কলকাতা বিভাগে ফিরে যান

দর্শকদের বিনোদনে প্রস্তুত শহরের সেরা পুজোগুলি

September 24, 2020 | 4 min read

শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাব

দক্ষিণ কলকাতার পুজোকে কার্যত একাই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয় লেকটাউনের শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাব। তাঁদের চোখ ধাঁধানো মণ্ডপসজ্জা দেখতে রীতিমতো ভিড় এবং ঠেলাঠেলি প্রতি বছরের চিত্র।

থিম: এই বছর শ্রীভূমির মণ্ডপ হচ্ছে কেদারনাথের মন্দিরের আদলে। তবে মণ্ডপের অন্দরসজ্জা হচ্ছে অন্যরকমের, যার সঙ্গে কেদারনাথের মিল খুব একটা নেই। থাকবে নতুন চমক। প্রতিমাশিল্পী প্রদীপরুদ্র পাল। প্রতিমাকে দেখা যাবে স্বর্ণ আভরণে। চন্দননগরের আলো দিয়ে সাজানো হবে রাস্তা। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে মণ্ডপসজ্জা, প্রতিমা আর পুষ্পাঞ্জলি দেখা যাবে। কেদারনাথ থিমের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে বাবা ভোলানাথের প্রসাদ হিসেবে ১ লক্ষ পেড়া তৈরি হচ্ছে। এবার থিম সং গেয়েছেন অভিজিৎ। সঙ্গে গলা মেলাবেন মুম্বইয়ের অন্য অনেক নামী শিল্পী। ভিডিওতে থাকবেন টলিউডের কিছু সুপারস্টার।

সতর্কতামূলক ব্যবস্থা: এই পুজোর প্রধান উদ্যোক্তা মন্ত্রী সুজিত বসু বলছিলেন, ‘এই বছর ক্লাবের তরফে এক লক্ষ মাস্ক এবং স্যানিটাইজার তৈরি করা হচ্ছে। সেগুলো প্রায় ৩০০টি পুজো কমিটিকে দেওয়া হবে। এছাড়া এই অঞ্চলের অন্যান্য পুজো কমিটিগুলোকে থার্মাল গান দেওয়া হচ্ছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া হচ্ছে না। সকলের জন্য ১০ হাজার খাবারের বক্স তৈরি করা হবে।’


বাদামতলা আষাঢ় সংঘ

রাসবিহারী মোড় থেকে চেতলা ব্রিজ, পুজোর সময় প্রত্যেক বছরই থাকে দর্শকদের লম্বা লাইন। তবে এই বছর পরিস্থিতি ভিন্ন। করোনা পরিস্থিতির জন্য অতিরিক্ত ভিড় এড়ানোর জন্য এবং আর্থিক দিকের কথা চিন্তা করে এবার বাদামতলা আষাঢ় সংঘের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে ৬৬ পল্লি ও কালীঘাট নেপাল ভট্টাচার্য স্ট্রিট পুজো কমিটি।


থিম: তিনটি ক্লাব একত্রে বিশ্বখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিত্ রায়কে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে। বাদামতলার থিম ‘পথের পাঁচালি’, ৬৬ পল্লিতে ‘অপরাজিত’ এবং নেপাল ভট্টাচার্য স্ট্রিটে ‘অপুর সংসার’ তুলে ধরা হচ্ছে। নেপাল ভট্টাচার্য স্ট্রিটে প্রবেশের মুখেই পেল্লাই সাইজের গেট তৈরি হচ্ছে। দুর্গা প্রতিমা তৈরি হচ্ছে ‘পথের পাঁচালি’র দুর্গার আদলে। ‘মৃদুল পাঠকের অনুপ্রেরণায় পুরো কাজটা হচ্ছে। পুরো প্যান্ডেলই উন্মুক্ত। সমস্ত রকমের স্বাস্থ্যবিধি মেনে পুজো হবে,’ বলছিলেন পুজো কমিটির তরফে কপিল দেব।

সতর্কতামূলক ব্যবস্থা: এক দিকে শুধুমাত্র পথচারীদের জন্য মণ্ডপে প্রবেশের ব্যবস্থা থাকছে। থাকবে স্যানিটাইজিং টানেল। যাঁরা গাড়ি নিয়ে যাবেন, তাঁদের জন্য থাকবে আলাদা ব্যবস্থা।

নাকতলা উদয়ন সংঘ

দক্ষিণ কলকাতার দুর্গাপুজোর অন্যতম আকর্ষণ নাকতলা উদয়ন সংঘ। এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাম।

থিম: এই বছরের থিম ‘তরঙ্গ’। এই কঠিন পরিস্থিতি থেকে কীভাবে আমরা মুক্তি পেতে পারি, তার একটা পথ দেখানোর চেষ্টা হবে। দুর্গা আরাধনায় শঙ্খধ্বনির মাধ্যমে একটা শুভ বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। পরিকল্পনা এবং প্রতিমা তৈরির দায়িত্বে রয়েছেন শিল্পী ভবতোষ সুতার। আবহসঙ্গীত তৈরি করছেন সঙ্গীতশিল্পী কবীর সুমন।

