ভেতরের ঘুণ নিজেই সারাবে ‘আধুনিক’ কংক্রিট
দেওয়ালের প্লাস্টারে ফাটলের দাগ, বিচ্ছিরি দেখতে লাগছে। রোজই ভাবছেন মিস্ত্রী ডাকার কথা আর রোজই ভুলে যাচ্ছেন? ভাবুন যদি এইসব দেওয়াল-ছাদের ফাটল সব সেরে যেতো নিজে নিজেই?
সাধারণত বিশাল কাঠামোর কংক্রিটে ফাটল ধরা প্রায় অবশ্যম্ভাবী৷ সব ধরনের ফাটল অবশ্য কাঠামোর ক্ষতি করে না, কিন্তু ফাটল দিয়ে জল ঢুকতে শুরু করলেই সমস্যার শুরু৷ ফাটল দিয়ে জল রিইনফোর্সড কংক্রিটের ভেতরে থাকা লোহার রডে এসে পৌঁছলে রডে মরচে ধরতে শুরু করে, যার ফলে পুরো কাঠামোটাই আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে পড়ে৷
এইজন্যেই বিশেষজ্ঞরা ফাটলকে কংক্রিটের ক্যান্সারও বলে থাকেন৷ আর এই ক্যান্সারের মোকাবিলায় নেদারল্যান্ডের ডেলফট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা অস্ত্র করেছেন এক ধরনের ব্যাকটিরিয়াকে৷
বালি-সিমেন্ট-পাথরের সাথে ‘ব্যাসিলাস সিউডোফামার্স’ নামের এই ব্যাকটিরিয়া আর ‘ক্যালসিয়াম ল্যাক্টেট’ নামের এক যৌগ মিশিয়ে ডাচ বিজ্ঞানী হেনড্রিক (হেঙ্ক) ইয়ঙ্কার্স ও তাঁর সহযোগীরা বানিয়ে ফেলেছেন এমন এক কংক্রিট, যাতে ফাটল ধরলেও পরে তা নিজে থেকে বুজে যায়৷
কারণ, এই কংক্রিটের ফাটলের ভেতরে জল ঢুকলে কংক্রিটের মধ্যে ‘ঘুমিয়ে থাকা’ ব্যাকটিরিয়ারা জেগে ওঠে, আর ক্যালসিয়াম ল্যাক্টেট-কে খাবার হিসেবে ব্যবহার করে চুনাপাথর (ক্যালসিয়াম কার্বোনেট) তৈরি করতে থাকে৷ ফলে, ফাটল দেখা দেওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই দেখবেন সেই ফাটল এইভাবে তৈরি হওয়া ক্যালসিয়াম কার্বোনেট দিয়ে আবার জুড়ে গিয়েছে৷
ইতিমধ্যে এই নতুন ধরনের কংক্রিট ব্যবহার করে নেদারল্যান্ডের একটি লেকের ধারে লাইফগার্ডদের থাকার জায়গা বানানোও হয়েছে, আর সেখানেও এই কংক্রিট প্রত্যাশামতো কাজ করছে৷ এই কংক্রিটের আবিষ্কার ইয়ঙ্কার্সকে ইউরোপের সেরা আবিষ্কারকের সম্মানও এনে দিয়েছে৷