নতুন আক্রান্ত ৪ হাজারের নীচে, স্বস্তি বাংলায়
কাকতালীয় হলেও উমার বিদায়ের পরে রাজ্যে এক দিনে নতুন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা নামল ৪ হাজারের নীচে। টানা এক সপ্তাহ পর। টেস্টের সংখ্যাও আগের দিনের থেকে সামান্য কম। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই নিম্নমুখী পজিটিভিটি রেট বা সংক্রমণের হার। একই সঙ্গে সুস্থতার হার বেড়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি সদর্থক হলেও সাবধানতায় খামতি রাখতে চায় না প্রশাসন। চিকিৎসক-বিশেষজ্ঞরাও এই প্রবণতায় এখনই আশাবাদী হতে নারাজ। ফের সংক্রমণ বাড়তে পারে, এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তাঁরা।
গত ২০ অক্টোবর প্রথম রাজ্যে এক দিনে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ৪ হাজার ছাড়িয়েছিল। টানা এক সপ্তাহ সেই প্রবণতা ছিল। তবে মঙ্গলবার প্রকাশিত স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী রাজ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৯৫৭ জন। সোমবারও এই সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ১২৭। রাজ্যে এক দিনে সর্বোচ্চ সংক্রমণ ছিল ২২ অক্টোবর, ৪ হাজার ১৫৭। এই নিয়ে রাজ্যে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হল ৩ লক্ষ ৫৭ হাজার ৭৭৯। গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন কলকাতায়, ৮৮৪ জন। উত্তর ২৪ পরগনায় আক্রান্ত ৮৭৫।
শুধু নতুন আক্রান্তের সংখ্যা কমলেই যে সংক্রমণ কমেছে, এমনটা বলা যায় না। কারণ টেস্ট কম হলে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা কমতেই পারে। ফলে সংক্রমণের প্রবণতা বুঝতে পজিটিভিটি রেট বা সংক্রমণের হার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোনও একটি এলাকায় ২৪ ঘণ্টায় যত জনের কোভিড টেস্ট করা হয় এবং তার মধ্যে প্রতি ১০০ জনে যত জনের কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ আসে, তাকেই ‘পজিটিভিটি রেট’ বা সংক্রমণের হার বলা হয়। মঙ্গলবারের বুলেটিন অনুযায়ী এই সংক্রমণের হার ৯.৪০ শতাংশ। আগের দিন সোমবার এই হার ছিল ৯.৭৬ শতাংশ। গত কয়েক দিন ধরে সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর মঙ্গলবার তা কমে যাওয়া সদর্থক ইঙ্গিত বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সোমবারের তুলনায় মঙ্গলবার নমুনা পরীক্ষা শতাধিক কম হলেও নতুন আক্রান্তের সংখ্যা তার চেয়ে বেশি হারে কমেছে। এ দিনের বুলেটিন অনুযায়ী রাজ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় টেস্টের সংখ্যা ৪২ হাজার ১০৮। সোমবার এই সংখ্যা ছিল ৪২ হাজার ২৩১।
হতে পারে সাময়িক। তবু মৃতের সংখ্যাতেও সামান্য স্বস্তি দিয়েছে রাজ্য প্রশাসনকে। মঙ্গলবারের বুলেটিন অনুযায়ী রাজ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় কোভিডের বলি হয়েছেন ৫৮ জন। সোমবারের চেয়ে এক জন কম। এই নিয়ে রাজ্যে মোট করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ৬ হাজার ৬০৪। রাজ্যের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে কলকাতায়— ১৪ জনের। উত্তর ২৪ পরগনায় মারা গিয়েছেন ১১ জন। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৬ জন, হাওড়ায় ৫ জন, পূর্ব মেদিনীপুরে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সুস্থতার হারেও কিছুটা স্বস্তির রেখা। রবিবার থেকে কমছে সুস্থতার হার। সেই প্রবণতা মঙ্গলবারও। এ দিনের বুলেটিন অনুযায়ী সুস্থতার হার ৮৭.৭৬ শতাংশ। সোমবার এই হার ছিল ৮৭.৬৪ শতাংশ। রাজ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৩ হাজার ৯৭১ জন। এ পর্যন্ত রাজ্যে মোট সুস্থ হয়ে ওঠা করোনা রোগীর সংখ্যা ৩ লক্ষ ১৪ হাজার ৩ জন। এই মুহূর্তে রাজ্যে সক্রিয় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩৭ হাজার ১৭২।
কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা বাদ দিলে রাজ্যের মধ্যে দুই শতাধিক মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এমন জেলার সংখ্যা মাত্র একটি— দক্ষিণ ২৪ পরগনা। এই জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে কোভিড পজিটিভ রিপোর্ট ধরা পড়েছে ২৪৯ জনের। এ ছাড়া শতাধিক মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এমন জেলার সংখ্যাও ১০টি। পশ্চিম মেদিনীপুরে ১৮২, হুললিতে ১৭৪, নদিয়ায় ১৭১, পূর্ব মেদিনীপুরে ১৬০, হাওড়ায় ১৫১, দার্জিলিঙে ১৩২, মালদহে ১২৯, পশ্চিম বর্ধমানে ১২৮, পূর্ব বর্ধমানে ১২৭ জন নতুন করে কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন।