পেনসিলভেনিয়ায় ১৮হাজারে পিছিয়ে থেকেও জয়ের কাছে বাইডেন
পেনসিলভেনিয়ায় (Pennsylvania) ১৮হাজার ভোটে পিছিয়ে থেকেও হঠাৎ ৫ হাজারের বেশি ভোটে এগিয়ে গেলেন বাইডেন। ফলে আরও কাছে চলে এলেন প্রেসিডেন্ট পদে জয়ের। এই রাজ্যে ২০টা ইলেকটোরাল কলেজ ভোট আছে। যা পেলে জয় একপ্রকার নিশ্চিত বাইডেনের। এর আগে জর্জিয়াতেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে অল্প ব্যবধানে হলেও এগিয়ে গিয়েছিলেন জো বাইডেন। সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, জর্জিয়াতে ট্রাম্পের চেয়ে ৯১৭ ভোট বেশি পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন বাইডেন।
বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে ট্রাম্প ১৮ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু জর্জিয়ার ভোটার সংখ্যা বিরাট- ৪৯ লাখ ৫৮ হাজার ১৯১টি। তার মধ্যে ৯৯ শতাংশ ভোট ইতোমধ্যে গণনা করা হয়ে গিয়েছে। শতাংশের হিসাবে দুজনেই এখন পর্যন্ত পেয়েছেন ৪৯.৪ শতাংশ করে ভোট। সামান্য ভোটে এগিয়ে বাইডেন।
তবে, নেভাডা, অ্যারিজোনা, আলাস্কা, এবং নর্থ ক্যারোলাইনায় টানটান লড়াই চলছে ট্রাম্প-বাইডেনের। প্রেসিডেন্টের কুর্সির পাশাপাশি লড়াই চলছে কংগ্রেস দখলের। সেনেট এবং হাউসের যুদ্ধও একই রকম কাঁটায় কাঁটায়। বলা বাহুল্য, এই দুই কক্ষের অন্তত একটিকে বাগে আনতে না-পারলে, প্রেসিডেন্টের দাপট অর্ধেক হয়ে যায় লিঙ্কনের দেশে।
যদিও ইতিমধ্যেই পেনসিলভ্যানিয়া, মিশিগান এবং জর্জিয়ার মতো তিন সুইং স্টেটের গণনা নিয়ে আদালতে নালিশ জানিয়েছে ট্রাম্প শিবির। এর মধ্যে পেনসিলভ্যানিয়ার গণনা নিয়ে ট্রাম্পের অভিযোগ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের মতে, শীর্ষ আদালত ওই মামলাগুলি, বিশেষ করে পেনসিলভ্যানিয়ার গণনা নিয়ে ট্রাম্পের অভিযোগ শুনতে রাজি হলে বিপাকে পড়তে পারে বাইডেন শিবির। সে ক্ষেত্রে গণনা স্থগিত হওয়ার সম্ভাবনাও থাকছে। কিন্তু এখনও তেমন কিছু হয়নি।
বুধবারই আভাস মিলেছিল, জো বা ডন, কেউই একপেশে জয় পাচ্ছেন না। বৃহস্পতিবার দুপুরে ডনকে বড়সড় ধাক্কা দিয়ে উইসকনসিন এবং মিশিগান দখলে নিয়ে মাস্টারস্ট্রোক দেন বাইডেন! ২০১৬-য় ট্রাম্পের জেতা এই দুই প্রদেশ ছিনিয়ে নেন বারাক ওবামার প্রাক্তন ডেপুটি। ফলে অ্যাডভান্টেজে ছিলেন বাইডেন। তা আরও বাড়ল।
ডেমোক্র্যাটদের জয় নিয়ে আশাবাদী বাইডেন। উইলমিংটনে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী কমলা হ্যারিসকে পাশে নিয়ে তিনি বলেন, ‘ফের প্রমাণ হয়ে গেল যে, গণতন্ত্রই এ দেশের হৃদ্স্পন্দন, গত দু’দশক ধরে ঠিক যেমনটা রয়েছে। অতিমারী সত্ত্বেও আমেরিকার ইতিহাসে এ বছরই সবচেয়ে মানুষ ভোট দিয়েছেন।’ তাঁর দাবি, ‘রাতভর গণনার পর এটা স্পষ্ট যে, ২৭০-এর ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছতে যে সংখ্যায় ভোটের দরকার, তার থেকে বেশি ভোটই পাব আমরা। আমরা জিতে গিয়েছি, এমনটা ঘোষণা করতে আসিনি। তবে একটা কথা বলতে চাই, গণনা যখন শেষ হবে, আমরাই জয়ী হব।’
