দেশ বিভাগে ফিরে যান

প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনার অন্তর্গত কোভিড বিমার টাকা পাচ্ছেন না আবেদনকারী বহু পরিবারই

August 31, 2020 | 2 min read

আশ্বাসই সার! প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনার অন্তর্গত কোভিড বিমার টাকা পাচ্ছেন না আবেদনকারী বহু পরিবারই। বিমার টাকা চেয়ে আবেদন করেছিল বাংলায় প্রয়াত ১১ জন করোনা যোদ্ধার পরিবার। এখনও পর্যন্ত তাঁদের এক পয়সাও দেয়নি কেন্দ্র। উল্টে ডাঃ বিপ্লব দাশগুপ্ত, ডাঃ শিশির মণ্ডলের মতো বাংলার প্রথম সারির কোডিড যোদ্ধাদের পরিবারের আবেদন খারিজ করে বলা হয়েছে, তাঁরা এই বিমা পাওয়ার ক্ষেত্রে ‘অযোগ্য’।

রাজ্যের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বিপরীত ছবি ধরা পড়েছে। সাতদিনের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষিত কোভিড বিমার ১০ লক্ষ টাকা পেয়ে গিয়েছে দুই প্রয়াত চিকিৎসকের পরিবার। কেন্দ্রের আচরণে ব্যাপক ক্ষুব্ধ বিপ্লববাবুর ছেলে পল্লব দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘বাবা ঝুঁকি নিয়ে সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোরে দিন-রাত কাজ করেছেন। অথচ তাঁর পরিবারকেই বিমার টাকা পাওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য বলছে কেন্দ্রীয় সরকার!’ প্রবীণ কোভিড যোদ্ধা তথা প্রয়াত অর্থোপেডিক সার্জেন ডাঃ শিশির মণ্ডলের ছেলে সোহম নিজেও একজন চিকিৎসক। তিনি সুর আরও চড়িয়ে বলেন, ‘কোভিড আমাদের রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করতে শিখিয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রের এই আচরণ দেখে সত্যিই মনে হচ্ছে, বাংলার মানুষ রাজনীতির বলি হচ্ছেন।’

গত ২৩ মার্চ করোনা-যুদ্ধে যুক্ত সর্বস্তরের স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিস, সাংবাদিক, আশা ও আইসিডিএস কর্মচারী সহ বিভিন্ন পেশার মানুষের জন্য কোভিড বিমা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। করোনা ঠেকানোর লড়াইয়ে নেমে আক্রান্তদের জন্য এক লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণও ধার্য করা হয়। সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত প্রয়াত ৩৩ জন কোভিড যোদ্ধার পরিবারকে বিমার অর্থসাহায্য দেওয়ার যোগ্য মনে করেছে রাজ্য। তাঁদের মধ্যে ২৮টি পরিবার ইতিমধ্যেই ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ পেয়ে গিয়েছে। ১ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন সংক্রামিত হওয়া দু’হাজার মানুষ। ১,৬০০ জন তা পেয়ে গিয়েছেন। সব মিলিয়ে কোভিড বিমা খাতে প্রায় ১৯ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে রাজ্যের।

অন্যদিকে, গত ১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ যোজনার আওতায় করোনা যুদ্ধে সামিল চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য ৫০ লক্ষ টাকার কোভিড বিমার ঘোষণা করেন নরেন্দ্র মোদী। ন’শোরও বেশি আবেদন জমা পড়ে। কাটছাঁট করে শেষপর্যন্ত ২০৭টি আর্জি গৃহীত হয়। এখনও পর্যন্ত মাত্র ৩২ জন করোনা যোদ্ধার পরিবার বিমার টাকা পেয়েছেন। ৬৬ জনের আবেদন ‘অযোগ্য’ তকমা দিয়ে খারিজ করা হয়েছে। ১০৪টি আবেদন খতিয়ে দেখার প্রক্রিয়া চলছে। যা নিয়ে ক্ষোভ জমছে গুজরাত সহ বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির অন্দরে। কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে সেকথা জানিয়েছে রাজ্যগুলি।

এই পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট, ক্ষতিপূরণের অঙ্ক কম হলেও কোভিড যোদ্ধাদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে সময় নেননি মমতা। প্রদত্ত মোট ক্ষতিপূরণের পরিমাণেও রাজ্য এগিয়ে। স্বাস্থ্যদপ্তরের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত বিমার টাকা পাওয়ার আবেদনে ছ’টি জরুরি কাগজ লাগে। ওই ১১ জনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রে কাছে সেসব জমা দিয়েছি আমরা। তাঁরা যে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইতে নেমে সংক্রামিত হয়ে মারা গিয়েছেন, সেই সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা স্বয়ং। তা সত্ত্বেও এতদিনে একজনও কেন টাকা পেলেন না, সেটা আশ্চর্যের!’ বিষয়টি নিয়ে ঘনিষ্ট মহলে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীও। রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) সুব্রত চট্টোপাধ্যায় অবশ্য সাফাই দিয়েছেন, ‘কোভিড যোদ্ধাদের জন্য বিমার ঘোষণা প্রথম প্রধানমন্ত্রীই করেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা প্রত্যাখ্যান করেন। উনি তো আয়ুষ্মান ভারত বিমার ক্ষেত্রেও বাধা দিয়েছেন।’ অজস্র আবেদন আসায়, তা যাচাই করতে সময় লাগছে বলেও দাবি তাঁর।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Pradhan Mantri Garib Kalyan Yojana, #covid insurance

আরো দেখুন