অঙ্গনওয়াড়ি শিশুদের উজ্জীবিত করতে উদ্যোগী রাজ্য
করোনা সংক্রমণের জেরে দীর্ঘ লকডাউন পর্ব কাটিয়ে এখন ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরছে বাংলা। কিন্তু এখনও চার দেওয়ালের মধ্যেই বন্দি থেকে গিয়েছে শিশু মন। বন্ধ রয়েছে সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। খেলতে বা ঘুরতে যেতেও ঘরের বাইরে পা রাখতে পারছে না কচিকাঁচারা। রাজ্যের বিভিন্ন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের পড়ুয়াদের অবস্থাও তথৈবচ। শিশুদের মনকে বিকশিত করার হাজারও উপকরণে ঠাসা রয়েছে রাজ্যের প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। সঙ্গে দুপুরের খাবার। কিন্তু করোনার প্রকোপে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি বন্ধ থাকায় সেসবও এখন পড়ে রয়েছে ‘ঘরবন্দি’ অবস্থায়। ফলে বাড়িতে থেকে হাঁফিয়ে উঠছে শিশু মন।
এক্ষেত্রে রেহাই পাওয়ার একমাত্র উপায় হল অনলাইন শিক্ষা! যদিও গ্রামীণ এলাকা তো বটেই, শহরাঞ্চলের অঙ্গনওয়াড়িরও সিংহভাগ পড়ুয়ার কাছেই যা ‘সোনার পাথরবাটি’। এই পরিস্থিতিতে একটা উপায় ভেবেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সেই ভাবনাকে কাজে লাগিয়েই শিশু মনকে ফের সজীব করে তোলার রসদ বানিয়ে ফেলেছে নারী ও শিশু কল্যাণ দপ্তর। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের তিন থেকে ছয় বছর বয়সি পর্যন্ত পড়ুয়াদের জন্য সিলেবাস উপযোগী ছড়া, রূপকথার গল্প এবং জিঙ্গল বানিয়ে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে অভিভাবকদের কাছে।
কীভাবে পৌঁছচ্ছে এসব? নারী ও শিশু কল্যাণ দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, অডিও ফরম্যাটে ওই সমস্ত ছড়া-গল্প পৌঁছে দেওীয়া হচ্ছে অভিভাবকদের মোবাইল ফোনে। যাঁদের স্মার্ট ফোন নেই, তাঁদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে। বেসিক মোবাইল ফোনে অডিও ফাইল খুললেই শোনা যাবে ‘অ-এ অজগর আসছে তেড়ে’ কিংবা ইংরেজি বর্ণপরিচয়ের ‘এ ফর অ্যাপল, বি ফর ব্যাট’ অথবা ‘হাট্টিমাটিম টিম’-এর মতো শিশু শিক্ষার চিরাচরিত অধ্যায়গুলি।
দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, গোটা রাজ্যে ছয় বছর বয়স পর্যন্ত প্রায় ৭৫ লক্ষ শিশু অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলির সঙ্গে যুক্ত। তার মধ্যে তিন থেকে ছয় বছর বয়সের প্রায় ৩৫ লক্ষ শিশুর অভিভাবকদের কাছে এই অডিও ফাইল পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। দপ্তরের মন্ত্রী শশী পাঁজার কথায়, ‘ইতিমধ্যেই কয়েকটি জেলায় এই প্রয়াস শুরু হয়েছে। অভূতপূর্ব সাড়া মিলছে। শুধু বাবা-মায়েরাই নন, দাদু-ঠাকুমারাও উৎসাহিত হচ্ছেন অডিও ফরম্যাটে শিক্ষাদানের এই চেষ্টায়। পছন্দের ছড়া আর জিঙ্গলের মধ্যে দিয়ে লেখাপড়া ঝালিয়ে নিতে গিয়ে শিশু মন যদি কিছুটা হলেও চাঙ্গা হয়ে ওঠে, বিপর্যয়ের এই পর্বে সেটাই হবে আমাদের বড় প্রাপ্তি।’