পুর শহরের চালচিত্র বদলে ফেলতে দশম-বার্ষিকী পরিকল্পনা রাজ্যের
এক দশকের ‘টার্গেট’। ২০২০ থেকে ২০৩০। রাজ্যের প্রতিটি পুর শহরের চালচিত্র বদলে ফেলতে দশম-বার্ষিকী পরিকল্পনা নিল রাজ্য সরকার। আম্পানের ক্ষত মেরামত ও কোভিডের মোকাবিলা থাকছে অগ্রাধিকারের তালিকায়। আর এই মেগা পরিকল্পনার ‘ক্যাচলাইন’ও তৈরি করে দিয়েছে পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তর। তাতে বলা হয়েছে—‘পরিচ্ছন্ন পুরসভা। সবুজ পুরসভা। স্মার্ট পুরসভা। স্বনির্ভর পুরসভা। দায়বদ্ধ পুরসভা।’ সূত্রের খবর, জুলাই মাসের শেষে রাজ্যের প্রতিটি পুরসভা, কর্পোরেশন ও উন্নয়ন পর্ষদের কাছে পরিকল্পনার রূপরেখা পাঠিয়ে দিয়েছে রাজ্য।
বাস্তবায়নের কাজ চলবে পর্যায়ক্রমে। স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে। স্বল্পমেয়াদি কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, প্রতিটি পুর শহরে পরিস্রুত পানীয় জলের সরবরাহ সুনিশ্চিত করা। জলের অপচয় রুখতে ব্যবস্থা গ্রহণ। নিকাশি পরিকাঠামোর আমূল পরিবর্তন। ‘গ্রিন সিটি মিশন’ প্রকল্পে পরিচ্ছন্ন ও দূষণমুক্ত শহর গড়ে তোলা। সে ক্ষেত্রে মূলত জোর দেওয়া হয়েছে— এক, পুর শহরে ইলেকট্রিক বাস চালু। দুই, পুকুর বা জলাশয়ের সংস্কার ও উপকূলবর্তী এলাকার সৌন্দর্যায়ন। উম-পুনের তাণ্ডবে হারিয়ে যাওয়া সবুজ ফিরিয়ে আনতে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি গ্রহণ। তিন, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। চার, প্রচলিত বিদ্যুতের ব্যবহার কমিয়ে অপ্রচলিত বা সৌরবিদ্যুতের উপর নির্ভরতা বাড়ানো। পুরসভা কিংবা বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে সৌর বিদ্যুতের প্যানেল বসানো। সৌরশক্তি নির্ভর স্ট্রিট লাইট লাগানো। পাঁচ, বিদ্যুৎচালিত প্রতিটি যানের জন্য ব্যাটারি রিচার্জ সেন্টার খোলা। ছয়, দৃশ্যদূষণ রোধে পুর এলাকায় হোর্ডিং টাঙানোর ক্ষেত্রে কড়া বিধিনিষেধ আরোপ। এ ছাড়াও জরুরি ভিত্তিতে পুর শহরে ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণ। ২০২০-২০২১ থেকে ২০২২-২০২৩, এই তিনটি আর্থিক বছরের মধ্যে স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, দীর্ঘমেয়াদি পর্যায়ের কাজের সময়সীমা ২০৩০ সাল পর্যন্ত। এই পর্যায়ে মোট ১১টি পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, প্রতিটি পুরসভায় ভূগর্ভস্থ বিদ্যুতের লাইন পাতা। নবদ্বীপ পুরসভা ও কোচবিহার শহরকে ‘মডেল’ করে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। পরিবেশের সুরক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে নতুন উড়ালপুল নির্মাণ। বাতাসের দূষণ রোধে ‘এয়ার কোয়ালিটি মনিটরিং স্টেশন’ তৈরি করা। পুর-শহরগুলিতে সাইকেল চলাচলে পৃথক লেন, কার পার্কিং ও স্ট্যান্ড নির্মাণ। বাসস্ট্যান্ড, বাজার কিংবা মার্কেট কমপ্লেক্সের আধুনিকীকরণ। রাস্তার ধারে হোটেল কিংবা রেস্তরাঁয় পরিবেশ-বান্ধব উনুনের ব্যবস্থা করা। ভর্তুকিতে সেই উনুন দেওয়া হবে মালিকদের। আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া পুর-নাগরিকদের জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্র খোলা। পুরসভা অথবা উন্নয়ন পর্ষদের বিভিন্ন এলাকায় এই ধরনের স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। বৃদ্ধ-বৃদ্ধা নাগরিকদের থাকার সুবন্দোবস্ত করা। এক্ষেত্রে পুরসভা ও বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার যৌথ উদ্যোগে ‘সিনিয়র সিটিজেন্স হোম’ গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
রাজ্যে মোট পুরসভার সংখ্যা ১২৫টি। কর্পোরেশন রয়েছে ছ’টি। এছড়াও নিউটাউন-কলকাতা ডেভলপমেন্ট অথরিটি, শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি ডেভলপমেন্ট অথরিটি, আসানসোল-দুর্গাপুর ডেভলপমেন্ট অথরিটি, হলদিয়া ডেভলপমেন্ট অথরিটির মতো আরও বেশ কয়েকটি উন্নয়ন পর্ষদ রয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার চাইছে আগামী দশ বছরের মধ্যে পুর-শহরগুলিকে দেশের মধ্যে ‘রোল মডেল’ হিসেবে গড়ে তুলতে।