বাংলায় ১২ লক্ষেরও বেশি চাষি পেলেন কিষাণ ক্রেডিট কার্ড
করোনা আবহে হাজারও প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও মাত্র ৯০ দিনে রাজ্যের ১২ লক্ষের বেশি ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক ‘কিষাণ ক্রেডিট কার্ড’ (কেসিসি) গ্রাহক হিসেবে নথিভুক্ত হলেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রত্যক্ষ নজরদারি এবং অর্থমন্ত্রী ডঃ অমিত মিত্রের তত্ত্বাবধানে কেসিসি’তে এবার যে কৃষকদের নাম নিবন্ধীকৃত হয়েছে, তাঁরা কেউ আগে কোনওভাবেই কৃষি ঋণ নেননি। কেসিসি গ্রাহক হিসেবে নাম নথিভুক্ত হওয়ায় চলতি খরিফ মরশুমে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকরা উপকৃত হবেন বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। বৃহস্পতিবার স্টেট লেভেল ব্যাঙ্কার্স কমিটির (এসএলবিসি) ভার্চুয়াল বৈঠকে কেসিসি’তে নতুন নাম তালিকাভুক্ত হওয়ার বিষয়টি অনুমোদিত হয়েছে। কেসিসি গ্রাহক বৃদ্ধির এই কাজে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির মতোই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে রাজ্য সমবায় এবং আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাঙ্কগুলি।
অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের পৌরহিত্যে হওয়া এই বৈঠকে অর্থ, পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন, কৃষি, ক্ষুদ্র কুটির ও মাঝারি শিল্প দপ্তরের (এমএসএমই) অতিরিক্ত মুখ্যসচিব ও প্রধান সচিব সহ মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার প্রমুখ রাজ্যের তরফে উপস্থিত ছিলেন। এসএলবিসি’র পক্ষে রাজ্যের লিড ব্যাঙ্ক পিএনবি’র এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর, আরবিআই’এর পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান, নাবার্ড সহ বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বেসরকারি ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। এদিনের বৈঠকে রাজ্যের এমএসএমই এবং স্বনির্ভর গোষ্ঠী প্রকল্প (এসএইচজি) নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঠিক হয়েছে, এমএসএমই ক্ষেত্রে চলতি আর্থিক বছরে ৯০ হাজার কোটি এবং এসএইচজি ক্ষেত্রে ১৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হবে।
এসএলবিসি সূত্রে জানা গিয়েছে, গত পয়লা জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সময় অর্থাৎ মাত্র ৯০ দিনে নতুন করে মোট ১২.১১ লক্ষ কৃষককে কেসিসি গ্রাহক হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। অর্থদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্যাঙ্কগুলিকে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই সংখ্যাকে ২০ লক্ষে নিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ইতিমধ্যেই কেসিসি’র জন্য সাড়ে পাঁচ লক্ষ আবেদনপত্র ব্যাঙ্কের কাছে রয়েছে। এছাড়া আরও যে ২.৬ লক্ষ আবেদন নানা কারণে ব্যাঙ্কের তরফে বাতিল করা হয়েছিল, সেগুলি নতুন করে স্ক্রুটিনি করে ফের পাঠানোর জন্য জেলাশাসকদের বলা হয়েছে। ওই সূত্রটি জানিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী নিজে চাইছিলেন, গ্রামীণ অর্থনীতি বিকাশের লক্ষ্যে মৎস্যজীবী এবং পশুপালকদের কেসিসি’র আওতায় আনা হোক। তাঁর সেই ইচ্ছেকে সম্মান জানিয়েই মৎস্যজীবী এবং পশুপালকদের কেসিসি’র আওতায় আনা হয়েছে। অর্থদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য সমবায় ব্যাঙ্ক এই পর্বে ৩.০৫ লক্ষ এবং আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাঙ্কগুলি ৩.০৪ লক্ষ কেসিসি করিয়েছে। মোট ২২টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক বাকি ৫.৯৪ লক্ষ কেসিসি করেছে।
অর্থদপ্তরের ওই সূত্রটি আরও জানিয়েছে, চলতি আর্থিক বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে (এপ্রিল-জুন) এমএসএমই ক্ষেত্রে ১৫,৪০৪ কোটি টাকার ঋণ দেওয়া হয়েছে। বিপর্যয় পর্বে ঋণদানের ক্ষেত্রে এই পরিসংখ্যান গোটা দেশের মধ্যে রেকর্ড বলেই দাবি করছে সংশ্লিষ্ট মহল। এর মধ্যে বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলি মোট ঋণের প্রায় ৩৮ শতাংশ দিয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি দিয়েছে ৮৭৭১ কোটি টাকার ঋণ। এসএলবিসি সূত্রে জানা গিয়েছে, বিগত ২০১৯-২০ আর্থিক বছরে রাজ্যের মোট ৬.১৬ লক্ষ স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে মোট ৯,২২৫ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছিল। চলতি আর্থিক বছরে ঋণ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ১৫ হাজার কোটি টাকা করার জন্য রাজ্য সরকারের তরফে বলা হয়েছে। ঋণ নেওয়ার জন্য এখনও পর্যন্ত ৪,৮০০টি আবেদন জমা রয়েছে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের কাছে।