সতর্কতামূলক ব্যবস্থা: প্যান্ডেলের মধ্যে যাতে খুব বেশি ভিড়ভাট্টা না হয় সেটা খেয়াল রাখা হবে। সেই কথা মাথায় রেখেই মণ্ডপের ডিজাইন করা হচ্ছে।

সুরুচি সংঘ

স্বকীয়তার মাধ্যমে প্রতি বছর দর্শকের কাছে নিউ আলিপুরের সুরুচি সংঘ নিজেই হয়ে উঠেছে একটা ব্র্যান্ড। প্রধান পৃষ্ঠপোষক রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস।

থিম: এবারের থিম ‘মানুষের পুজো’। সঙ্গে ট্যাগলাইন, ‘এবার উত্সব নয়, হোক মানুষের পুজো’। ক্লাবের তরফে স্বরূপ বিশ্বাস বলছিলেন, ‘এই বছর মানুষের সামনে দু’টো চ্যালেঞ্জ। একটা বেঁচে থাকার লড়াই এবং পরিবারকে বাঁচিয়ে রাখার লড়াই। কোভিড এবং উম-পুন এই দুইয়ের সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে। পুজোর সঙ্গে যুক্ত মানুষদের আমরা কীভাবে সাহায্য করতে পারি, সেই চেষ্টাই করছি।’ এই পুজোর থিম এবং প্রতিমা তৈরির দায়িত্বেও রয়েছেন শিল্পী ভবতোষ সুতার।

সতর্কতামূলক ব্যবস্থা: রাজ্য সরকারের নির্দেশ মেনে সবরকম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আহিরীটোলা সর্বজনীন

কে বলে থিম শুধুমাত্র দক্ষিণ কলকাতাতেই হয়! উত্তরের আহিরীটোলার মণ্ডপসজ্জাও দেখতে ভিড় করেন অত্যুৎসাহী দর্শক।

থিম: তবে এবার কোভিড পরিস্থিতিতে কোনও থিম হচ্ছে না। ‘আমাদের ৮১ বছরের পুজো। নিশ্চয়ই একটা নান্দনিক দৃষ্টিভঙ্গি রেখে মণ্ডপের সজ্জা এবং মায়ের মূর্তি তৈরি করব। সেটা আশা করি দর্শনার্থীদের আকর্ষণও করবে। আমাদের কাছে সরাকারি গাইডলাইন এসে গেলেই কোন পথে কাজকর্ম করব, সেই বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারব,’ বলছিলেন ক্লাবের অন্যতম পুজো উদ্যোক্তা দুলাল শীল।

চেতলা অগ্রণী

থিমের পুজোতে চেতলা অগ্রণী প্রত্যেক বছরই সেরা পুজোর দৌড়ে জায়গা করে নেয়। মূল উদ্যোক্তা কলকাতার মহানাগরিক ফিরহাদ (ববি) হাকিম।

থিম: এবারে এমন একটি মণ্ডপ তৈরি করা হচ্ছে, যার ফলে মানুষ বাইরে থেকে মণ্ডপ এবং প্রতিমা দর্শন করতে পারেন। একদমই কোনও প্যান্ডেল নয়, একেবারে ঠাকুরঘরের মতো একটা মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতেও আশার আলো মনের মধ্যে জাগিয়ে রেখে সমাধানের রাস্তা খোঁজা, এই বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছে এই পুজো কমিটি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা ‘দুঃসময়’-এর কথা মাথায় রেখেই মণ্ডপ পরিকল্পনা করেছেন শিল্পী অনির্বাণ দাস।

সতর্কতামূলক ব্যবস্থা: পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার সময় যাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সবাই দাঁড়াতে পারেন, সেই কথা মাথায় রেখে খানিক বড় জায়গায় পুষ্পাঞ্জলির ব্যবস্থা করা হবে। মণ্ডপ তৈরিতেও খুব বেশি সংখ্যক লোক নিয়োগ করা হচ্ছে না।

সল্টলেক এফডি ব্লক

ডিজিটাল ইন্ডিয়া ক্যাম্পেনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এই বছরের দুর্গাপুজোতে সল্টলেক এফডি ব্লক একেবারে ডিজিটাল পন্থা অবলম্বন করছে। এই ক্লাবের খুঁটি পুজোও হয়েছে ডিজিটাল মাধ্যমে। তবে এই বছরও থিমের কোনও খামতি থাকছে না। মানুষের জন্য বিনোদনের পসরা তাদের কাছে মজুত রয়েছে।

