রাজ্য সরকারকে বকেয়া ডিএ মেটানোর নির্দেশ স্যাটের
রাজ্য সরকারি কমীদের বকেয়া মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারকে মিটিয়ে দিতে বলল স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল (স্যাট)। ওইদিনই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছে স্যাট। সরকার এব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেয়, তা দেখে ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত নির্দেশ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে বিচারপতি রঞ্জিত বাগ ও সুবেশ দাসের বেঞ্চ।
কেন্দ্রীয় সরকারের হারে ডিএ পাওয়া নিয়ে গত ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কর্মী সংগঠন কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজের আইনি লড়াই চলছে। প্রথমে স্যাট এই মামলায় জানিয়েছিল, ডিএ পাওয়া সরকারি কর্মীদের অধিকারের মধ্যে পড়ে না। এই রায়ের বিরুদ্ধে কর্মী সংগঠনটি হাইকোর্টে যায়। হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ২০১৮ সালের ৩১ আগস্ট রায় দেয়, ডিএ রাজ্য সরকারি কর্মীদের অধিকার। তবে কী হারে তাঁরা ডিএ পাবেন, সেটা নির্ধারণ করার দায়িত্ব স্যাটকেই দেয় হাইকোর্ট। এরপরও একইসঙ্গে স্যাট ও হাইকোর্টে এই মামলার দীর্ঘ শুনানি চলে। গত বছর ২৬ জুলাই মামলার রায় দেয় স্যাটের এই বেঞ্চ। কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্সের ভিত্তিতে কেন্দ্র নির্ধারিত হারে বকেয়া ডিএ দেওয়ার পক্ষে রায় দেওয়া হয়। এতে বলা হয়েছিল, আগামী তিন মাসের মধ্যে কীভাবে রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া মহার্ঘ ভাতা মেটানো হবে, তা সরকার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানাবে। আগামী ৬ মাসের মধ্যে বা ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হওয়ার আগে ওই বকেয়া ডিএ কর্মীদের মিটিয়ে দিতে হবে। কিন্তু কনফেডারেশন অভিযোগ করে, ওই রায় সত্ত্বেও সরকার কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।
এই মর্মে কয়েক মাস আগে সরকারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের হয় স্যাটে। পাশাপাশি সরকারের তরফেও রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন জমা পড়ে। সরকারের আবেদনটির উপর বেশ কয়েক মাস ধরেই শুনানি চলছিল। কিন্তু গত ৮ জুলাই স্যাট রাজ্য সরকারের আবেদনটি খারিজ করে দেয়। অর্থাৎ, পুনর্বিবেচনা হবে না। আদালত অবমাননার মামলাটির প্রথম শুনানি ছিল বুধবারই। করোনা পরিস্থিতির জন্য পুরোটাই হয় ‘ভার্চুয়াল’। অর্থাৎ, অনলাইনে। এই মামলার মূল আবেদনকারী কনফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত রাজ্য কর্মীদের কেন্দ্রীয় হারে ডিএ বকেয়া রয়েছে। প্রসঙ্গত, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে বেতন হার বৃদ্ধি হয় রাজ্য কর্মীদের। কিন্তু এখন রাজ্য সরকারি কর্মীদের বেতনের সঙ্গে কোনও ডিএ নেই।
মামলা চলার সময় স্যাটে এবং হাইকোর্টেও রাজ্য সরকারের পক্ষে বারবার কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়ার ক্ষেত্রে আর্থিক অসুবিধার কথা তোলা হয়েছিল। স্যাটের চূড়ান্ত নির্দেশের পর হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে যাওয়ার সুযোগ থাকে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সরকারের তরফে হাইকোর্টে কোনও আইনি তৎপরতা নেই বলে কনফেডারেশনের পক্ষে দাবি করা হয়েছে। এদিকে কর্মী সংগঠন কো-অর্ডিনেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজয়শঙ্কর সিনহা জানিয়েছেন, আন্দোলনের মাধ্যমে কর্মীদের দাবি আদায় করতে হবে। তৃণমূল প্রভাবিত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের প্রবীণ নেতা মনোজ চক্রবর্তীও বকেয়া ডিএ মেটানোর দাবি করেছেন।