বাংলা হবে বিশ্ব সেরা – ঐতিহ্যবাহী শাড়ির জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির চেষ্টা রাজ্যের
বাংলার ঐতিহ্যবাহী শিল্পের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে ফের আসরে নামল রাজ্য সরকার। মসলিনের পর এবার তিনটি শাড়ির জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন বা জিআই আদায়ের জন্য আবেদন করল তারা। তালিকায় রয়েছে টাঙ্গাইল, কড়িয়াল ও গরদ। পাশাপাশি শান্তিপুরের শাড়ির লোগোর জন্যও আবেদন করা হয়েছে। তবে মসলিনের জিআই আবেদন এখনও বিবেচনাধীন। এখন সব ক’টি শাড়ির স্বীকৃতি পাওয়ার অপেক্ষায়। আর তা মিলে গেলে বাংলার ঐতিহ্যবাহী শাড়ির বিপণন বাড়বে। উপকৃত হবেন হাজার হাজার তাঁতশিল্পী। এমনটাই দাবি সরকারি কর্তাদের।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দপ্তরের সহযোগিতায় টাঙ্গাইল সহ অন্যান্য শাড়ির জিআইয়ের জন্য আবেদন করেছে রাজ্যের বস্ত্রদপ্তর। ডিরেক্টর অব টেক্সটাইলস দাবি করেছে, টাঙ্গাইল এ রাজ্যের সম্পদ। বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের সঙ্গে এর বৈচিত্রগত পার্থক্য বিস্তর। একসময় তাঁতের শাড়িতে নকশা তোলার একচেটিয়া মুন্সিয়ানা দেখাতেন বাংলাদেশের বসাকরা। টাঙ্গাইলে নকশা তোলার পুরোধা বলা হয় মঙ্গল বসাককে। বাংলাদেশের সেই শাড়ির নকশা তোলা শুরু হয় কলকাতার বরানগরেও। পরবর্তীকালে যখন দেশভাগ হয়, তখন বসাকরা এপার বাংলায় চলে আসেন। তাঁরা তাঁতের কাজ শুরু করেন পূর্ব বর্ধমানের ধাত্রীগ্রাম-সমুদ্রগড় অঞ্চলে। পরে পরে তাঁরা ছড়িয়ে পড়েন দাঁইহাট, ফুলিয়াতেও। পরবর্তীকালে ঢাকার জামদানি শাড়ির মতো নকশা এদেশে আসার পর, সেই নকশা শাড়িতে তুলতে চেষ্টা শুরু করেন ফুলিয়ার তাঁতিরা। জামদানির সূক্ষ্ম সুতোর কাজ ছিল বেশ কঠিন। অবশেষে টাঙ্গাইলের মধ্যেই সূক্ষ্ম কারুকাজে অভ্যস্ত হন তাঁতিরা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেনারসি, বোমকাই বা বালুচরির নকশাও উঠে আসে টাঙ্গাইলে। এই ‘হাইব্রিড’ নকশাদার শাড়িই ধীরে ধীরে বাংলার নিজস্ব সম্পদ হয়ে ওঠে।
মৃত্যুঞ্জয় সরকার নামে এক শিল্পী ছিলেন গরদ শাড়ির প্রথম কারিগর। মুর্শিদাবাদের মির্জাপুরে তিনি এই শাড়ির প্রচলন করেন। মুর্শিদাবাদের যে সিল্ক ইংরেজরা আসার অনেক আগে থেকেই বিশ্ববন্দিত, তাকে নতুন করে চেনায় মির্জাপুর। এখনকার বেঙ্গালুরুর মালবেরি সিল্কের কদর সর্বত্র। তার সঙ্গে মুর্শিদাবাদি সিল্কের মিশেলে বোনা হয় গরদ। মুর্শিদাবাদের সিল্কও অবশ্য মালবেরি প্রজাতিরই। স্বতন্ত্র রং, কাগজের মতো মোলায়েম জমি এবং কারুকাজের উপর নির্ভর করে কাপড় ভাঁজ করার নিজস্ব কৌশলই গরদের অনন্য বৈশিষ্ট্য। বাংলার রাজ্যপাল পদ্মজা নাইডু নাকি গরদ ছাড়া কিছুই পরতেন না। তাই গরদের নাম একসময় লোকমুখে ‘পদ্মজা শাড়ি’ হয়ে উঠেছিল। ইন্দিরা গান্ধীও এই শাড়ির জন্য মুখিয়ে থাকতেন।
কড়িয়াল। বাংলার নিজস্ব ঘরানার আরও একটি সিল্ক শাড়ি। যার স্বকীয়তা এর শৈল্পিক গড়নে। লাল কিংবা কালো পাড়ের শাড়ির জমি ধবধবে সাদা। এটিও বাংলা ও বেঙ্গালুরুর মালবেরি সিল্কের মিশ্রণ। এই শাড়ির ভাঁজ এবং শুকনোর পদ্ধতি সর্বস্তরে আলাদা। বাংলার এই শাড়ির কদর সর্বত্র। রাজ্য সরকার বলছে, জিআই স্বীকৃতি পেলে শাড়িগুলির রপ্তানি আরও বাড়ানো সম্ভব হবে। দামও মিলবে ভালো। তাই শেষ হাসি হাসবেন তাঁতিরাই।