এক টাকার কয়েনে মিলছে ব্যাগভর্তি বাজার
করোনাভাইরাসের থাবায় ঘরবন্দি দিনমজুর থেকে অন্য পেশার অসহায় পরিবারকে এক টাকার ছোট কয়েনের বিনিময়ে দেওয়া হচ্ছে ব্যাগভর্তি বাজার ও খাদ্যসামগ্রী। পাণ্ডুয়ার বৈঁচিগ্রামের গুটি কয়েক তরুণ বছরখানেক আগে তৈরি করেন আটচালা গ্রুপ। বর্তমান পরিস্থিতিতে কাজ হারানোদের কথা ভেবে নিজেরা উৎসাহিত হয়ে সামর্থ্য অনুযায়ী অর্থ জমিয়ে এলাকার মানুষের কাছে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেন।
পরে এক টাকার ছোট কয়েনের বিনিময়ে গ্রামবাসী ও ইটভাটার শ্রমিকদের খাদ্যসামগ্রী দেওয়ার পরিকল্পনা নেন তাঁরা। কিন্তু সীমিত সামর্থ্যের কথা চিন্তা করে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আবেদন করেন সহযোগিতার। পরিচিত, বন্ধু ও গ্রামের লোকজন এগিয়েও আসেন। সকলের সহযোগিতায় শুরু হয় এক টাকার বাজার। আটচালা গ্রুপের সদস্যরা জানান, সপ্তাহে তিন দিন মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনিবার পাণ্ডুয়ার বৈঁচিগ্রামের বীণাপাণি স্কুলমাঠে বসছে এক টাকার বাজার।

কী কী মিলবে ১ টাকায়? ২ কেজি চাল, ৫০০ গ্রাম আলু, পটল ৩০০ গ্রাম, বরবটি ৩০০ গ্রাম, ঢেঁড়স ৩০০ গ্রাম, কুমড়ো ৫০০ গ্রাম। তার সঙ্গে ২৫০ গ্রাম মুড়ি, ২৫০ গ্রাম চিনি, ১০ টাকার সয়াবিন, ১০ টাকার বিস্কুট, সর্ষের তেলের পাউচ, মুসুর ডাল ২৫০ গ্রাম, লবণ ৫০০ গ্রাম, ৫ টাকার চাপাতার পাউচ, হলুদ, লঙ্কা ও জিরের ৫ টাকার পাউচ, ডিম দু’টো।
সপ্তাহে তিন দিন বাজার বসবে। গড়ে ৪০টি পরিবারকে এই সাহায্য দেওয়া হবে। তবে পরিবার পিছু এক জনকে এক বারই দেওয়া হবে এ সব সামগ্রী। বাজার নিতে আসা লোকজনকে জীবাণুনাশক দিয়ে হাত ধুইয়ে দেন সংস্থার কর্মীরা। যে বা যাঁরা মাস্ক পরে আসেননি, তাঁদের মাস্কও দেওয়া হয়।
অভিনব এই ভাবনা নিয়ে এগিয়ে এসেছেন বাগনান থানার হরিহরপুর গ্রামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘কোবরা গ্যাং’-এর সদস্যরাও। বাজারে প্রবেশের আগে ক্রেতাদের হাতে স্যানিটাইজার দিচ্ছেন তাঁরা। বাজারের এক ধারে লালপেড়ে সাদা শাড়ি পড়ে বসে এক তরুণী মা অন্নপূর্ণার সাজে। হাতে তাঁর বোকাভাঁড়। সেই ভাঁড়ে এক টাকা করে ফেলে বাজারে প্রবেশ করছেন ক্রেতারা। এক টাকা দিয়েই মিলছে চাল, আলু, ডাল, পটল, ঝিঙে, টোম্যাটো, তেল, বিস্কুট ইত্যাদি।
গ্রামের আটচালা সংলগ্ন মাঠে আয়োজিত এই হাটে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আগত প্রতিটি ক্রেতার হাত জীবাণুমুক্ত করে প্রবেশের অনুমতি মিলছিল। ১৮ রকম নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের পসরা নিয়ে বসেছিল হাট। সংগঠনের পক্ষ থেকে জানা গিয়েছে, মুগবেনাপুর অঞ্চলের শ’খানেক প্রান্তিক পরিবারকে এই হাটের মাধ্যমে এক টাকার বিনিময়ে খাদ্যসামগ্রী ‘বিক্রি’ করা হয়েছে।