রাজকীয় উইকেন্ড কাটাতে চলে যান ইটাচুনাতে
হুগলির পাণ্ডুয়ার ইটাচুনা রাজবাড়ির ডাক নাম ‘বর্গি ডাঙা’। তবে দু’দিনের ছুটি কাটাতে এখানে এলে মোটেই মনে হবে না বর্গিদের দেশে এসেছেন। আদর-যত্নে রাজকীয় আরামে নিজেকে প্যাম্পার করার জন্য আদর্শ এই রাজবাড়ি।
গেট ছাড়িয়ে ভিতরে পা দিলে কেমন যেন গা ছমছম করে ওঠে। লোকলস্কর পাইক বরকন্দাজ— কালের নিয়মে সেই অতীত জৌলুসের কিছুই আর অবশিষ্ট নেই এখন। তাও পুরনো দেওয়ালের প্রাচীন গন্ধ, উঁচু কড়িবরগার ছাদ, আল্পনা দেওয়া বিরাট নাটমন্দির, প্রাঙ্গন জুড়ে বিরাট বিরাট বাতিস্তম্ভ, প্রকাণ্ড ঝাড়বাতি দিয়ে সাজান ইতিহাসের গন্ধমাখা সুবিশাল বৈঠকখানা মুহূর্তে অন্য এক জগতের দরজা খুলে দেয় চোখের সামনে।
রাজবাড়িতে পৌঁছনোর পর ব্যাকপ্যাক রেখেই ‘এক্সপ্লোর’ করতে বেরিয়ে পড়ুন ক্যামেরা হাতে। ঠাকুরবাড়ি-অন্দরমহল-ছাদ-বাগান-খামারবাড়ি-পুকুর-শিবমন্দির— সব মিলিয়ে গোটা রাজবাড়িটা ঘুরে দেখতেই অনেকটা সময় লাগবে। পাশের গ্রামেও হেঁটে আসতে পারেন। বাড়ির মধ্যেই হুটোপাটির ব্যবস্থা অঢেল। পুকুরে মাছ ধরা, এক্কাদোক্কা খেলা, ছাদে ঘুড়ি ওড়ানো, বারবিকিউ, বনফায়ার— যা প্রাণ চায় করুন। বডি আর ফুট মাসাজের ব্যবস্থাও রয়েছে।
রাজবাড়ির পক্ষ থেকে নানা রকম প্যাকেজ ট্যুরের ব্যবস্থা আছে। কাছেপিঠে ঘুরে আসুন জটেশ্বর শিবমন্দির, দেবীপুর, শরত্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বাসস্থান দেবানন্দপুর, ইমামবড়া, ব্যান্ডেল চার্চ, হংসেশ্বরী মন্দির ইত্যাদি জায়গায়। একটু সময় হাতে নিয়ে গেলে গুসকরা-দরিয়াপুরে ডোকরার কাজ কিংবা নতুনগ্রামের কাঠের পুতুল তৈরি দেখে আসতে পারেন।
এখানে খাওয়াদাওয়ার আয়োজনও রাজকীয়। কাঁসার থালাবাটিতে পাত পেড়ে খেতে বসার মজাই আলাদা। ২৫০-৩০০ টাকার মধ্যে নন ভেজ মিল পেয়ে যাবেন।
রাজবাড়ির ইতিহাস
বর্গি আক্রমণের পর মরাঠা সৈন্যদের একটা অংশ বাংলায় থেকে গিয়েছিল। তাদেরই বংশধরদের একজন রাজা সাফল্য নারায়ণ কুণ্ডু। কথিত, মরাঠি ‘কুন্দন’দের থেকেই এসেছিলেন ‘কুণ্ডু’রা। এই কুণ্ডু পরিবারের বংশধরেরাই ১৭৬৬ সালে তৈরি করেছিলেন ইটাচুনা রাজবাড়ি। একটা সময় বহু বছর ধরে পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে ছিল বিশাল জায়গা নিয়ে তৈরি এই প্রাসাদ।
রাজপরিবারের বর্তমান সদস্যেরা সম্প্রতি ঢেলে সাজিয়েছেন রাজবাড়ি। হোম স্টে’র খাসা বন্দোবস্তও করে ফেলেছেন। এখন পর্যটকদের দেদার আনাগোনা ছাড়াও ছবির শ্যুটিংয়ের ‘হটস্পট’ হয়ে উঠেছে ইটাচুনা রাজবাড়ি। রণবীর সিংহ-সোনাক্ষী সিংহ অভিনীত ‘লুটেরা’র বেশ কিছু অংশের শ্যুটিং হয়েছিল এই বাড়িতেই। এছাড়া অনেক বাংলা ছবির শ্যুটিংও হয়েছে এখানে।
কীভাবে যাবেন
কলকাতা থেকে গাড়ি নিয়ে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে বসিপুর, হালুসাই হয়ে খন্যান স্টেশনের পথ ধরতে হবে। হালুসাই থেকে মিনিট দশেক যাওয়ার পরই পড়বে রাজবাড়ি। ট্রেনে আসতে চাইলে বর্ধমান মেন লাইনের যে কোনও ট্রেন অথবা হাওড়া থেকে পাণ্ডুয়া লোকালেও আসা যায়। খন্যান স্টেশনে নেমে অটো বা রিকশা ধরে মিনিট দশেকের পথ রাজবাড়ি।
কোথায় থাকবেন
থাকার ব্যবস্থা রাজবাড়ির অন্দরমহলেই। বিলাসবহুল ঘর থেকে মাটির কুঁড়েঘর— সব রকমের ব্যবস্থাই রয়েছে। সবচেয়ে দামি ঘর বিলাস মঞ্জরীতে যেমন থাকতে পারবেন পাঁচজন। শোয়ার ব্যবস্থা বিরাট পালঙ্কে! পাশাপাশি খড়ের ছাউনি দেওয়া কুটিরেও রাত কাটাতে পারেন ইচ্ছে হলে। ঘরের নামগুলো ভারী সুন্দর। গিন্নিমা, ছোট বৌদি, কনকলতা, ঝুমকোলতা ইত্যাদি। ঘর ভাড়া ১৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৮৪০০ পর্যন্ত। এসি, নন এসি— দু’রকমের ঘরই পাবেন। তবে সপ্তাহান্তে ঘর ভাড়া বেশি। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এসি ঘর পাওয়া যাবে না। আগে থেকে ঘর বুক করে রাখার জন্য ইটাচুনা রাজবাড়ির অফিশিয়াল ওয়েবসাইট দেখতে পারেন।
ফোন- ৯৮৩১০৪৯৮১৬।