রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

ট্রপিক্যালেও হবে করোনার টিকা পরীক্ষা

November 22, 2020 | 3 min read

কেন্দ্রীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাইসেডে (National Institute of Cholera and Enteric Diseases) কোভিডের টিকা-পরীক্ষা চূড়ান্ত হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আর একটি সুখবর। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের অধীন স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনে (School Of Tropical Medicine) করোনার টিকা পরীক্ষার জন্য সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে স্বাস্থ্য ভবন। সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও প্রস্তাবিত টিকা-পরীক্ষার জন্য অনুমোদন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করার বিষয়টি গতি পেয়েছে বলে খবর।

স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম  শনিবার বলেন, ‘‘টিকা পরীক্ষার জন্য স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন’কে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে অনুমোদন দেওয়ার বিষয়টি বিশেষজ্ঞেরা খতিয়ে দেখছেন।’’ স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, আগামী মঙ্গলবার এসটিএমের এথিক্স কমিটির বৈঠক রয়েছে। সেই বৈঠকে আনুষ্ঠানিক ভাবে অনুমোদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে সেখানেও ডিসেম্বরে টিকা-পরীক্ষার কাজ শুরু হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে সারা দেশে করোনার টিকা-পরীক্ষায় দ্বিতীয় সারিতে চলে আসবে পশ্চিমবঙ্গ।

নাইসেডে ‘কোভ্যাক্সিনে’র পরীক্ষার বিষয়টি শুক্রবার চূড়ান্ত হলেও এসটিএমে ‘কোভোভ্যাক্স’ (Covaxin) এবং সাগর দত্তে ‘স্পুটনিক ভি’র প্রস্তাবিত পরীক্ষা নিয়ে রাজ্যের চিকিৎসক-গবেষকদের গলায় আক্ষেপের সুর শোনা গিয়েছিল। তাঁদের দাবি ছিল, ‘কোভোভ্যাক্স’ এবং ‘স্পুটনিক ভি’র (Sputnik v) পরীক্ষার জন্য অনুমোদন প্রাপ্তির প্রক্রিয়া থমকে থাকায় টিকা-পরীক্ষায় এগিয়ে গেল নাইসেড। সেই দাবি খণ্ডন করে স্বাস্থ্যসচিব এ দিন বলেন, ‘‘করোনা ভ্যাকসিনের পরীক্ষার বিষয়টি আর পাঁচটা সাধারণ ভ্যাকসিনের মতো নয়। এর সঙ্গে রাজ্যবাসীর স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি জড়িয়ে রয়েছে। চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলির কাছে টিকা পরীক্ষার জন্য যে সকল প্রস্তাব রয়েছে তা সরকারি প্রক্রিয়া মেনে আসা মাত্র অনুমোদন প্রক্রিয়ার কাজ শুরু হয়েছে। কোথাও কোনও দেরি হয়নি।’’

স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, নাইসেডের মতো এসটিএমের টিকা পরীক্ষাতেও অন্যতম অংশীদার আইসিএমআর (India Council of Medical Research)। বস্তুত, আইসিএমআর-ন্যাশনাল এডস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে এসটিএমের কাছে ‘কোভোভ্যাক্সে’র পরীক্ষার প্রস্তাবটি আসে। আমেরিকার সংস্থা ‘নোভাভ্যাক্সে’র সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে এ দেশে করোনার টিকা পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে আইসিএমআর এবং পুণের সিরাম ইনস্টিটিউট। এ রাজ্যে ১০০ জন স্বেচ্ছাসেবককে টিকা দেওয়া হবে। এসটিএমে দু’দল স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে এক দল পাবেন আমেরিকায় তৈরি করোনা টিকা।

আর এক দল সেই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে সিরাম ইনস্টিটিউট যে টিকা প্রস্তুত করবে, তা পাবে বলে স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর। সারা দেশে প্রায় ৩০টি পরীক্ষা-কেন্দ্রে অন্তত পাঁচ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের মধ্যে ‘কোভোভ্যাক্সে’র পরীক্ষা হবে বলে জানা গিয়েছে।

টিকা-পরীক্ষার অনুমোদন প্রক্রিয়া এবং দেশে ট্রায়াল সাইট (যে ক্ষেত্রে গতকাল পর্যন্ত বঞ্চিত ছিল পশ্চিমবঙ্গ) নিয়ে ঘটনাপ্রবাহ দেখে রাজ্যের করোনা বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যদের একাংশের পর্যবেক্ষণ, বিধানসভা ভোটের আগে বঙ্গে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে কোভিড টিকাকরণ প্রক্রিয়া। যেমনটি সম্প্রতি হয়েছিল বিহারে। 

বস্তুত, টিকা-লড়াইয়ের সম্ভাবনার একটা আভাসও মিলেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক-গবেষকদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, করোনা টিকা বেরোলে স্বাস্থ্যকর্মীরা অগ্রাধিকার পাবেন বলে ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে কেন্দ্র। তার জন্য রাজ্যগুলির কাছে স্বাস্থ্যকর্মীদের সম্পর্কে খুঁটিনাটি তথ্য চাওয়া হয়েছে। ‘আয়ুষ্মান ভারতে’র অভিজ্ঞতা এখনও স্বাস্থ্য ভবনের স্মৃতিতে টাটকা।

স্বাস্থ্য দফতরের অন্দরের একাংশের দাবি, বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যেরই দেওয়া তথ্য ভাণ্ডারকে কাজে লাগিয়ে অভিনন্দন বার্তার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার বঙ্গের স্বাস্থ্যকর্মীদের মন জয়ের চেষ্টা করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আবার রাজ্যের বিরুদ্ধে কেন্দ্র যাতে কোনও ভাবে ‘অসহযোগিতা’র অভিযোগ তুলতে না পারে সে বিষয়েও সতর্ক থাকা জরুরি। কারণ, ভোটের মাঠে সেটিও প্রচারের বিষয় হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে টিকা-বণ্টন প্রক্রিয়ার জন্য পরিকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি টিকা-পরীক্ষার উপরেও জোর দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা জানান, রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে ছ’লক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীর তথ্যপঞ্জি তৈরি করেছে। পাশাপাশি, কেন্দ্র মুখ্যসচিব স্তরে কমিটি গঠনের পাশাপাশি স্বাস্থ্যসচিবের নেতৃত্বাধীন টাস্ক ফোর্স এবং জেলা স্তরে জেলাশাসকদের নেতৃত্বে কমিটি গঠনের কথা বলেছিল।

ত্রিস্তরীয় কমিটি গঠনের কাজ শেষে টিকা সংরক্ষণের জন্য ডিপ ফ্রিজার কোথায় থাকবে, তার জন্য কত বিদ্যুৎ খরচ হবে, সে সব কাজও যথারীতি এগোচ্ছে। ওই কর্তার কথায়, ‘‘আমরা যে সর্বতোভাবে প্রস্তুত, সেই বার্তা দিতে কোথাও কার্পণ্য করা হবে না। কেন্দ্র টিকা দিলে সারা দেশের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গও সেই টিকা সরবরাহের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবে। কিন্তু তার জন্য রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্মীদের খুঁটিনাটি তথ্য দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করি না। আমাদের বিশেষজ্ঞরাও এ বিষয়ে একমত।’’

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#West Bengal, #Coronavirus

আরো দেখুন