জ্যোতি বসু – এক রাজনৈতিক অধ্যায়
জ্যোতি বসু – তাঁর মধ্যে যেমন একাধারে বুর্জোয়া গণতন্ত্র এবং পুঁজিবাদী ধারণাগুলি ছিল, তার পাশাপাশিই তিনি ভেতর থেকে ছিলেন একজন মার্কসবাদী। ভাগ্য সহায় থাকলে জ্যোতি বসু ১৯৯৬ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়ে যেতেন। তবে তা হল না, তাঁর দলের কিছু কট্টরপন্থী নেতার সৌজন্যে।
জ্যোতি বসু চুপচাপ দলের এই নির্দেশ মেনে নিলেন। তবে কয়েক মাসের মধ্যে তিনি সহযোদ্ধা স্ট্যালিনপন্থীদের বুদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন এবং কেন্দ্র-বাম যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠন না করার দলের সিদ্ধান্তকে “ঐতিহাসিক ভুল” বলেছিলেন।
তিনিই সম্ভবত প্রথম, যিনি সিপিআই-এম-এর কঠোর নিয়মকানুনের বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি ছিলেন ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা, এবং দেশের অন্যতম দীর্ঘস্থায়ী মুখ্যমন্ত্রী।
২০০০ সালে জ্যোতি বসু স্বাস্থ্যগত কারণ উল্লেখ করে পশ্চিমবঙ্গের শাসন ত্যাগের আগে অবধি অবিশ্বাস্যভাবে ২৩ বছর ধরে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। গোটা রাজনৈতিক মহল তাঁকে শ্রদ্ধা করত। অনেক প্রধানমন্ত্রী তাঁর থেকে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে পরামর্শ নিয়েছিলেন।
তিনি বহুবার সমালোচিত হলেও অনেকের কাছেই তিনি ছিলেন বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের অন্যতম সফল রাজনীতিবিদ। তিনি ১৯৪৬ সালে বেঙ্গল আইনসভায় নির্বাচিত হয়ে নির্বাচনী রাজনীতিতে নামেন। নির্বাচনে জয়লাভ করা তখন বসুর অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। ১৯৫২ সালের পর থেকে তিনি বারবার পশ্চিমবঙ্গ আইনসভায় নির্বাচিত হয়েছিলেন।
১৯৬৪ সালে সিপিআই বিভক্ত হয়ে গেলে বসু সিপিআই-এম এর নয়জন প্রতিষ্ঠাতা পলিটব্যুরো সদস্যের একজন হন। দুটি নড়বড়ে ও স্বল্প মেয়াদী সরকার ১৯৬৭ এবং ১৯৬৯ সালে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা দখল করে, এবং জ্যোতি বসু তার উপ-মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এটাই ছিল প্রশাসক হিসাবে তাঁর প্রথম পদ।
১৯৭৭ সালের ২১ শে জুন জ্যোতি বাবু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হয়ে বহুদলীয় বামফ্রন্ট সরকারের প্রধান হন, তিনি নিজেই প্রায় এক চতুর্থাংশ শতাব্দীর পরে হাল ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। বসু পশ্চিমবঙ্গে পরপর পাঁচবার মার্কসবাদীদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
তিনি আশির দশকে অ-কংগ্রেস দলগুলিকে একত্রিত করার ক্ষেত্রেও মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। ১৯৮৯, ১৯৯৬, ১৯৯৭ এবং ২০০৪ সালে অ-কংগ্রেস সরকার গঠনের লক্ষ্যে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন তিনি, যা তাঁকে জাতীয় ব্যক্তিত্ব করে তোলে।
তিনি মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর শিল্পপতি ছেলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। তবে তা কেবল অভিযোগ আকারেই থেকে যায়। পশ্চিমবঙ্গে কৃষিক্ষেত্রের সংস্কারকে দেশজুড়ে মডেল হিসাবে সম্বোধন করা হলেও, শিল্প, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্বল ভূমিকার জন্য বসুকে ব্যাপকভাবে নিন্দিত হতে হয়।
২০০০ সালে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করার পরেও, জ্যোতি বসু সিপিআই-এম এবং ভারতীয় রাজনীতিতে বড় ভূমিকা পালন করেন।