৩০০ বেডের চাইল্ড হাব তৈরির উদ্যোগ
জেলার স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নতিতে রাজ্য সরকার একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়িত করেছে। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু ও মায়েদের চিকিৎসার জন্য আগেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। এবার সামশেরগঞ্জের অনুপনগরে চাইল্ড হাব (Child Hub) তৈরির তোড়জোড় শুরু করল রাজ্য সরকার (State Government)। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এখানে ২১কোটি টাকা খরচ করে পরিকাঠামো তৈরি করা হবে। হাসপাতালে ৩০০টি বেডের বন্দোবস্ত থাকবে। প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকায় এমন পরিকাঠামো তৈরি হলে শিশুমৃত্যুর হার আরও কমবে বলে চিকিৎসকদের দাবি। তাঁরা বলেন, এই হাবে শিশু ও মায়েদের চিকিৎসার জন্য সবরকম উপকরণ থাকবে।
স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, জঙ্গিপুর মহকুমার এখনও বাড়িতে প্রসবের সংখ্যা বেশি রয়েছে। সেক্ষেত্রে শিশু ও মা উভয়েরই ঝুঁকি থাকে। গতবছর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) জেলা সফরে এসে এই বিষয়টি স্বাস্থ্যদপ্তরের কর্তাদের দেখতে বলেন। তারপর বিভিন্নভাবে প্রচার চালানো হয়। আধিকারিকদের দাবি, আগের তুলনায় বাড়িতে প্রসবের সংখ্যা অনেকটাই কমেছে। সামশেরগঞ্জ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জেলায় সবচেয়ে বেশি ডেলিভারি হচ্ছে। আগামী দিনে বাড়িতে প্রসবের সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনার টার্গেট রয়েছে। গ্রামীণ এলাকাগুলিতে এই ধরনের পরিকাঠামো করলে এই কাজ আরও সহজ হবে বলে আধিকারিকরা মনে করছেন।
মুর্শিদাবাদ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রশান্ত বিশ্বাস বলেন, চাইল্ড হাব তৈরি নিয়ে কিছুদিনের মধ্যেই বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। কবে থেকে কাজ শুরু হবে তা ওই বৈঠকের পরই জানা যাবে।
প্রশাসন সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, গতবছর মুখ্যমন্ত্রী জেলা সফরে এসে এই প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু তারপর আর কাজ তেমন এগয়নি। ঘোষণা অনুযায়ী আদৌ কাজ হবে কি না তা নিয়ে অনেকেই ধন্দে ছিলেন। কিন্তু এখন আবার এই প্রকল্পটি নিয়ে নতুন করে নড়াচড়া শুরু হয়েছে। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অনেক আগেই এই ব্যবস্থা চালু হওয়ায় সুফল মিলছে। শিশুমৃত্যুর হার অনেক কমে গিয়েছে। এক আধিকারিক বলেন, মুর্শিদাবাদ জেলায় অপুষ্টির সমস্যা দীর্ঘদিনের। অল্পবয়সে বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। সেই কারণে সদ্যোজাতদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। অনেক সময় উপযুক্ত পরিকাঠামো না থাকলে সেই সমস্ত শিশুদের বাঁচানো দায় হয়ে ওঠে। কিন্তু মা ও শিশুদের জন্য আলাদাভাবে চিকিৎসার বন্দোবস্ত থাকলে অনেককেই নতুন করে প্রাণ দেওয়া যাবে। এছাড়া অনেক সময়ই মায়েদেরও অবস্থা ভালো থাকে না। জেলার আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। সেই কারণে বেসরকারি নার্সিং হোম বা হাসপাতালে নিয়ে গিয়েও তাঁদের চিকিৎসা করার সামর্থ্য অনেক সময় থাকে না। কিন্তু সরকারি উদ্যোগের এমন পরিকাঠামো থাকলে মায়েদের ক্ষেত্রে সুবিধা হবে।
প্রসঙ্গত, মুর্শিদাবাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা আগের থেকে অনেক উন্নতি হয়েছে বলে স্থানীয়দের দাবি। তাঁরা বলেন, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন আনা হয়েছে। মুর্শিদাবাদ ছাড়াও পাশের রাজ্য ঝাড়খণ্ড থেকেও অনেকেই এখানে চিকিৎসার জন্য আসছেন। উন্নত চিকিৎসার পরিষেবা দেওয়ার জন্য ট্রমা সেন্টার তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পাশাপাশি ক্যান্সার চিকিৎসার জন্যও আলাদা ইউনিট তৈরি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই এইচ ইউনিটের বিল্ডিং তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এবার গ্রামীণ এলাকার চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতিতেও আরও জোর দিল সরকার। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বোর্ড মিটিংয়ে হাব তৈরির অনুমতি পাওয়া গেলেই কাজ শুরু হয়ে যাবে।