রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

প্রয়াত প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র

July 30, 2020 | 2 min read

বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা, পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি সোমেন মিত্রের জীবনাবসান হয়েছে। বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। বুধবার গভীর রাতে দক্ষিণ কলকাতায় এক বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। অসুস্থতার কারণে ২১ জুলাই থেকে তিনি ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সোমেন মিত্রের প্রয়াণে বাংলার রাজনীতিতে একটা অধ্যায়ের অবসান হল।

চলে গেলেন সোমেন মিত্র


দীর্ঘদিন ধরেই হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ভুগছিলেন বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ। সাধারণত দিল্লি AIIMS-এ চিকিৎসা করাতেন। নিশ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা হওয়ায় পারিবারিক চিকিৎসকের পরামর্শে ২১ জুলাই বেলভিউ হাসপাতালে ভর্তি হন। সঙ্গে সামান্য জ্বরও ছিল। রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় আইসিইউতে রাখতে হয় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিকে। জ্বর-সর্দি থাকায় করোনা পরীক্ষাও করা হয়েছিল। যদিও সেই রিপোর্ট আসে নেগেটিভ।

মাঝে শনিবার সোমেন মিত্রের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছিল। কিডনি ঠিকমতো কাজ করছিল না। হৃদস্পন্দনের মাত্রাও কমে গিয়েছিল। সেই সংকট কাটিয়ে মঙ্গলবার তিনি অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন।

প্রবীণ এই রাজনীতিকে পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, বুধবার নার্সিংহোমে তিনি হাঁটাচলা করেছিলেন। পরিজন ও শুভানুধ্যায়ীদের সঙ্গে কথাও বলেন। কিন্তু বেশি রাতে তিনি হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হন। এদিন গভীর রাতে প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে ট্যুইট করে সভাপতির প্রয়াণের খবর জানানো হয়।

জানা গিয়েছে, পুরনো পেসমেকার বদল করার জন্য বেলভিউ নার্সিংহোমে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেশি থাকায়, সমস্যা তৈরি হয়েছিল। যে কারণে ডায়ালিসিস করতে হচ্ছিল। তবে মঙ্গলবার রাত থেকে তাঁর অবস্থার ক্রমে উন্নতি হচ্ছিল বলেই জানা গিয়েছিল। তার মধ্যে বুধবার রাতে অকস্মাত্‍‌ এই মৃত্যুর খবর।
১৯৪১ সালে জন্ম সোমেন্দ্রনাথ মিত্রের। প্রয়াত বরকত গনিখান চৌধুরীর শিষ্য বলা হত তাঁকে। আমহার্স্ট স্ট্রিটের ‘ছোড়দা’ নামেই কংগ্রেস রাজনীতিতে বেশি পরিচিত ছিলেন সোমেন। অধুনালুপ্ত শিয়ালদহ কেন্দ্র থেকে বেশ কয়েক বার বিধায়ক হয়েছিলেন।

নব্বইয়ের দশকে তৎকালীন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রের সঙ্গে কংগ্রেসের সাংগঠনিক নির্বাচনে লড়াইয়ের পরেই দল ছেড়েছিলেন তৎকালীন যুব কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে নির্বাচনে বিপর্যয়ের দায় নিয়ে, ১৯৯৮ সালে সোমেন মিত্রও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়ান। এর প্রায় প্রায় দু-দশক পর ২০১৮-র সেপ্টেম্বরে তিনি দ্বিতীয়বার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদে ফেরেন।

কংগ্রেস ছেড়ে কংগ্রেসে ফিরে আসার মাঝের এই সময়টায় প্রথমে প্রগতিশীল ইন্দিরা কংগ্রেস গঠন করেছিলেন সোমেন। সেটা ২০০৭-’০৮ সাল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এর পর যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসে। ২০০৯ সালে ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের সাংসদও নির্বাচিত হয়েছিলেন সোমেন। তবে, পাঁচ বছর অতিবাহিত করতে না করতেই ২০১৪-র লোকসভা ভোটের আগে তিনি কংগ্রেসে ফেরেন।

রাজনৈতিক ভাবে বিরোধ থাকলেও দক্ষিণ কলকাতার নার্সিংহোমে থাকাকালীন সোমেন মিত্রের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজখবর করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবারও ফোন করে সোমেন মিত্রের স্বাস্থ্যের খোঁজ নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। পরে ফুল পাঠিয়ে তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনাও করেন। সোমেনবাবুর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় ছিল রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপান বন্দ্যোপাধ্যায় এবং লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরীরও।

কংগ্রেস সূত্রের খবর, দলে এই দুই নেতার অনুগামীদের মধ্যে দূরত্ব থাকলেও সোমেনের স্বাস্থ্যের বিষয়ে যাবতীয় খোঁজখবর এবং পরিবারের সঙ্গে টানা যোগাযোগ রাখতেন অধীর চৌধুরী।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#RIP, #Somen Mitra, #Congress

আরো দেখুন