করোনা যুদ্ধেও কেন্দ্রীয় বঞ্চনা বাংলাকে
সংক্রমণের নিরিখে দেশের মধ্যে ছ’নম্বরে পশ্চিমবঙ্গ। অথচ কেন্দ্রীয় অনুদান পাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে পিছিয়ে এরাজ্যই। আগে থাকা বাকি পাঁচটি রাজ্যই বাংলার তুলনায় কয়েকগুণ বেশি টাকা পেয়েছে। করোনা মোকাবিলায় রাজ্যগুলিকে এই অনুদান দিয়েছে মোদি সরকার। গত মার্চ মাসে সংক্রমণের গোড়ার দিকে রাজ্যগুলিকে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো গড়ার জন্য সর্বতোভাবে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু টাকা আসেনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চেয়েছিলেন ২৫ হাজার কোটি টাকা। তাও অনুদান নয়, প্রাপ্য বকেয়ার একটা অংশ। বারবার আবেদন জানিয়েছিলেন দিল্লির দরবারে। কিন্তু বৃথা চেষ্টা! আনলক-৩ পর্বের শেষ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের কপালে জুটেছে মাত্র ১২৫ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকা। তাও আবার দু’দফায়। একবার ৪৪ কোটি ৫৩ লক্ষ টাকা, পরের বার ৮১ কোটি ১৪ লক্ষ। যেখানে সংক্রমণের তালিকায় কোনওদিনই উপরের দিকে না থাকা কেরল পর্যন্ত পেয়েছে ৩৬০ কোটি ৮৮ লক্ষ টাকা। জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের (এনএইচএম) অধীনে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে পরিকাঠামো গড়তেই দেওয়া হয়েছে এই অনুদান।
করোনা নিয়ন্ত্রণে ইতিমধ্যেই প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা খরচ করে ফেলেছে রাজ্য সরকার। কেন্দ্রীয় অনুদানের প্রায় ২০ গুণ বেশি। এমনকী কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও বৈঠকেও সরাসরি এই প্রসঙ্গ টানেন মমতা। কিন্তু তখনও নীরবই ছিলেন নরেন্দ্র মোদি। ফলে রাজ্য সরকারকে হাত পাততে হয়েছে বেসরকারি সংস্থা, সাধারণ মানুষের কাছে। শুধু মানুষের কাছ থেকে প্রায় দেড়শো কোটি টাকার অনুদান এসেছে। কেন্দ্রীয় অনুদানের চেয়ে প্রায় ৫০ কোটি টাকা বেশি। কোষাগারের অর্থ ব্যয় হয়েছে ৮৭টি কোভিড হাসপাতালের পরিকাঠামো, ৫৮২টি কোয়ারেন্টাইন সেন্টার, ২০০টি সেফ হোম তৈরি করতে। সাধারণ মানুষের অনুদানে ২১ লক্ষেরও বেশি পিপিই কিট, প্রায় ১৭ লক্ষ এন-৯৫ মাস্ক, আড়াই লক্ষ লিটার স্যানিটাইজার কিনেছে সরকার। কেন্দ্রীয় অনুদানের পরিসংখ্যানে বঞ্চনার ছবিটা স্পষ্ট হওয়ায় ক্ষোভ বেড়েছে বিভিন্ন মহলে।
অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার দশটি রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ভিডিও বৈঠক করেন কেন্দ্রের ক্যাবিনেট সচিব রাজীব গউবা। পশ্চিমবঙ্গের পক্ষে বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা, স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম, স্বাস্থ্য অধিকর্তা এবং স্বাস্থ্য দপ্তরের অফিসাররা। করোনা মোকাবিলায় রাজ্য সরকার কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তা বিস্তারিত তুলে ধরেন মুখ্যসচিব। রাজ্যের কোভিড পেশেন্ট ম্যানেজমেন্ট পরিষেবা এবং টেলিমেডিসিন ব্যবস্থার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ক্যাবিনেট সচিব। তবে রাজ্যের মুত্যুহার নিয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। জাতীয় গড় যেখানে ১.৮ শতাংশ, সেখানে রাজ্যে মৃত্যুহার ২ শতাংশ। তা কমাতে উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন রাজীব গউবা। তবে মহারাষ্ট্রের (৩.৪ শতাংশ) মতো অন্য রাজ্যে মৃত্যুর হার আরও বেশি।