বাইডেন (Joe Biden) বা ট্রাম্প (Donald Trump) ক্ষমতায় যেই আসুন না কেন, করোনার (Coronavirus) প্রকোপে ধ্বস্ত মার্কিন অর্থনীতিকে সামলানো বড়সড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে তাঁর কাছে। আমেরিকায় মন্দা চরমে। চাকরির বাজারের অবস্থাও তথৈবচ। করোনায় এমনিতেই মার্কিন ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতা অনেকটা কমেছে। তাই অর্থনীতি চাঙা না-হলে ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে না। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বাড়ির দাম। ফলে তীব্র সমস্যায় পড়েছেন বাড়ির সম্ভাব্য ক্রেতা এবং ভাড়াটেরা। এর উপর রয়েছে করোনার প্রকোপ। গত সপ্তাহেও আমেরিকায় ৬০০০ জনের মৃত্যু হয়েছে কোভিডে। যে দিন গণনা নিয়ে যুদ্ধ রাতভর চলেছে, সেদিনও দেশে লক্ষাধিক মানুষ কোভিড পজিটিভ হয়েছেন। এই অবস্থায় দাবি উঠেছে, ইউরোপের অন্য দেশগুলির মতো আমেরিকাতেও ফের লকডাউন করা হোক। তাই কাঁটা বিছোনো পথই অপেক্ষা করছে হবু মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্য।
বাইডেন অবশ্য এরই মধ্যে এক বিরল নজির গড়ে ফেলেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইতিহাসে সর্বকালের সবচেয়ে বেশি ‘পপুলার ভোট’ তাঁর দখলে। আগে এই রেকর্ড ছিল বারাক ওবামার। ২০০৮ সালে ওবামা পেয়েছিলেন ৬ কোটি ৯০ লক্ষের কিছু বেশি ভোট। বাইডেন ইতিমধ্যেই মোট ৭ কোটির অনেক বেশি ভোট দখল করেছেন। এখনও গণনা বাকি। ট্রাম্পও অবশ্য এ বার আগের চেয়ে বেশি ভোট পয়েছেন। তিনিও ওবামার রেকর্ড ভাঙার কাছাকাছি। এখনও পর্যন্ত যা খবর, তাতে প্রেসিডেন্ট পেয়েছেন ৬ কোটি ৭৩ লক্ষের বেশি ভোট।
মার্কিন ভোটের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, বাইডেন এখনও পর্যন্ত জিতেছেন উইসকনসিন, মিশিগান, নিউ মেক্সিকো, নিউ হ্যাম্পশায়ার, নিউ ইয়র্ক, ম্যাসাচুসেটস, নিউ জার্সি, মেরিল্যান্ড, ভারমন্ট, কানেক্টিকাট, ডেলাওয়ার ও কলোরাডোতে। হাওয়াই, ওয়াশিংটন, ক্যালিফোর্নিয়া এবং ইলিনয়ের মতো রাজ্যেও জয় পেয়েছে ডেমোক্র্যাটরা। প্রতিপক্ষ রিপাবলিকানরা জিতেছেন সাউথ ক্যারোলাইনা, আলাবামা, নর্থ ডাকোটা, আরকানসা, টেনিসি, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া, ওকলাহোমা, কেন্টাকি ও ইন্ডিয়ানাতে। আইওয়ার ৩টি ইলেক্টরাল ভোটও গিয়েছে ট্রাম্পের পক্ষে।