স্বাস্থ্য বিভাগে ফিরে যান

শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো নিয়ে নো চিন্তা, জেনে নিন এই উপায়গুলি 

August 1, 2020 | 3 min read

প্রতি বছর পৃথিবীর ১২০টিরও বেশী দেশে ১লা থেকে ৭ই আগস্ট বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালন করা হয়। শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোয় উৎসাহ দিতে এবং শিশুদের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে এই কর্মসূচী। বুকের দুধ খাওয়ানোতে জোর দিতে ১৯৯০ সালের আগস্ট মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ইউনিসেফের যৌথ ঘোষণাকে সফল করতেই এই কর্মসূচী।

কিছু মানুষের জন্য, বিশেষ করে যারা প্রথমবার মা হয়েছেন, বুকের দুধ খাওয়ানো চ্যালেঞ্জ হতে পারে। বুকের দুধ খাওয়ানোর ধারণা এবং প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানলে আরো বেশী আত্মবিশ্বাসী হতে পারবেন তারা।

বুকের দুধ খাওয়ানো সম্পর্কিত কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর রইল আপনাদের জন্য।

১) কখন বুকের দুধ আসবে?

বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই, সন্তান জন্মের পর প্রথম দিনগুলিতে মহিলারা কোলোস্ট্রাম বা প্রথম দুধ উৎপাদন করেন । কোলোস্ট্রাম হলো পুরু, দুধের মতো পদার্থ, যা অ্যান্টিবডি সমৃদ্ধ, যা প্রকৃত বুকের দুধ উৎপাদনের পূর্বে তৈরী হয় । সাধারণত জন্মের পর কয়েক দিনের মধ্যে শরীর বুকের দুধ উৎপন্ন করতে শুরু করে।

২) বুকের দুধ খাওয়ানো কি কঠিন?

বুকের দুধ খাওয়ানো সবচেয়ে প্রাকৃতিক জিনিস হিসাবে মনে করা হয়। তবে এটি প্রত্যেকের জন্য সহজ নাও হতে পারে, প্রধানত প্রসবের পরে প্রথম কয়েক সপ্তাহে। এটি একটি অর্জিত দক্ষতা যা বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের ধৈর্য এবং অনুশীলনের সাথে শিখতে হয়। বুকের দুধ খাওয়ানো সাধারণত সময় এবং অভিজ্ঞতার সাথে সাথে সহজ হয়ে যায়।

৩) বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় কিভাবে পেটব্যথা প্রতিরোধ করবেন?

বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় আপনার শিশুর পেটব্যথা হলে, আপনি কি খাচ্ছেন তা বিবেচনা করুন। গরুর দুধ, ফুলকপি, চকোলেট, ব্রোকোলি, পেঁয়াজ এবং মশলাযুক্ত খাবারের মতো কিছু খাবার আপনার শিশুর সহ্য না হলে, তার পেটব্যথা হতে পারে। আপনার খাদ্যতালিকা থেকে কোন কোন খাবার বাদ দিতে হবে, সেই বিষয়ে আপনার শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

৪) স্তনবৃন্তের কালশিটে কিভাবে নিরাময় করা যাবে?

কালশিটে পড়া বা ফেটে যাওয়া স্তনবৃন্ত দুধ খাওয়ানোকে বেদনাদায়ক করে তুলতে পারে। আপনি আপনার নিয়মিত বুকের দুধ খাওয়ানোর অবস্থান পরিবর্তন করার কথা চিন্তা করতে পারেন। দুধ খাওয়ানোর পরে আপনার স্তনবৃন্তকে হাওয়ায় শুকোতে দিন। আঁটোসাঁটো ব্রা এবং শার্ট এড়িয়ে চলুন। নরম সুতির পোশাক ব্যবহার করুন, যাতে ত্বকে জ্বালা না করে। 

আপনার দুধ খাওয়ানোর প্যাড নিয়মিত পরিবর্তন করুন । হাতের স্পর্শ কৌশলে বের করা কিছু বুকের দুধ আপনি কালশিটে পড়া স্তনবৃন্তে ঘষে দিতে পারেন, যাতে সেগুলির নিরাময় হয়ে যায়।

৫) স্তনপান করানোর সময় শিশুকে স্তনের সাথে কিভাবে ভালোভাবে ধরে রাখা যায়?

বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় কোনও ব্যথা হওয়া ঠিক নয়। বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় আপনার কাঁটা ফোটার মত বা কাঁপুনির মতো অনুভূতি হতে পারে। কিন্তু কোন ব্যথা হওয়ার মানে শিশুটিকে সঠিকভাবে স্তনের সাথে ধরে রাখা হচ্ছে না। 

তার মুখ বড় করে খুলুন (তার চিবুক ধরে আলতোভাবে নীচের দিকে টেনে ধরুন) যাতে সে যতটা সম্ভব এরিওলা (স্তনবৃন্তের চারপাশের লালচে জায়গা) এবং স্তন মুখে নিতে পারে । যদি তার মুখ যথেষ্ট পরিমাণে না খোলে, তবে স্তনবৃন্তের সাথে তার বাঁধন সঠিক নাও হতে পারে, যার ফলে স্তনবৃন্ত থেকে তার মুখ সরে যেতে পারে, ফলে স্তনবৃন্ত ফেটে যায়।

৬) কখন আমার পাম্পিং শুরু করা উচিৎ?

এটার কোন নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। অনেক মায়েরা পাম্পিং পছন্দ করতে পারেন কারণ যখন তিনি খাওয়াতে অক্ষম হবেন, তাঁর সন্তানকে অন্য কেউ খাওয়াতে পারেন। কিছু মা তাদের দুধ সরবরাহ বাড়াতে পাম্প করা বেছে নিতে পারেন। যদি আপনি পাম্পিং করা বেছে নেন, তাহলে দিনে দুইবার দুধ খাওয়ানোর ঠিক পরে এটি করার চেষ্টা করুন, যাত একবার দুধ খাওয়ানোর জন্য পর্যাপ্ত দুধ জমা করা যায়।

৭) কতদিন ধরে বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) অন্যান্য খাবার দেওয়া শুরু করার আগে প্রায় ছয় মাস শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দেয়। তারপরে, শিশুর প্রায় ২ বছর বা তার বেশী বয়স পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়ানোর সাথে অন্যান্য পরিপূরক শক্ত খাবার দেওয়া যেতে পারে। তবে, এটি ব্যক্তিগত পছন্দের উপর বেশী নির্ভর করে।

৮) আমি যদি অসুস্থ হই, তবে কি বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করা উচিত?

বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েরা অসুস্থ হলেও বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করার প্রয়োজন নেই। কিছু পরিস্থিতিতে কিন্তু বন্ধ করার প্রয়োজন হয়, যেমন সক্রিয় যক্ষা, এইচআইভি, ব্রুসেলোসিস, ক্যান্সারের জন্য কেমোথেরাপির ব্যবস্থা, নিষিদ্ধ ওষুধ গ্রহণ, বুকের উপর হার্পিসের ফোড়া ইত্যাদি। তবে কেবল জ্বর বা সর্দির কারণে বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করা উচিত নয়, যদি না ডাক্তার এরকম করতে পরামর্শ দেন ।

তথ্য সৌজন্যেঃ ফার্স্ট ক্রাই

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Breast Milk

আরো দেখুন