১০ লক্ষ চাষীর জন্য নয়া প্রকল্প রাজ্যের
করোনার প্রকোপ ও লকডাউনের সাঁড়াশি চাপে সঙ্কটে কৃষি ও কৃষক। এই পরিস্থিতিতে ত্রাতার ভূমিকায় এগিয়ে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বল্প সময়ে উচ্চ ফলনশীল ফল ও সব্জি উৎপাদনের মাধ্যমে লক্ষাধিক কৃষকের আয় নিশ্চিত করতে নতুন প্রকল্প আনল রাজ্য সরকার। ৩৮ কোটি টাকার ওই বিশেষ প্রকল্পের মাধ্যমে ১০ লক্ষ চাষির হাতে উন্নত প্রজাতির ১ কোটি চারাগাছ তুলে দেওয়া হবে। এই প্রকল্পে বিভিন্ন ফলের চারার পাশাপাশি দেওয়া হবে কিছু মশলার গাছের চারাও।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত তো বটেই, বিদেশ থেকেও আনা হচ্ছে এই চারা। সরকারি সূত্রে খবর, করোনা পরবর্তী সময়ে আলু, ধানের মতো প্রথাগত চাষ করতে প্রয়োজন প্রাথমিক টাকাটাই জোগাড় করতে পারছেন না বাংলার অসংখ্য চাষি। তাই বিকল্প চাষের সন্ধান দিচ্ছে রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যান পালন দপ্তর। চলতি মাস থেকেই রাজ্যজুড়ে এই উচ্চ ফলনশীল চারা বিনে পয়সায় বিলি শুরু হচ্ছে। আগস্টের মধ্যেই তা শেষ হবে। শুধু চারা বিলিই নয়, উদ্যান পালন বিভাগের বিশেষজ্ঞরা এই সমস্ত গাছের পরিচর্যার পাঠও দেবেন।
দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ৩ থেকে ৭ মাসের মধ্যে ফল দেয়, এমন উন্নত প্রজাতির চারা বিতরণ করা হবে। সেই লক্ষ্যে তাইওয়ান থেকে পেঁপের বীজ আমদানি করা হচ্ছে। ‘রেড লেডি’ নামে এই বিশেষ প্রজাতির পেঁপে গাছের উচ্চতা ৮ ফুট পর্যন্ত হয়। সাত মাসের মধ্যেই ফল ধরে। ফলনও প্রচুর। পাশাপাশি টিস্যু কালচার করে তৈরি ‘জি ৯’ প্রজাতির বিশেষ কলাগাছের চারা দেওয়া হবে। এছাড়াও আম, পেয়ারা, আতা, বেদানা, কমলালেবু, লিচু, কাজুবাদাম, এলাচ, গোলমরিচ, দারিচিনি সহ একাধিক গাছের চারা বিলির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে খবর।
এ প্রসঙ্গে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যান পালন দপ্তরের প্রধান সচিব সুব্রত গুপ্ত বলেন, প্রথাগত চাষের ঝুঁকি থেকে কৃষকদের বাঁচাতেই এই প্রকল্প। পাশাপাশি প্রথাগত চাষে মাটির উর্বরতা শক্তি কমে যায়। নয়া এই ভাবনায় কম সময়ে বিকল্প উপায়ে উচ্চ ফলনশীল ফল ও সব্জির উৎপাদন নিশ্চিত হবে।’ তিনি আরও বলেন, শুধু স্বল্প সময়ের নয়, দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতেও ফল চাষের লক্ষ্যমাত্রাও নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ‘পলি হাউস’ পদ্ধতিতে সব্জি চাষের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কারণ, এই বিশেষ পদ্ধতিতে স্বাভাবিক হারের তুলনায় আড়াই গুণ বেশি ফলন হয়। চাষ হয় আচ্ছাদনে ঢেকে। এই আধুনিক পদ্ধতিতে চাষের প্রবণতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে রাজ্য সরকার পলি হাউস গড়তে ৫০ শতাংশ টাকা ভর্তুকি দেওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছে বলে জানান সুব্রতবাবু। দুঃসময়ের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর এই অভিনব প্রকল্প কৃষকদের মুখে হাসি ফোটাতে অনুঘটকের কাজ করবে বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।