হয়েছিলেন টিম দৃষ্টিভঙ্গির। রইলো তাঁর একান্ত সাক্ষাৎকার।

প্রঃ আগামী ৭ই মার্চ আয়োজিত হতে চলেছে কোরাস ২০২০। এই অনুষ্ঠানের লক্ষ্য কি?

অনুপম: আমরা সমাজে যে অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছি এখন, চারিদিকে যা ঘটনা দেখছি, যা ‘হেট্ স্পিচ’ শুনছি, তাতে মনে কোথাও একটা ভয় লাগে। আমরা যারা সমমনস্ক, একটা চিন্তাধারায় বিশ্বাস করি, আমরা যে ভাবে ভারতবর্ষকে দেখে বড় হয়েছি, সেই ভারতবর্ষের স্বপ্ন দেখি, তাঁরা একত্রিত হয়ে শিল্পের মাধ্যমে নিজেদের বক্তব্যটা রাখছি। ভারতবর্ষের যে ‘ডেফিনিশন ‘ইউনিটি ইন ডাইভার্সিটি’ সেইটাকে সম্মান জানিয়ে আমরা কেউ গান গেয়ে, কেউ কবিতার মাধ্যমে নিজেদের বক্তব্যটাকে তুলে ধরছি।

প্রঃ কয়েকদিন আগেই আপনার নতুন গান ‘পরিচয়’ প্রকাশ পেয়েছে। কেমন রেস্পন্স পেলেন?

অনুপম: রেসপন্স যথেষ্ট ভালো। আমরা যদি ইউটিউবে বা অন্যান্য মাধ্যমের কথা বিচার করি, তাহলে দেখব যে অনেক মানুষ ভিডিওটি দেখেছেন। মূলত ৯৭ শতাংশ মানুষের পজিটিভ রেস্পন্স। অবশ্যই, কিছু মানুষের তো বক্তব্য থাকবেই এই গানটার বিরুদ্ধে কারণ ফান্ডামেন্টালিস্টদের তো অসুবিধা হবেই যদি বলা হয় মানবতাই শ্রেষ্ঠ ধর্ম। সেটা অনেক মানুষ মানতে চায় না। কিন্তু ৯৭ শতাংশ মানুষের ভালো লেগেছে।

প্রঃ আপনাকে আমরা স্মিতভাষী বলেই জানি। কিন্তু এখন আপনিও প্রতিবাদী কণ্ঠ। কিভাবে এই ট্রান্সফরমেশন হল?

অনুপম: বেশ ভাল প্রশ্ন। আমার এই পরিচয় গানটাই আজ থেকে প্রায় ১২ বছর আগে লেখা। আমি কোনওদিনই ভাবিনি এই গানটা রিলিজ করব কারণ ধর্ম নিয়ে গান, ধর্মকে প্রাধান্য না দিয়ে গান – এটার কোনও প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। অন্তত ২০১০-১১ সেই সময় করিনি।

কিন্তু, দিনদিন এমন একটা পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে দেশটা যে এমন কিছু হিংস্র ঘটনা আমরা দেখছি, চারিদিকে এত ফেক নিউজ আমরা দেখছি, এমন মিথ্যাচার আমরা শুনছি, প্রভোকেটিভ বক্তব্য আমরা শুনছি, সেগুলো শুনে আমার একটু শঙ্কা জাগছে। একটু ভয় লাগছে। তখন মনে হচ্ছে আমি যদি এই সময় এই কথাটা না বলি, তাহলে হয়তো কিছু একটা করা হচ্ছে না।

তাই জন্যই এই ধরণের গান, প্রতিবাদী বলব না কিন্তু বলিষ্ঠভাবে নিজের বক্তব্যটা তুলে ধরতে হচ্ছে।

প্রঃ আপনার কি মনে হয় বাঙালির প্রতিবাদস্পৃহতা কিছুটা হলেও কমে আসছে?

