খাল সাফাইয়ে বাজিমাত, এবার হাওড়ায় ডেঙ্গু কম
বর্ষার মধ্যেই একাধিকবার খাল পরিষ্কারের সুফল মিলছে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে। হাওড়া শহর ও সংলগ্ন এলাকায় থাকা প্রায় ১০টি উল্লেখযোগ্য খাল উম-পুন ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ে একাধিকবার সাফাইয়ের কাজ করেছে হাওড়া পুরসভা। কোনও কোনও ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের সেচদপ্তরের সহায়তায় এই কাজ করা হয়েছে। এতে বর্ষার সময় নিকাশি পরিষেবার ক্ষেত্রে যেমন কিছু সুবিধা পাওয়া গিয়েছে, তেমনই এখনও পর্যন্ত হাওড়ায় ডেঙ্গু সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারার ক্ষেত্রেও সুবিধা মিলেছে বলে মনে করছেন পুরকর্তারা। রীতিমতো পে লোডার, ক্রেন কাজে লাগিয়ে হাওড়ার স্বর্ণময়ী খাল, পচা খাল, ড্রেনেজ ক্যানাল, বালিটিকুরি খালগুলি সম্প্রতি তৃতীয়বার সাফসুতরো করার কাজ শেষ হয়েছে। এর ফলে খালগুলির জল যেমন গতি পেয়েছে এবং কিছুটা স্বচ্ছ হয়েছে, তেমনই জমে থাকা জলে ডেঙ্গুবাহক এডিস ইজিপ্টাই মশার বংশবিস্তারের সুযোগ নষ্ট হয়েছে। ফলে খাল সংলগ্ন এলাকাগুলিতে যেখানে বিগত বছরগুলিতে মশার উপদ্রব এবং ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ বাড়ত, এবার তেমনটা দেখা যায়নি বলে দাবি পুরকর্তাদের। শনিবার হাওড়া পুরসভার এক পদস্থ কর্তা জানান, বালিটিকুরি খাল, হাওড়া ড্রেনেজ ক্যানাল এবং ব্রাঞ্চ টু ক্যানাল চলতি মরশুমে তৃতীয়বারের জন্য সাফাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে।
হাওড়া শহরের একটা বড় অংশের জল বেরোয় স্বর্ণময়ী খাল দিয়ে। এটিও চলতি মরশুমে তৃতীয়বারের জন্য সাফাই করা হয়েছে বলে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে। এমনিতে দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা আরও কিছুদিন থাকবে বলে আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন। তাই তৃতীয় দফার সাফাইয়ের পর এখন ভারী বৃষ্টি হলেও এলাকার জল তাড়াতাড়ি নামিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে খালের জলে গতি থাকার জন্য। ওই আধিকারিক জানান, গত বছর সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত হাওড়া পুরসভা এলাকায় যতজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন, এবার তা এখনও পর্যন্ত তিনভাগের একভাগ হয়েছে প্রায়। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে ডেঙ্গু নিয়ে প্রশাসনকে ব্যতিব্যস্ত হতে হলে কোনওদিকই ঠিকভাবে সামলানো যেত না। এই অবস্থায় ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে এ বছরের পরিসংখ্যান স্বস্তি দিচ্ছে প্রশাসনিক কর্তাদের।
অন্যান্য বছর সাধারণত বর্ষার আগে খালগুলির সংস্কার হতো একবার। কিন্তু বর্ষা চলাকালীনই আগাছা, কচুরিপানার জঙ্গলে ভরে যেত সেগুলি। আবর্জনা জমতে থাকত দুই পাড়ে। এবার পরপর তিনবার সাফাইয়ের ফলে দু’পাড়ে আবর্জনা যেমন জমেনি, তেমনই খালের জলে গতিও এসেছে। স্থির জল না হলে মশার লার্ভা সেভাবে বাড়তে পারে না। তাই মশাবাহিত রোগ ছড়ানোর ক্ষেত্রে সুফল মিলছে বলে দাবি প্রশাসনের। তাছাড়া বড় ক্রেন, পে লোডার জাতীয় যন্ত্র ব্যবহার করে সাধারণত এই খালগুলি সাফাই করা হতো না। এবার প্রথমবারের সাফাই কাজ করা হয়েছে বর্ষার মধ্যেই। লকডাউনের জন্য বর্ষার আগে সেভাবে কোনও কাজ করা যায়নি। জুন মাসের শুরুর দিকে খালগুলি এ বছর প্রথমবার সাফাই করা হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে।