অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করতে বড় ভূমিকা নেবে বাংলা
অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি যতটা অন্ধকারে ঢাকা পড়বে বলে মনে করা হয়েছিল, সেই আশঙ্কার মেঘ কাটছে। মিলছে কিছুটা আলোর দিশা। আনলক পর্বে জুন ও জুলাই মাস থেকে বেশ কিছু শিল্প সেক্টরের উৎপাদন হার এবং বাণিজ্য বৃদ্ধির প্রবণতা এই আশা দেখাতে শুরু করেছে। এর নেপথ্যে রয়েছে ওষুধশিল্প, নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য, পরিকাঠামো উপকরণ এবং খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন ও বেচাকেনা বৃদ্ধির প্রবণতা। স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার অর্থনীতি সংক্রান্ত রিসার্চ রিপোর্টে (এসবিআই রিপোর্ট) এই আশার বার্তা দেওয়া হয়েছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২০-’২১ আর্থিক বছরে জিডিপি বৃদ্ধির হার অবশ্যই বড়সড় ধাক্কা খেতে চলেছে। কিন্তু অর্থনৈতিক মন্দার হার প্রথম ত্রৈমাসিকে যতটা খারাপ হবে বলে ভাবা হয়েছিল, ততটা ধাক্কা খাবে না। বরং কিছুটা উন্নতিই হবে। অন্তত ৪ শতাংশ উন্নতির আশা করা হচ্ছে। পাশাপাশি জুলাই মাস থেকে শিল্প-বাণিজ্যের কিছু সেক্টরের স্বাভাবিক হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। তাই দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক, অর্থাৎ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়সীমায় জিডিপি বৃদ্ধির হার আশা দেখাচ্ছে, লকডাউনের অন্ধকার এবার কাটিয়ে উঠবে ভারত। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, ধীরে ধীরে অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়ায় বিশেষ ভূমিকা নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। রিপোর্টেই স্পষ্ট, অর্থনৈতিকভাবে উন্নত অন্য রাজ্যগুলির তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে জিডিপি লোকসানের হার অনেক কম।
রাজ্যওয়াড়ি হিসেব-নিকেশের তালিকায় দেখা যাচ্ছে, দেশে জিডিপি লোকসান মাথাপিছু ২৭ হাজার টাকা। অর্থাৎ এটা জাতীয় গড়। সেই তুলনায় বাংলায় আর্থিক ক্ষতি হয়েছে মাথাপিছু ২৪ হাজার টাকা। দেখা যাচ্ছে, কোনও রাজ্যের লোকসান মাথাপিছু ৪৫ হাজার, কোনও রাজ্যের ৬৭ হাজার টাকা। এখনও পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের জিডিপি লোকসান হয়েছে ১৩ শতাংশ। গুজরাত ও মহারাষ্ট্রের ১৭ শতাংশ। কিছু রাজ্যের ২৫ শতাংশ। রিপোর্টে বলা হয়েছে, মে মাসে ভাবা হয়েছিল আর্থিক বৃদ্ধির হার সামগ্রিকভাবে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ধাক্কা খাবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, সেটা খুব বেশি হলে কমছে ১৬.৫ শতাংশ। এমনকী তা আরও কম হতে পারে।
স্টেট ব্যাঙ্কের এই রিপোর্টে অর্থনীতি দেখছে সেক্টরভিত্তিক কিছুটা আশার চিত্র। জুনের শেষ থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত বেশ কয়েকটি সেক্টরে চাঙ্গা হওয়ার লক্ষণ স্পষ্ট হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, অভ্যন্তরীণ মার্কেটে ট্রাক্টর, বিটুমিন বিক্রি বেড়েছে। অর্থাৎ ঘুরে দাঁড়াচ্ছে গ্রামীণ ও নির্মাণ পরিকাঠামো। স্টেট ব্যাঙ্ক লক্ষ্য করেছে, ব্যাঙ্ক ডিপোজিট আবার স্বাভাবিক হচ্ছে। কারেন্ট ও সেভিংস—উভয় ক্ষেত্রেই টাকা জমা এবং তোলার ভারসাম্য ফিরে আসছে। ভোগ্যপণ্য এবং খাদ্য ছাড়াও গৃহস্থালির অন্য উপকরণের উৎপাদন আবার বাড়ছে। কারণ চাহিদা বৃদ্ধি। যে কোনও পণ্য এবং অবশ্যই অর্থনীতির কাছে যা সব সময় সন্তোষজনক বার্তা।