বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

ঝুম্পা লাহিড়ী – সাহিত্যেই যার শেকড়ের সন্ধান

July 11, 2020 | 2 min read

বাঙালির প্রবাসজীবন নিয়ে, সেই প্রবাসে নিজের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়ার লড়াই নিয়েই ইংরেজিতে লেখেন তিনি। উদ্বাস্তু জীবন বার বার ফুটে উঠেছে তাঁর কলমে। তিনি হলেন, ঝুম্পা লাহিড়ী পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী মার্কিন ও ভারতীয় বাঙালী বংশদ্ভুত লেখিকা। 

ঝুম্পা লাহিড়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মেছেন। অস্তিত্বের সঙ্কটে তিনি নিজে সারাজীবন ভুগেছেন। ঝুম্পার প্রথম উপন্যাস ‘দ্য নেমসেক’-এর মূল চরিত্র গোগোলও এই অস্তিত্ব সঙ্কটে ভোগে।। ঝুম্পার নিজের জীবনই ছায়া ফেলেছে গোগোলের চরিত্রে। গোগোল তার দেশের মাটি থেকে পালাতে চায়, কিন্তু সে শান্তি পায় না। এই অশান্তিই গোগোলের নিয়তি। সেরকমই ঝুম্পারও। তাই একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘The essential dilemma of my life is between my deep desire to belong and my suspicion of belonging.’

ঝুম্পার কথায়, ‘আমি ছোটবেলা থেকে বাংলা শুনছি, বলতে পারি, কিন্তু  বাংলা ভাষা তো পুরোপুরিভাবে আমার জানা নয়, তা হলে তো আমি বাংলাতেই লিখতাম, সেটা আমি পারি না। ইংরেজি ভাষাটা আমি ভাল জানি কারণ আমার পড়াশোনাটা ইংরেজিতে। তবুও আমার মনে হয়, ইংরেজি আমার ভাষা নয়। কারণ ইংরেজি আমার মা-বাবার ভাষা নয়। বাংলা আমার মা-বাবার ভাষা।”

মাঝে বেশ কিছু বছর ঝুম্পা আমেরিকা ছেড়ে ইতালির রাজধানী রোমে থাকা শুরু করেন।  তখন চেষ্টা করতেন, ইতালীয় ভাষায় লিখতে ও কথা বলতে।  ইতালীয় ভাষায় তিনি একটি বই লেখেন। বইটি ইংরেজি অনুবাদসহ প্রকাশিত হয়েছে, নাম ‘ইন আদার ওয়ার্ড্‌স’।

তাঁর মতে, “আমি যখন এখন ইতালিয়ান ভাষায় বই লিখছি, আমার খুব মনে হচ্ছে যেভাবে আমার কোনও নির্দিষ্ট একটা দেশ নেই, ঠিক সেভাবেই আমার কোনও নির্দিষ্ট একটা ভাষাও নেই। যে লেখে তার জন্য ভাষাই দেশ। ভাষা আর দেশ কি আলাদা কিছু? একই জিনিস।’’ 

আরো এক সাক্ষাৎকারে ঝুম্পা বলেন “লং আইল্যান্ডে আমার বন্ধুবান্ধবরা জানতই না, কলকাতা কেমন! কলকাতাতেও খুড়তুতো, জ্যাঠতুতো, মামাতো ভাইবোনেরা আমাকে ‘আউটসাইডার’ ভাবত। ছোটবেলাতেই মনে হয়েছিল, আমার কোনও দেশ নেই। কিংবা সব দেশই যেন আমার নিজের। যেখানে খুশি, যেতে পারি।”

শেকড়ের সন্ধানে বার বার প্রত্যাবর্তন করেছেন কলকাতায়। ‘দ্য লোল্যান্ড’ উপন্যাসের প্রথমে নাম ঠিক করেছিলেন ‘রিটার্ন’। বলেন “পরে ভেবে দেখলাম, নামটা ভাল না। বরং লো ল্যান্ড বা নাবাল জমিতে জল জমে, আবার রোদে উবে যায়। আমার চরিত্ররাও সবাই সেই ভাবে টালিগঞ্জের পানাপুকুরে যায়, উবে যায়, ফের আসে। তখনই নামটা বদলে দিলাম।”  

এভাবেই বার বার ঝুম্পা তাঁর জীবনের সাথে লেখাকে মিলিয়ে দিয়েছেন। থেকেছেন কলকাতা, লন্ডন, রোড আইল্যান্ড, ইতালিতে। সারা জীবন ধরেই ছুটে চলেছেন অস্তিত্বের সন্ধানে। এই ছুটে চলায় বিষন্নতাও অনিবার্য। তাঁর যুক্তি “আসলে আমি কোথায় আছি, কোথায় থাকি সেটা নিছক মানসিক অবস্থান।” 

(ঋণ স্বীকার – আনন্দবাজার পত্রিকা)  

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#jhumpa lahiri

আরো দেখুন