হাসপাতাল থেকে রোগী প্রত্যাখ্যানে বিরাম নেই
বাইক দুর্ঘটনার পর যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন তপসিয়ার মাসুদ আহমেদ। পেটের যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন নারকেলডাঙার গৌরী বিবিও। কাউকেই ভর্তি নেয়নি এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। দু’জনকেই সোমবার ফিরিয়ে দেওয়া হয় ইমার্জেন্সি থেকে।
কোনও মতে অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করে লিলুয়ার রামকৃষ্ণ গুপ্তাকে সোমবার এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন তাঁর স্ত্রী-সন্তানেরা। কিডনির সমস্যায় ভুগছেন রামকৃষ্ণ। কিডনির একাংশ থেকে পুঁজ বের করার জন্য পেটে ফুটো করা রয়েছে (ড্রেন) তাঁর। গত কয়েক দিনে সেই চ্যানেলের চার পাশ পেকে উঠেছে ওই প্রৌঢ়ের। যন্ত্রণায় কাতর রামকৃষ্ণকে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হলেও প্রাথমিক চিকিৎসার পরেই ছেড়ে দেওয়া হয়।
অন্যদিকে এনআরএসের পাঁচ চিকিৎসক গত শনিবার চিকিৎসা প্রত্যাখ্যান করেন হাওড়ার প্রসূতির। করোনার ‘অজুহাতে’ গুরুতর অসুস্থদেরও ফেরানোর যে অভিযোগ সে দিন সন্তান হারিয়ে করেছিলেন ওই তরুণী, তা যে মনগড়া নয়, তার প্রমাণ মিলছে প্রতিদিন শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে। ওই প্রসূতিকে শনিবার ফেরানোর অভিযোগে অবশ্য শাস্তির মুখে পড়তে চলেছেন এনআরএসের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগের ওই পাঁচ চিকিৎসক।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, অভিযুক্ত পাঁচ চিকিৎসকের নাম পাঠানো হয়েছে স্বাস্থ্যভবনে। যদিও এ নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি কোনও হাসপাতাল কর্তাই। তবে এর পরেও সেই এনআরএস-সহ সরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে ছবিটা বদলাচ্ছে না।
প্রসব-যন্ত্রণা ও রক্তপাত নিয়ে শনিবার বিকেলে হাওড়ার বাকসাড়া রোডের ওই প্রসূতি এসেছিলেন এনআরএসে। তিনি অভিযোগ করেন, করোনার ভয়ে চিকিৎসা শুরু করা দূরের কথা, হাসপাতালে ভর্তি করতেই রাজি হননি কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। পরে বাড়ি ফিরে মৃত সন্তান প্রসব করেন ওই তরুণী। শনিবারই ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে এনআরএসের অধ্যক্ষ শৈবাল মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘যা ঘটেছে সেটা দণ্ডনীয় অপরাধ। সোমবারই বিস্তারিত খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
হাসপাতাল সূত্রে খবর, সোমবার সকালে শনিবারের ঘটনার তদন্ত করে স্বাস্থ্যভবনে অভিযুক্ত পাঁচ চিকিৎসকের নামে বিস্তারিত রিপোর্ট পাঠিয়েছেন অধ্যক্ষ। প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগে কর্মরত জুনিয়র ডাক্তারদের অবশ্য দাবি, করোনা-উপদ্রুত এলাকা থেকে আসায় ওই প্রসূতিকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি এবং করোনা সংক্রমণের আশঙ্কার কথা বিস্তারিত বোঝানো হয়েছিল। তার পর ওই প্রসূতি নিজেই রাজি হননি ভর্তি হতে।