রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

করোনা চিকিৎসায় কোনও ঘাটতি রাখা যাবে না, হুঁশিয়ারি স্বাস্থ্য দপ্তরের

July 4, 2020 | 2 min read

 করোনা তো বাড়ছেই। রাজ্যে সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা। শুক্রবার স্বাস্থ্য দপ্তরের দেওয়া বুলেটিনে দেখা যাচ্ছে, একদিনের বিচারে গত ২৪ ঘণ্টায় টেস্ট (১১০৫৩), আক্রান্ত (৬৬৯) ও মৃতের (১৮) সংখ্যা ছাপিয়ে গিয়েছে অতীতের সব রেকর্ড। স্বাস্থ্যকর্তারা মনে করেন, করোনা আক্রান্তের সংখ্যা যে বাড়বে, তা আশ্চর্য নয়। কিন্তু দৈনিক সংখ্যার বিচারে কোনও দিনই মৃত্যুর সংখ্যা যে এক অঙ্কে নামানো যাচ্ছে না, তা চিন্তার। তাঁদের মতে, এর মধ্যে অনেক মৃত্যুই হয়তো ঠেকানো যেত। তা যে হয়নি, তার জন্য করোনার চিকিৎসায় বেশ কিছু খামতি আছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তাই পাঁচ দিনের মধ্যে পর পর তিন বার নির্দেশিকা প্রকাশ করে স্বাস্থ্য দপ্তর কোভিড হাসপাতালগুলিকে মনে করিয়ে দিল, করোনা চিকিৎসায় তাঁদের পরিষেবা সংক্রান্ত সেই সব ঘাটতির কথা। সোম ও বৃহস্পতির পর শুক্রবারও কোভিড হাসপাতালগুলিকে সতর্ক করে দিয়ে জানানো হয়েছে, স্টেরয়েডের ব্যবহার থেকে শুরু করে অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়া, আপৎকালীন পরিস্থিতিতে রোগীকে প্রথমে স্থিতিশীল করে পরে করোনার চিকিৎসা করা, এমনকী ক্রিটিক্যাল কেয়ার পরিষেবার পাশাপাশি আইসিইউ বেড ম্যানেজমেন্টেও থেকে যাচ্ছে খামতি, রোগীস্বার্থে অবিলম্বে যা চিকিৎসকদের গোচরে আনা জরুরি।

বিভিন্ন কোভিড হাসপাতাল পরিদর্শনের পর এই সব ঘাটতিগুলি স্বাস্থ্য দপ্তরের বিশেষজ্ঞ দলের চোখে পড়েছে। সোমবার ও শুক্রবার সরকারি-বেসরকারি, দু’ রকম কোভিড হাসপাতালকেই এবং বৃহস্পতিবার মূলত বেসরকারি কোভিড হাসপাতালগুলিকে তাদের খামতির কথা তুলে ধরে সে সব শোধরানোর সুপারিশ করা হয়েছে।

রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য হল করোনায় মৃত্যু কমানো। কিন্তু এই সব খামতিগুলো খুবই ক্ষতি করছে কোভিড চিকিৎসায়। এগুলো দ্রুত সংশোধন করা জরুরি। সে জন্যই বার বার আমরা নির্দেশিকা জারি করছি সব কোভিড হাসপাতালগুলির উদ্দেশে। এতে কাজ না-হলে আমরা এবার হাসপাতাল ধরে ধরে একেবারে নাম করে করে খামতিগুলো তুলে ধরব।’ তিনি জানান, শুক্রবারও ২৫ জন বিশেষজ্ঞকে নিয়ে এই উদ্দেশ্য বৈঠক হয়েছে স্বাস্থ্যভবনে।

বিশেষজ্ঞ দলের সদস্যরাও জানাচ্ছেন, পরিদর্শনে গিয়ে তাঁরা যা দেখেছেন, তা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। এক সদস্যের কথায়, ‘রোগীর চিকিৎসা নথি ঘেঁটে বুঝলাম, নার্সকে অক্সিজেন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েই দায় সেরেছেন চিকিৎসক। মিনিটে কতটা অক্সিজেন দিতে হবে তার কোনও উল্লেখ বেড-হেড টিকিটে নেই। একই ব্যাপার ঘটছে স্যালাইন দেওয়ার ক্ষেত্রেও।’

আর এক সদস্য জানাচ্ছেন, বহু ক্ষেত্রে তাঁরা দেখেছেন, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ঠিক করে দেওয়া গাইডলাইনও মানা হচ্ছে না করোনা রোগীর চিকিৎসায়। কখন রোগীকে স্টেরয়েদ দেওয়া শুরু করতে হবে, তা নিয়েও অনেক চিকিৎসকের ধারণা স্পষ্ট নয় বলে মনে হয়েছে তাঁদের।

ওই সদস্য বলেন, ‘ভেন্টিলেটরে দেওয়ার আগে যে অক্সিজেন থেরাপিটা যথাযথ দেওয়া দরকার, সেই সামান্য কথাটা চিকিৎসক কী করে ভুলে যান, বোঝা মুশকিল! করোনা পজিটিভ হয়ে কো-মর্বিডিটি সঙ্গে নিয়ে যে রোগী হাসপাতালে এসেছেন, ইমার্জেন্সিতে যে তাঁর আগে হার্ট, লিভার, কিডনির অসুখের মতো অন্যান্য গুরুতর অসুস্থতা আগে সামাল দিতে হবে, তা-ও কি চিকিৎসকদের মনে করিয়ে দিতে হবে!’ তিনি জানান, কিডনির রোগীকে যে বুঝেশুনে স্যালাইন দেওয়া জরুরি, সে কথাটা যদি চিকিৎসকের মনে না-থাকে, তা হলে এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কিছুহয় না।

স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশ মনে করছেন, সে জন্যই দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ১২, ১৪, ১৫টির কমে আনা সম্ভব হচ্ছে না। এবং তা-ও খাস কলকাতায়। গত ২৪ ঘণ্টায় যে সর্বোচ্চ ১৮ জন করোনা আক্রান্ত মারা গিয়েছেন, তার মধ্যে কলকাতাতেই মারা গিয়েছেন আট জন। বাকি ১০ জনের মধ্যে একজন মারাগিয়েছেন মালদহে।

বাকি ন’জনই কলকাতা লাগোয়া শহরতলিতে। হাওড়া ও উত্তর ২৪ পরগনায় তিন জন করে, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় দু’জন এবং হুগলিতে একজনের। গত ২৪ ঘণ্টায় অবশ্য সর্বাধিক টেস্টও (১১,০৫৩) হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। বর্তমানে করোনা নিয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৬২০০ জন।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#corona warns, #West Bengal, #health department

আরো দেখুন