বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

সিপিএমের মিথ্যা প্রচারের বলি হয়েছিলেন প্রফুল্ল সেন 

September 25, 2020 | 2 min read

কানা বেগুনের সঙ্গে কানা অতুল্য নাম জুড়ে একসময় শ্লোগান দিত মার্ক্সবাদী কম্যুনিস্ট পার্টি। আর দলীয় প্রচারের জোরে প্রাক্তন কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল চন্দ্র সেনকে স্টিফেন হাউসের মালিক বানিয়ে দিয়েছিল। আর প্রফুল্ল চন্দ্র সেন রাজনীতি উত্তর জীবনে একটি ছোট্ট ফ্ল্যাটে কালাতিপাত করেছেন।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৮৪ সালে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে পরাস্ত করার পর দেখা করতে গিয়েছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লচন্দ্র সেনের সঙ্গে। সকলে জেনেছিলেন মৃত্যুপথযাত্রী সেই অশীতিপর বৃদ্ধ ঠিক কী ভাবে তাঁর জীবনযাত্রা নির্বাহ করেন। সহজ সরল অনাড়ম্ভর গান্ধীবাদী এক নেতা ছিলেন প্রফুল্ল সেন। এমন অবস্থা ছিল সে সময় যে চিকিত্‌সার সমস্ত খরচও তাঁর নিজের পক্ষে বহন করা সম্ভব হচ্ছিল না। 

অথচ এই প্রফুল্ল সেনের বিরুদ্ধে রাজ্যের বামপন্থীরা একসময়ে প্রচার চালান, তিনি না কি স্টিফেন হাউস-ই কিনে নিয়েছেন। সে অভিযোগ শেষ পর্যন্ত প্রমাণ হয়নি। কিন্তু আরামবাগের মতো নির্বাচন কেন্দ্রে ১৯৬৭-র ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি আটশো ভোটে বাংলা কংগ্রেস সভাপতি অজয় কুমার মুখোপাধ্যায়ের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন।

কলকাতার কোনও বাজারে না কি সে দিন কাঁচকলা পাওয়া যায়নি। দু’গুণ দামে কাঁচকলা বিক্রি হয়েছিল। কারণ, কলকাতার তীব্র মূল্যবৃদ্ধির বাজারে তিনি কাঁচকলা সস্তা বলে সেটি খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন মানুষকে। তাতে বাংলার আমজনতার সমাজে ব্যাপক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হয়।.

১৮৯৭ সালের ১০ই এপ্রিল বর্তমান বাংলাদেশের খুলনা জেলার সেনহাটি গ্রামে প্রফুল্ল চন্দ্র সেনের জন্ম হয়৷ তাঁর পিতার নাম গোপালচন্দ্র সেন। প্রফুল্ল চন্দ্রের ছেলেবেলার বেশিরভাগটাই কাটে বিহারে। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা বিহারের বিদ্যালয় থেকেই শুরু হয় এবং দেওঘরের আর.মিত্র ইন্সটিটিউশন থেকে তিনি ম্যাট্রিক পাশ করেন। তারপর তাঁর পিতা বদলি হয়ে কলকাতায় চলে এলে প্রফুল্ল চন্দ্র সেন কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে অনার্স নিয়ে বিএসসি পাশ করেন।

প্রফুল্ল চন্দ্র সেনের কর্মজীবন শুরু হয় একটি অ্যাকাউন্টিং ফার্মে যোগদান করে৷ গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পরই তিনি তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন৷ এরপর তিনি আর্টিকেল ক্লার্ক হওয়ার উদ্দেশ্যে সুদুর ইংল্যান্ডে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু ১৯২০ সালে কংগ্রেস পাটির কলকাতা অধিবেশনে মহাত্মা গান্ধীর ভাষণ শুনে তাঁর মত পরিবর্তন হয়৷ প্রফুল্ল চন্দ্র সেন বিদেশে পাড়ি দেওয়ার পরিকল্পনা ত্যাগ করেন৷ 

ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে গণ-অসহযোগ আন্দোলনে গান্ধীর আহ্বানে তিনি সাড়া দিয়ে স্বদেশী এবং সত্যাগ্রহ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য তিনি ১৯৩৩ সালে হুগলী জেলার আরামবাগের একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে চলে আসেন। গান্ধীজি তাঁকে প্রবলভাবে প্রভাবিত করেছিলেন। তিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন৷ 

স্বাধীনতা সংগ্রামে যুক্ত থাকার দরুন এবং ব্রিটিশ বিরোধী কর্মকান্ডের জন্য ১৯৩০ সাল থেকে ১৯৪২ সাল পর্যন্ত বহুবার তিনি কারাগারে বন্দী ছিলেন। এমনকি তিনি তাঁর শ্রীরামপুরের বাড়িটি কংগ্রেসের কার্যালয় হিসাবে ব্যবহারের জন্য ছেড়ে দিয়েছিলেন। আজীবন অকৃতদার এই মানুষটি খুবই সাধারণ জীবন যাপন করতেন। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ১৯৪৪ সালে তিনি আরামবাগ থেকে বেঙ্গল অ্যাসেম্বলির বিরোধী দলের নেতা হিসেবে নির্বাচিত হন৷ 

ভারতবর্ষ স্বাধীনতা লাভ করার পর ১৯৪৮ সালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায় তাঁকে মন্ত্রীসভায় কৃষিমন্ত্রী হিসেবে নিষুক্ত করেন৷ তিনি বিধানচন্দ্র রায়ের উপমন্ত্রী হিসেবেও কাজ করেছেন৷ ১৯৬২ সালে বিধানচন্দ্র রায়ের মৃত্যু হলে প্রফুল্ল চন্দ্র পশ্চিমবঙ্গের তৃতীয় মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন৷ মুখ্যমন্ত্রীত্ব গ্রহণের তিন বছর পরই রাজ্যে মারাত্মক ভাবে খাদ্যের ঘাটতি দেখা দিলে তিনি রাজ্যে খাদ্য-শস্যের রেশনিং ব্যবস্থা চালু করেন৷ 

তাঁর শুরু করা রেশনিং ব্যবস্থা আজও চলে আসছে। ১৯৬৭ সালের নির্বাচনে আরামবাগ থেকে কংগ্রেস প্রার্থী হয়ে তিনি ভোটে লড়তে গিয়ে আর এক গান্ধীবাদী নেতা বাংলা কংগ্রেসের প্রার্থী অজয় মুখোপাধ্যায়ের কাছে মাত্র ৮২০ ভোটে পরাজিত হন৷ এরপর যদিও তিনি পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় নির্বাচিত হন কিন্তু কোনভাবেই আর উচ্চপদে আসীন হতে পারেননি। ১৯৯০ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর প্রফুল্ চন্দ্র সেনের মৃত্যু হয়।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Prafulla Sen

আরো দেখুন