ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় নজরদারি রাজ্যের
করোনা আক্রান্ত ও কোভিড হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের চিকিৎসার উপর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নজরদারি চালাতে শুরু করল রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তর। শুধু নিয়মিত নজরদারি নয়, প্রতি ১৫ দিন অন্তর সরেজমিনে কোভিড হাসপাতাল পরিদর্শনও চালানোর উদ্যোগ নিয়েছে দপ্তর। মৃত্যুর হার কমিয়ে আনতেই এই তৎপরতা।
ডিসেম্বরে শীতে করোনা পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। ইতিমধ্যে তাপমাত্রার পারদ কমতেই দিল্লি ও গুজরাতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বাড়তে শুরু করেছে। সেই সঙ্গে মৃত্যুর হারও বেড়েছে। শীতে এরাজ্যেও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। তাই করোনায় মৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে আগে থেকেই উদ্যোগী হল রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তর। এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, করোনার চিকিৎসা ও সংক্রমণ রোধে একের পর এক ব্যবস্থা নিয়েছে রাজ্য সরকার (State Government)। যার ফলে এরাজ্যে করোনায় মৃত্যুর হার অনেক কম। শীতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে পারে। তবে পরিণতি যাতে মৃত্যু না হয়, সেজন্য আগাম পদক্ষেপ নিয়েছে রাজ্য। জানা গিয়েছে, করোনা আক্রান্ত রোগীরা কী ওষুধ পাচ্ছেন, শারীরিক অবস্থা কেমন, প্রতি মিনিটে কী পরিমাণ অক্সিজেন নিচ্ছেন, কিডনি, লিভার, ব্রেনের ফাংশন কী, চেস্ট এক্স-রে রিপোর্ট, বিভিন্ন অর্গানের ফাংশন সহ চিকিৎসার নানা পদ্ধতি, রোগীদের নাম, বয়স ধরে প্রতিদিন জেলা স্বাস্থ্যকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনা সারছেন আরজিকর মেডিক্যালের করোনা বিশেযজ্ঞ চিকিৎসকরা। কী ওষুধ পাচ্ছেন, তা পরিবর্তন বা ডোজ বাড়াতে হবে, নাকি কমাতে হবে তার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। যাঁরা হোম আইসোলেশনে রয়েছেন তাঁদেরও টেলি-মেডিসিনের সম্পর্কে তাঁরা খোঁজখবর নিচ্ছেন।
রাজ্যের প্রতিটি কোভিড হাসপাতালে (Covid Hospital) সিসিইউ, আইসিইউ বিভাগে চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সঙ্গেও প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রেখে করোনা রোগীর শারীরিক অবস্থা জেনে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। যাতে করোনায় আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা যায়। এদিন রামপুরহাট স্বাস্থ্যজেলার কর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে করোনা রোগীদের চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য নেওয়ার পাশপাশি আলোচনা সারেন আরজিকর মেডিক্যালের বিশেষজ্ঞ প্রফেসার ডাঃ পার্থসারথি কর্মকার। রামপুরহাট স্বাস্থ্যজেলা সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত ৭৫ হাজার ৩৩৭ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তার মধ্যে পরীক্ষা হয়েছে ৭৪ হাজার ২৪৪ জনের। পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে ২৫৫২ জনের। মারা গিয়েছেন ৩৮ জন। যা বীরভূম স্বাস্থ্যজেলা থেকে ১০ বেশি। যদিও সিএমওএইচের দাবি, সকলেই কো-মর্বিডিটির কারণে মারা গিয়েছেন। তাঁদের কারও ডায়াবেটিস, হাইপার-টেনশন, আবার কারও কিডনি, লিভার, হৃদরোগ ছিল। বর্তমানে এই স্বাস্থ্যজেলায় অ্যাক্টিভ কেসের সংখ্যা ১৫৪। বাকিরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
স্বাস্থ্যদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী সুস্থতার হার ৯৩.৯৬ শতাংশ। স্বাস্থ্যজেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ রবীন্দ্রনাথ প্রধান বলেন, করোনা চিকিৎসার ক্ষেত্রে এটা রাজ্য সরকারের প্রশংসনীয় পদক্ষেপ। শুধু এই স্বাস্থ্যজেলা নয়, রাজ্যের প্রতিটি কোভিড হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্তাদের সঙ্গে একই পদ্ধতিতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে রোগীদের নাম ধরে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞরা খোঁজখবর ও পরামর্শ দিয়ে চলেছেন। সেই সঙ্গে বিশেষজ্ঞরা ১৫ দিন অন্তর ভিজিটও করছেন।