বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

নিজামের আমলেও লকডাউন হত, মিলত সবেতন ছুটি

May 5, 2020 | 2 min read

লকডাউন – এই ইংরেজি শব্দটির তাৎপর্য নতুন করে বলার প্রয়োজন পড়ে না। বরং শব্দটির প্রভাব কতটা ভয়াবহ, তা ভারত সহ সমগ্র বিশ্ববাসী ভালোই অনুধাবন করতে পারছেন। এই একটি শব্দের জেরে আগামী দিনের বিশ্ব নতুনভাবে জেগে উঠবে, নাকি অন্ধকারের অতলে তলিয়ে যাবে, তা নিয়ে নিরন্তর চর্চা চলছে। 

ইতিহাস বলছে, অতীতেও একাধিক ভয়াবহ মহামারীর প্রকোপ দেখা গিয়েছে সারা বিশ্বে। কেড়ে নিয়েছে হাজার হাজার প্রাণ। নিঃস্ব করে দিয়েছে একাধিক জাতিকে। সেইসব মহামারী রুখতে তখনও কী লকডাউন ছিল? ঐতিহাসিকরা বলছেন, ছিল। তবে লকডাউন শব্দটি তখন হয়তো ছিল না। কিন্তু মহামারী থেকে বাঁচতে ‘ব্রেক দি চেন’ ঊনবিংশ বা বিংশ শতাব্দীতেও ছিল।

ইতিহাস অনুযায়ী, ঊনবিংশ বা বিংশ শতাব্দীর বিভিন্ন সময়ে ব্রিটিশ শাসিত ভারতে একাধিকবার কলেরা বা প্লেগের মতো মহামারী হানা দিয়েছে। যার জেরে প্রাণ হারিয়েছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। উজাড় হয়ে গিয়েছে বহু গ্রাম-শহর। তৎকালীন শাসক ব্রিটিশরা মহামারী রুখতে ‘ছুটি’ ঘোষণা করতেন। সরকারি কর্মচারীদের সেই সবেতন ছুটিতে মহামারীর প্রকোপ রুখে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। ছুটি মানে বাইরে বেড়ানো নয়। কঠোরভাবে ঘরে থাকার নিয়ম ছিল। 

নিজামের আমলেও লকডাউন হত, মিলত সবেতন ছুটি

কলেরা এবং প্লেগের মোকাবিলায় ব্রিটিশদের মতো হায়দরাবাদের নিজামরাও আইসোলেশন হাসপাতাল, অতিপীড়িত এলাকা নিয়ন্ত্রণ, পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যা সমাধান বা বাইরে বেরনোর জন্য বিশেষ পাসের ব্যবস্থা করতেন। যারই আধুনিকরূপ বর্তমানের ‘লকডাউন’। নয়াদিল্লির জাতীয় সংগ্রহালয়ের ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার সরকারি রেকর্ড এবং ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার মেডিক্যাল ইতিহাস জানাচ্ছে, কলেরা বা প্লেগে সংক্রমিত রোগীকে বহন করার জন্য ট্রেন বা বিশেষ শকটের ব্যবস্থা করা হতো। 

তখন অবশ্য সারা দেশজুড়ে লকডাউন হতো না। কিন্তু, অহেতুক ভ্রমণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল। মানুষের গতিবিধির উপর নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি জাহাজ চলাচলও বন্ধ রাখত ব্রিটিশরা। বিশেষজ্ঞদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মহামারীতে অতিপীড়িত অঞ্চল চিহ্নিত করে তা চারদিক থেকে ঘিরে দেওয়া হতো। পুলিস এবং সেনার আধিকারিকরা সেই অঞ্চল বা শহরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকতেন। বাইরে থেকে কোনও ব্যক্তিকে সেখানে ঢুকতে দেওয়া হতো না। শুধুমাত্র বিশেষ অনুমোদনের ভিত্তিতেই প্রবেশের অনুমতি মিলত। তবে শর্ত থাকত, সেই ব্যক্তিকে স্যানিটাইজেশন মানতে হবে এবং একদিন অন্তর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে।

১৮৯৭ সালের সিমলা রেকর্ডের ১২০ নম্বর ফাইল অনুযায়ী, ১৮৯৭ সালের ২০ মার্চ এলাহাবাদে একটি আলোচনাসভায় ব্রিটিশ শাসকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, মহামারী রুখতে কর্মীদের একমাসের ছুটি (পড়ুন লকডাউন) দেওয়া হবে। পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে রোগ ছড়িয়ে পড়া রুখতে তাঁদের ছোট ছোট দলে ভাগ করে বাড়ি থেকে তিন কিলোমিটার দূরে রাখার বন্দোবস্ত করা হতো। সেখানে তাঁদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা হতো।

গবেষকদের বক্তব্য, সেই যুগে লকডাউন করে ব্রিটিশ শাসকরা নিজেদের রক্ষা করলেও ভারতবাসীর প্রতি তাদের কোনও সহমর্মিতা ছিল না। তার জলজ্যান্ত উদাহরণ ছিল ১৯১৮ সালের মহামারী। রেকর্ড বলছে, সেই বছর সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারীতে কয়েকলক্ষ মানুষ মারা গিয়েছিলেন। অনেক ঐতিহাসিক সেই মহামারী সম্পর্কে লিখেছেন, ‘শবদেহ তুলে নিয়ে যাওয়ার লোক পাওয়া যেত না। শিয়াল কুকুরদের মহাভোজ চলত।’

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#paid holidays, #Nizam, #Lockdown

আরো দেখুন