দক্ষিণবঙ্গ বিভাগে ফিরে যান

চুলের ব্যবসায় স্বনির্ভর চাপড়ার দশ হাজারের বেশি পরিবার

November 30, 2020 | 2 min read

মহিলাদের মাথার ফেলে দেওয়া চুল দিয়েই তৈরি হয় পরচুলা। বিদেশে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। পড়ে যাওয়া চুলের নানা কাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করছে চাপড়া ব্লকের প্রায় দশ হাজারেরও বেশি পরিবার। বড় আন্দুলিয়া সহ বিভিন্ন গ্রামের অনেকে আবার আর্থিকভাবে সমৃদ্ধও হয়েছেন। পেটের দায়ে অসামাজিক কাজে জড়িয়ে পড়া বেকার যুবকরাও চুলের ব্যবসা করে এখন সমাজের মূল স্রোতে ফিরছেন।

মাথা আঁচড়ানোর পর উঠে আসা চুল বিশেষত মহিলারা অনেকেই জমিয়ে রাখেন। ফেরিওয়ালারা সেইসব চুল (Hair) কিনে নেন। বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেই চুল পাড়ি দেয় বিদেশে। প্রায় ২৫বছর আগে চাপড়ার বড় আন্দুলিয়ার শিবিরপাড়ার সুরাবদ্দিন শেখ প্রথম পরিত্যক্ত চুলের ব্যবসা শুরু করেন। তিনি বলেন, স্থানীয় বাসিন্দারা প্রথমদিকে এই ব্যবসাকে খারাপ চোখে দেখলেও প্রচুর অর্থ উপার্জন হওয়ায় পরবর্তীতে অনেকেই এই ব্যবসা শুরু করেন। এখন এলাকার অধিকাংশ মানুষ এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত।

বড় আন্দুলিয়া, বানিয়াখড়ি, আলফা, হাটখোলা, ডোমপুকুর, বেদবেড়িয়া, হৃদয়পুর সহ আশপাশের বেশকিছু গ্রামের প্রায় দু’হাজার ফেরিওয়ালা বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে পরিত্যক্ত চুল সংগ্রহ করেন। মহিলারা মহাজনের কাছে থেকে চুলগুলি নিয়ে গিয়ে সেগুলিকে সুচ ও কাঁটার সাহায্যে ছাড়িয়ে পুনরায় মহাজনকে ফেরত দেন। মহিলারা কেজি প্রতি পারিশ্রমিক পান। প্রশিক্ষিত মিস্ত্রি দিয়ে ছাড়ানো চুল লোহার তৈরি বিশেষ ধরনের বড় চিরুনির সাহায্যে ছাড়িয়ে গুছিয়ে বাঁধা হয়। সেগুলিকে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে রোদে শুকনো হয়। সাধারণত ৬-৩০ইঞ্চি পর্যন্ত চুল বিদেশে রপ্তানি করা হয়। ৫-১৫ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। এখান থেকে চুল সাধারণত মুর্শিদাবাদ, মেদিনীপুর সহ ভিনরাজ্যে পাঠানো হয়। এরপর সেগুলি চিন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, আমেরিকা সহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়। সেখানে পরচুলা তৈরি হয়।

একসময় বাংলাদেশ সীমান্তে চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত ছিল অনেকে। কিন্তু সীমান্ত কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে দেওয়ায় ও বিএসএফের (BSF) নজরদারি বাড়ায় চোরাচালান বন্ধ হয়ে যায়। অনেকেই পেটের দায়ে অপরাধ জগতের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। পরে এই ব্যবসার মাধ্যমে অনেকেই সমাজের মূল স্রোতে ফিরে আসে। বড় আন্দুলিয়ার শিবিরপাড়ার সাইদুর বেওয়া বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর চুল ছাড়িয়েই সংসার চালাচ্ছি। এলাকার সলেহার করাতি বলেন, স্বামী আগে দিনমজুরের কাজ করত। সংসারে অভাব লেগেই থাকত। এখন স্বামী চুল সংগ্রহ করে নিয়ে আসে। আমি সেই চুল ছাড়িয়ে মহাজনের কাছে বিক্রি করি। দু’জনের উপার্জনে সংসার ভালোভাবে চলছে। শিবিরপাড়ার চুলের মহাজন জিন্দার শেখ বলেন, এই ব্যবসার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দশ হাজারেরও বেশি পরিবার যুক্ত। তবে অবৈধ ব্যবসা না হওয়া সত্ত্বেও চুল পরিবহণের সময় পুলিস অযথা হয়রানি করে। অন্যায়ভাবে টাকা দাবি করা হয়। কৃষ্ণনগরের পুলিস সুপার বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, এখনও পর্যন্ত পুলিসি হয়রানির কোনও অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Hair Business

আরো দেখুন