সঙ্কটে বাড়ছে মানসিক অস্থিরতা, মহানগরেও
করোনার কারণে ধাপে ধাপে মেয়াদ বেড়েছে লকডাউনের। আর তার সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে মানসিক অস্থিরতাও বাড়ছে দেশবাসীর। দেশের ১৬টি শহরে সমীক্ষায় প্রকাশ, প্রথম দফার লকডাউনের থেকে তৃতীয় দফায় মানসিক স্বাস্থ্যের হাল খারাপ হয়েছে ১৬-র মধ্যে ন’টি শহরেই। মানসিক সুস্বাস্থ্যের নিরিখে সবচেয়ে খারাপ হাল আমেদাবাদের। উম্পুন আর লকডাউনের জোড়া ফলায় তালিকার শেষ তিনের মধ্যে রয়েছে কলকাতাও।
নানা দুশ্চিন্তাকে দূরে সরিয়ে বর্তমান পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেওয়া এবং মানসিক ভাবে সুস্থ থাকাকেই বলা হয় ‘মেন্টাল ওয়েল-বিং’। দেশের ১৬টি শহরের মানুষ লকডাউনের পরিস্থিতিতে আর্থ-সামাজিক দুশ্চিন্তাকে দূরে সরিয়ে রেখে কতটা ভালো থাকতে পারছেন, লকডাউনের প্রথম পর্ব থেকেই তা জানার চেষ্টা করেছিল সমীক্ষাকারী সংস্থা। ২১ মে তৃতীয় দফার লকডাউন শেষ হওয়ার পর দু’দফার সমীক্ষার তুলনা করতে গিয়ে দেখা যায়, করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও ধীরে ধীরে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়েছে দিল্লি, গুয়াহাটির মতো শহরে। কিন্তু আমেদাবাদ, চেন্নাই ও কলকাতার মতো শহরে মানসিক সুস্বাস্থ্যের গ্রাফ ক্রমেই নিম্নমুখী। কলকাতার ক্ষেত্রে এই অবনতিতে অবশ্য লকডাউনের জেরে আর্থিক, সামাজিক ও মানসিক চাপের পাশাপাশি রয়েছে উম্পুনের প্রভাবও।
শহরের বাস্তব পরিস্থিতি ঠিক কী রকম? সত্যিই কি মানসিক ভাবে খুব খারাপ অবস্থায় তিলোত্তমার বাসিন্দারা?
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগের শিক্ষক-চিকিৎসক রাজর্ষি নিয়োগী বলেন, ‘২০১৬ সালে ন্যাশনাল মেন্টাল হেলথ সার্ভের সময়েই দেখা গিয়েছিল, অবসাদ সবচেয়ে বেশি ছিল এ রাজ্যে। তার পরেই ছিল কেরালা। সে নিরিখে কলকাতার মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা আরও খারাপ হওয়ার কথা। সেটা হয়নি। বরং রাজ্য হিসেবে গুজরাট তখন মানসিক স্বাস্থ্যের বিচারে অনেকটাই উপরের দিকে ছিল, যারা এখন তলানিতে এসে গিয়েছে। ফলে কলকাতার অবস্থা খুব খারাপ, এমনটা মনে হয় না।’
কিছুটা একই মত মনোরোগ বিশেষজ্ঞ জয়রঞ্জন রামেরও। তিনি বলেন, ‘লকডাউনের জেরে মানসিক স্বাস্থ্য সর্বত্রই বিঘ্নিত হয়েছে। তবে গত কয়েক মাস অসংখ্য রোগী দেখার সুবাদে বলতে পারি, আমরা কিন্তু যথেষ্টই মানিয়ে নিয়েছি। ধীরে ধীরে আরও মানিয়ে নেব।’ মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কলকাতার মানুষ মূলত নির্দিষ্ট কিছু সমস্যাতেই বেশি ভুগছেন। বিঘ্নিত ঘুম, বাতিক বেড়ে যাওয়া, ভবিষ্যতের চিন্তায় বেশি খিটখিটে হয়ে পড়া—এ সবই রয়েছে তালিকায়।