থিম: দুর্গাপুজোর চারটে দিন, কোনও মাথাভারী বিষয়বস্তু নিয়ে ভাবতে নারাজ এখানকার কর্মকর্তারা। এই বছরের থিম ‘দ্য জাঙ্গল বুক’। মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে বিখ্যাত এই ছবির আদলে। প্রতিমা শিল্পী মিন্টু পাল। এই পুজোর বয়স ৩৬ বছর। শিশু-কিশোরদের কথা মাথায় রেখেই এই থিমের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

সতর্কতামূলক ব্যবস্থা: সল্টলেকের পুজো কমিটিগুলোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য চারদিন ধরে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর একসঙ্গে বসে পুজোর দ্বিপ্রাহরিক আহার। এই বছর সামাজিক দূরত্ব মানার জন্য, সেসব বাতিল করা হয়েছে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও সেরকমভাবে কিছু হবে না। যা অনুষ্ঠান হবে সবই ডিজিটাল।

টালাপার্ক প্রত্যয়

বিগত কয়েক বছরে থিমের মাধ্যমে নামজাদা ক্লাবগুলোকে পিছনে ফেলে উঠে এসেছে শ্যামবাজারের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের টালাপার্ক প্রত্যয়। ঝুলিতে আসতে শুরু করেছিল একাধিক পুরস্কার। এবার আর কোনও আড়ম্বরে যাচ্ছে না এই ক্লাব। মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে, মানুষের জন্য এই বছর তাদের পুজো।

থিম: থিম ‘লোকহিত’। করোনা আবহে সমাজ সেবাকেই মূলমন্ত্র করে পুজো করার অঙ্গীকার নিয়েছে এই ক্লাব। দেবীর ত্রিনয়নে চক্ষুদানের সঙ্গেই এই উদ্যোগের সূচনা হল। মহালয়ার দিন উদ্বোধন হয় স্যানিটাইজার গাড়ি। অঞ্চলের রাস্তা বা বাড়ি স্যানিটাইজ করতে এই গাড়ি ব্যবহার হচ্ছে। সমগ্র পরিকল্পনায় শিল্পী সুশান্ত পাল।

সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার

মধ্য কলকাতার ঐতিহ্যবাহী ক্লাব হল সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার। সমসাময়িক বিষয়কে পুজোর থিমে তুলে ধরা এই কমিটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

থিম: বদ্রীনাথের আদলে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ। পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা প্রদীপ ঘোষের কথায়, ‘মা দুর্গা যদি আমাদের বাঁচায়, আমাদের মারবে কে?’ প্রতিমাশিল্পী মিন্টু পাল।

বেহালা নূতন সংঘ

বেহালার এই ক্লাব থিমের পুজো করে দর্শকদের তালিকায় প্রথম সারিতে উঠে এসেছে বেহালা নূতন সংঘ।

থিম: ‘নগর দর্শন’। তবে থিম নিয়ে এখনই সবকিছু বলতে চাইছে না ক্লাব। ক্যানভাসে কাপড়ের উপর আঁকা হবে ছবি। বাঁশ এবং লোহা দিয়ে গোটা মণ্ডপ সাজানো হবে। গোটা মণ্ডপসজ্জা এবং প্রতিমার দায়িত্বে রয়েছেন শিল্পী সনাতন দিন্দা।

সতর্কতামূলক ব্যবস্থা: দর্শনার্থীদের জন্য স্যানিটাইজিং টানেল থাকবে। মণ্ডপের ভিতরে কারও প্রবেশাধিকার থাকবে না। এমনভাবেই গোটা বিষয়টা সাজানো হচ্ছে, যার ফলে দর্শকরা বাইরে থেকেই প্রতিমা দর্শন করতে পারবেন। দর্শনার্থীর থার্মাল গানে তাপমাত্রা মেপে নেওয়ারও ব্যবস্থা থাকছে। প্যান্ডেল নিয়মিত স্যানিটাইজ হবে।

সল্টলেক এ ই ১ ব্লক

প্রতি বছরই নতুন থিমের মাধ্যমে দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সিদ্ধহস্ত হয়ে উঠছে সল্টলেকের এই ক্লাব।

থিম: এই বছরের থিমের নাম ‘বন্ধন’। ‘লকডাউনের সময় মানুষ ঘরে বন্দি ছিল। যার ফলে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে অনেকেরই যোগাযোগ কমেছে। আনলক হওয়ার ফলে মানুষ আবার নতুন করে বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছে। থিমের দায়িত্বে পার্থ ঘোষ এবং সিদ্ধার্থ ঘোষ। ঠাকুর তৈরি করছেন নব পাল।

সতর্কতামূলক ব্যবস্থা অঞ্জলিতে ফুল ব্যবহার করা হবে না। প্যান্ডেলের ভিতরে স্যানিটাইজিং গান থাকছে। প্যান্ডেলের বাইরে থেকেও ঠাকুর দেখার ব্যবস্থা থাকবে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#durga Pujo, #Kolkata

আরো দেখুন