স্বাস্থ্য বিভাগে ফিরে যান

আপনার কাছের মানুষটি কি মুড সুইং-এর শিকার? সাবধান!

November 21, 2020 | 3 min read

মেজাজ হুট করেই বদলে যাওয়া, মন ভাল না খারাপ তাও বুঝতে না পারা, এই হাসিমুখ তো পরক্ষণেই রাগ এগুলো মনের একটা অসুখের লক্ষণ। যার নাম মুড সুইং।

ধরুণ আপনি হাসিমুখে  কথা বলতে বলতে হঠাৎ মুড খারাপ হয়ে গেলো আবার ঠিক হয়ে গেলো এটাকেই সংক্ষেপে মুড সুইং বলে।

মুড সুইং এ শিকার ব্যক্তি অনবরত বিপরীতধর্মী সব আবেগের মধ্য দিয়ে যেতে পারে। হঠাৎ মন ভাল থেকে একটু খারাপ, অনেক বেশি খারাপ, তীব্র হতাশা, আবার খুশি হয়ে যাওয়া এইসব ঘটতে পারে অল্প সময়ের মধ্যে।

মুড সুইং বেশি দেখা যায় নারীদের মধ্যে। বিশেষ করে পরিবর্তিত শারীরিক অবস্থায় যেমন পিরিয়ডকালীন আর গর্ভাবস্থায় তাদের মুড সুইং অনেক বেশি হয়ে থাকে।

এসময় শরীরে হরমোনের তারতম্যে কারণে একজন নারী মানসিকভাবে অনেকটা বিপর্যস্ত থাকে। যার কারণে হালকা বা চরম মাত্রার মুড সুইং হতে পারে।

ঋতুচক্রের সময়টা অল্প হয় বলে এই সময়ের মুড সুইং দ্রুত কেটে যায়। কিন্তু গর্ভকালীন মুড সুইং দীর্ঘমেয়াদী হয় আর খুব প্রবল মাত্রায় ঘটতে পারে।

সন্তান জন্মদানের পরেও মানসিক অশান্তির রেশ থেকে যেতে পারে। যা মা ও শিশু দুইজনের জন্যই ভয়াবহ। শুধুমাত্র নারীর ক্ষেত্রে যে মুড সুইং এর ব্যাপারটি ঘটে এমনটি নয়, কিছুক্ষেত্রে পুরুষদের ও মুড সুইং দেখা যায়। তবে নারীদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা খুব বেশি পরিমানে দেখা দেয়, যার কারণে অনেক সমস্যা। এজন্য আমাদের সকলের মুড সুইং ব্যাপারটা জানা জরুরী, তাই আজ লিখছি মুড সুইং নিয়ে।

কেন হয় মুড সুইং

নারীদের ক্ষেত্রে মুড সুইং এর কারণ ব্যাখা করতে কিছু সাধারণ জিনিস জানা প্রয়োজন। মেয়েদের মুড একটি নিদৃষ্ট প্যাটার্ন এ বদলায়। মেয়েদের পিরিয়ড সাইকেল এ হরমোনাল চেঞ্জ গুলো আসলে এ সময়ে মুড চেঞ্জের জন্য দায়ী। গর্ভবতী মায়েরও সময় অনুযায়ী হরমোন এর প্রভাবে মুড সুইং হয়ে থাকে।   

সহজ ভাষায় পিরিয়ড এর সময়কালীন কিছু চেঞ্জ তুলে ধরা হলঃ

 পিরিয়ড এর সময়কাল সাধারণত ২৮ দিন ধরা হয় তবে এর কম বেশি হতে পারে।  এই সময় কে চার সপ্তাহে যদি ভাগ করি। 

প্রথম সপ্তাহ

এই সপ্তাহে মেয়েরা আশাবাদী এবং উদ্যমী থাকে। আগের সপ্তাহের বিভীষিকা ভুলে দেহের সাথে মন ও নতুন করে উদ্যম সঞ্চয় করে।

দ্বিতীয় সপ্তাহ

এই সপ্তাহে সৌন্দর্য, অবারিত উদ্যম, আর অনেক অনেক পজিটিভিটি এবং কনফিডেন্স থাকে মেয়েদের ভিতর। এই সপ্তাহটা মেয়েদের জন্য সব থেকে আনন্দের। এই দুই সপ্তাহকে মোটামুটি হ্যাপি টাইম বলা হয় 