অনুপম: তা হয়তো না। প্রতিবাদ তো লেগেই আছে আমাদের নানা ইউনিভার্সিটিতে। ছাত্রদের প্রতিবাদ-বিক্ষোভ তো থাকেই, রাস্তাঘাটেও প্রতিবাদী মনোভাব আছে বাঙালিদের। যেটা হয় আর কি যে সকলে কাজে ব্যস্ত থাকে, যে কারণে নিয়মিত প্রতিবাদ করাটা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। মানুষ এখন ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন, কাজের মধ্যে জড়িয়ে যাচ্ছে। সেখান থেকে হয়তো প্রতিবাদ করাটা মুশকিল হয়। কিন্তু প্রতিবাদস্পৃহতা বাঙালির মধ্যে এখনও আছে।

প্রঃ দেশের বর্তমান যা পরিস্থিতি তাতে শিল্প – গান, কবিতা ইত্যাদি – সৃষ্টি করাটা কতটা কঠিন হয়ে উঠছে?

অনুপম: সত্যি কথা বলতে, আমরা শিল্পের জন্য শিল্প করতে চাই। এমন কিছু সৃষ্টি করতে চাই যেটা প্রগতির কথা বলে, অন্যরকম একটা শিল্পের কথা বলে। কিন্তু যদি সারাক্ষণ অশান্তি লেগে থাকে, যদি দেখি মানুষ মারা যাচ্ছে, অকারণ মিথ্যাচার হচ্ছে, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে মূল যে শিল্পের জায়গাটা সেখান থেকে অন্য ধরণের শিল্পের দিকে যেতে হয়।

যেমন, এই যে আমায় ‘পরিচয়’ গানটা করতে হল, সেটা অন্য সময় হলে কি আমি করতাম? করতে হয়েছে দেশের এই পরিস্থিতির জন্যই। এটা নতুন কোনও কথা নয়। যুগ যুগ ধরে মানুষ বলে এসেছেন। লালন বলেছেন, রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, সেটাকে আবার করে বলতে হচ্ছে। আমি পুরোনো কথাই আবার বলছি। আমাদের কথা ছিল আরও নতুন কথা বলার, কথা ছিল বিজ্ঞানের কথা বলার, ভবিষ্যতের কথা বলার। সেটা কি বলতে পারছি? সেটা যদি না পারি, তবে কোথাও একটা আমাদের এগিয়ে যাওয়াটা থমকে যাচ্ছে, পেছনে টানছে।

পশ্চাদভাবনা না করে এগিয়ে যাওয়াটাই আমাদের কাজ। কিন্তু সেটা না করে অন্য কাজও আমাদের করতে হচ্ছে।

প্রঃ আপনার কি মনে হয়, যে পরিবেশে আমরা বাস করছি সেখানে সত্যিই কলম তরবারির চেয়ে বেশি ক্ষুরধার?

অনুপম: এটা কিন্তু সবসময় সত্যি। কলম তরবারির চেয়ে বেশি ক্ষুরধার ছিল এবং আগামীতেও থাকবে। জীবন চলে গেলে তখন আর কলম দিয়ে কিছু করা যাবে না কিন্তু মানুষের মনের চেতনা কিন্তু যুদ্ধ করে হয় না। সেটা ভালোবাসার মাধ্যমেই হয়। সেই ভালোবাসা আসে শিল্পের মাধ্যমে, লেখার মাধ্যমে, ভাবনার আদান প্রদানের মাধ্যমে। সৃষ্টির জায়গা থেকেই আসে। আর সৃষ্টি করতে পারে কলম।

সুতরাং কলমের সেই জোরটা থাকে মানুষের মধ্যে এমন কিছু তৈরি করা যেটা মানুষের মধ্যে বন্ধুত্বটা রাখবে, ভাতৃত্বটা রাখবে। এবং সেটার জোর অনেক বেশি বলেই মনে করি। তরবারি কাটতে পারে, জুড়তে পারে না। কলমের সেই ক্ষমতাটা আছে এবং থাকবে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Chorus 2020, #Anupam Roy

আরো দেখুন