ভ্রমণ বিভাগে ফিরে যান

ঘুরে আসুন বাংলার রঙিন গ্রাম থেকে

January 18, 2021 | 2 min read

একটা আস্ত গ্রাম যে এমন রঙিন হতে পারে, তা নিজের চোখে না দেখলে বোধহয় বিশ্বাসই হতো না। 

পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা (Pingla) ব্লকের নয়া গ্রাম। যেখানে গত ন’বছর ধরে তিন দিনের জন্য তৈরি হয় এক মায়ার জগৎ। নাম ‘পট মায়া’। পটচিত্রের নানা পসরা সাজিয়ে বসেন নয়া গ্রামের ‘চিত্রকর’রা। সেখানে সকলেই শিল্পী। তাই প্রত্যেকের নামের সঙ্গেই যুক্ত হয়েছে ‘চিত্রকর’ শব্দটি।

অন্যান্য মেলার মতো স্টল করে নয়, তিন দিনের জন্য নিজেদের বাড়ির বারান্দা বা দালানকেই তাঁরা সাজিয়ে তোলেন পটচিত্রের সামগ্রী দিয়ে। শুধু পটের স্ক্রলই নয়, বর্তমানে এই শিল্প দেখা যাচ্ছে শাড়ি, দোপাট্টা, টি-শার্টেও। এ ছাড়াও কাঁসার থালা, ট্রে, কেটলি, ছাতা, কুলো, বেতের তৈরি ছোট ছোট বাক্স— সবেতেই জায়গা করে নিয়েছে এই অঙ্কনশৈলী। 

Pot chitra

পটচিত্রের ইতিহাস বলতে গিয়ে অনেক তথ্যই জানালেন প্রবীণ শিল্পী গুরুপদ চিত্রকর। পটচিত্র শুধু ছবি আঁকাই নয়, তার সঙ্গে থাকে পটের গানও। শিল্পীরা আগে গান বাঁধেন। তার পরে সেই গানের দৃশ্য আঁকা হয়। এক সময়ে গান লেখা ও ছবি আঁকার কাজ একজনই করতেন। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে অনেকেই শুধু আঁকার উপরে জোর দেন। সে ক্ষেত্রে গান বাঁধেন কোনও ‘গুরু’। এবং তা গাওয়ার শর্ত একটাই— সুর বা কথা কোনও ভাবেই বদলানো যাবে না।

বিবর্তন হয়েছে আরও অনেক কিছুরই। যেমন পটচিত্রে ব্যবহৃত রং। গুরুপদ চিত্রকর জানালেন, পূর্বপুরুষের ধারা বজায় রেখে এখনও অনেকেই প্রাকৃতিক রং ব্যবহার করেন। যদিও বর্তমানে বেড়েছে ফেব্রিক কালারের ব্যবহার। তার কারণ, শুধু কাপড় নয়, এখন নানা কিছুর উপরেই পটচিত্র আঁকা হয়।

তবে প্রাকৃতিক রং ব্যবহারের ফলে ছবির যে ঔজ্জ্বল্য থাকে, তা কৃত্রিম রঙের ক্ষেত্রে থাকে না। নারকেলের মালায় বেলের আঠার সঙ্গে ফল-ফুল মিশিয়ে তৈরি হয় প্রাকৃতিক রং। এবং রং-আঠা-জলের পরিমাণ যদি ঠিক হয়, তা হলে তা ৫০০ বছরেও নষ্ট হবে না, জানালেন গুরুপদবাবু।

পরিবর্তন হয়েছে পটের গানেও। গুরুপদ চিত্রকর জানালেন, পটের গান রচিত হতো মূলত রামায়ণ-মহাভারতের কাহিনি নিয়ে, বা মঙ্গলকাব্য, পূরাণের ঘটনা নিয়ে। কিন্তু, বর্তমানে শিল্পীরা তাঁদের চিন্তাধারার পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। পটের গানে এখন জায়গা করে নিচ্ছে সামাজিক বিষয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ধর্ম সমন্বয়ের কথাও। যেমন, এডস, সুনামি বা হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির কথা। 

গ্রামীণ এই শিল্প অনেকাংশেই হারিয়ে গিয়েছিল। কারণ শিল্পীরা ঠিক মতো পৌঁছতে পারছিলেন না বিশ্ববাজারে। আর সেখানেই এগিয়ে আসে ‘বাংলানাটক.কম’। বিশ্ব দরবারে পটচিত্রকে পৌঁছে দেওয়াই শুধু নয়, প্রথাগত কাপড়ের জায়গায় এই সংস্থা শিল্পীদের আঁকতে শেখায় অন্যান্য জিনিসের উপরেও। নব প্রজন্মকে প্রশিক্ষণ দেওয়া, ওয়ার্কশপ করানো, সব কিছুই সুচারু ভাবে করছে এই সংস্থা। 

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Travelling, #Pingla

আরো দেখুন