তৃতীয় সপ্তাহ

এই সপ্তাহে সবকিছুই একটু নিচের দিকে যেতে থাকে। (উদ্যম, সৌন্দর্য এবং যাবতীয় ধনাত্মক গুণাবলি) এই সপ্তাহে মেয়েদের মধ্যে সন্দেহ আর হীনমন্যতা দেখা যায় কিছুটা। এমনকি তারা এই সময়ে কিছুটা ইনসিকিওরড ফিল করে। কিছুটা খিটখিটে, খামখেয়ালি, মনমরা আচরণ করতে পারে।  

চতুর্থ সপ্তাহ

এই সপ্তাহে ভয়াবহ মুড সুইং হয়। রাগ, কান্না, খিটখিট মেজাজ, হতাশা, ব্যথা- সবই হয় বাঁধনছাড়া। এই সময় সব কিছুই অসহ্য লাগে।  অনেক মেয়ের মধ্যে আত্নহত্যার ভাবনাও আসে।

সময়ের হিসেবটা একটু ঘুরপ্যাচের প্রথম সপ্তাহ বলতে সাতদিন ব্যাপার টা এমন না, আলোচনার ভাগ করে নিচ্ছি এ সময় টা কারো ৫ দিন কারো ৭ দিন হয়। আর সময় গননা বলতে প্রথম সপ্তাহ শুরু হয় পিরিয়ড এর ব্লিডিং শেষ হবার পরদিন থেকে। তার মানে চতুর্থ সপ্তাহ টি হলো মেনুস্ট্রেশন এর সময় নির্দেশক।   

মুড সুইং এ কি কি লক্ষন প্রকাশ পায়

খিটখিটে ভাব, রাগ,মেজাজ, কান্না, অতিরিক্ত স্পর্শকাতরতা, উদ্বিগ্ন ভাব, পর্যায়ক্রমিক বিষাদ।  

কখন সাবধাণ হবেন

  • শারীরিকভাবে হরমোনাল কারণে মুড সুইং অল্প হতে পারে। কিন্ত অতিরিক্ত মুড সুইং মানসিক ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। এজন্য কিছু দিক খেয়াল রাখা দরকার।
  • নিজের ক্ষতিসাধন করতে চাইছেন, এরকম সময়।
  • আসলে এ সময় ভিক্টিম থেকে তার পরিবারের দায়িত্ব বেশি -যখন কেউ বন্ধুবান্ধব, আপনজনকে  এড়িয়ে চলছে।
  • সব কিছুতে অনীহা দেখা দিচ্ছে -মানুষের মুখোমুখি হতে যখন কেউ ভয় পাচ্ছে।   

মুড সুইং কাটিয়ে ঠার উপায়

  • নিদৃষ্ট সময় সূচি মেনে চলুন।
  • ব্যায়ামে’র মাধ্যমে মানসিক চাপ কমান।
  • পর্যাপ্ত ঘুম আবশ্যক।
  • সুষম খাদ্যতালিকা।
  • যোগ ব্যায়ামে’র অভ্যাস করা।
  • গুটিয়ে না থেকে নিজেকে প্রকাশ করুন।
  • আপন জন এর সাথে সবকিছু শেয়ার করুন যে আপনাকে বোঝে।

মুড সুইং আসলে এমন একটা জিনিস যে আমাদের নজর এড়িয়ে যায়। যার অন্যতম কারন অজ্ঞতা। অনেক সময় দেখা যায় ভিক্টিম নিজেও তার মুড সুইং সম্পর্কে অবহিত না। কিন্ত সবার মুড সুইং এর  ব্যাপারে জানা উচিত বিশেষত পুরুষদের। কারণ পুরুষ কখনো ভাই, কখনো স্বামী, কখনো বাবা, কখনো ছেলে এসব বিষয়ে জানা জরুরী। ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কেউ ত্যামন মাথা ঘামায় না,কিন্ত এরকম ঘটনা অনেক পাওয়া যাবে যে আত্নহত্যা করেছে অনেকে কারও এতটু সহানুভূতি না পেয়ে। তাই নিজে জানুন অন্যকে জানান এবং মুড সুইং এর সময় আপনার আপনজনকে সাহস দিন। খুব বেশি পরিমানে দেখা দিলে চিকিৎ সক এর কাছে নিয়ে যাবেন। গর্ভবতী হলে অবশ্যই আগে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যাবেন।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Health Tips, #Mood Swing

আরো দেখুন