কলকাতা বিভাগে ফিরে যান

কুমোরটুলির লক্ষ্মীলাভ, সৌজন্যে সরস্বতী

February 15, 2021 | 2 min read

কোভিডের চোখরাঙানি, আইন-আদালতের বেড়িতে কেটেছে দুর্গোপুজো। ফলে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবে চেনা ছন্দে ছিল না কুমোরটুলি। জগদ্ধাত্রী পুজোও ভালো কাটেনি। মন খারাপ ছিল পটুয়াপাড়ার। এখন করোনা (Covid 19) সংক্রমণের গ্রাফ নিম্নমুখী। পাল্লা দিয়ে চলছে টিকাকরণের কর্মসূচিও। দুঃসময়ের শেষের শুরুতে বাগদেবীর আরাধনায় মেতেছে শহরবাসী। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাড়িতে চলছে পুজোর আয়োজন। কোথাও কোথাও পুজো হচ্ছে সর্বজনীন। আর এই সরস্বতী বন্দনার মধ্য দিয়েই বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বনে ফিরছে কুমোরটুলিও। প্রতিমার বরাত বৃদ্ধিতে হাসি ফুটেছে শিল্পীদের মুখে।

রবিবার ছিল শুক্লা তৃতীয়া। রাত পোহালেই সরস্বতী পুজো (Saraswati Pujo)। এদিন কুমোরটুলিতে ছিল ঠাসা ভিড়। দূরদূরান্ত থেকে প্রতিমা কিনতে এসেছেন বিভিন্ন ক্লাব, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পড়ুয়ারা। ছিলেন গৃহস্থ বাড়ির লোকেরাও। প্রতিমা ছাড়তে ব্যস্ত শিল্পীরা। রবীন্দ্র সরণী, বনমালি সরকার স্ট্রিট, কুমোরটুলি স্ট্রিটেও প্রতিমা বিক্রি হয়েছে বেশ ভালোই। ছোট-বড় সব ধরনের প্রতিমার চাহিদা ছিল নজরে পড়ার মতো।

দুপুর তখন সাড়ে ১২টা। বনমালি সরকার স্ট্রিট থেকে কুলি মারফৎ একটি বড় প্রতিমা তোলা হচ্ছে ম্যাটাডোরে। সেটি যাবে কাঁকুড়গাছি এলাকার একটি ক্লাবে। পাইকপাড়ার রাজা মণীন্দ্র রোডের বাসিন্দা সজল চক্রবর্তী তাঁর স্নাতক পড়ুয়া মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন প্রতিমা কিনতে। কথায় কথায় তিনি বলছিলেন, ‘আমাদের বাড়িতে দীর্ঘ ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে সরস্বতী পুজো হচ্ছে। ফি বছরই ঠাকুর কেনা হয় কুমোরটুলি থেকে।’ শোভাবাজার নাথের বাগান থেকে এসেছেন নমিতা সামন্ত। সঙ্গে তাঁর দশ বছরের ছেলে। একটি সাঁচের ঠাকুর কিনে বাড়ি ফিরছেন তিনি। নমিতার দেবীর কথায়, ‘নানা ব্যবসায়িক কাজে ব্যস্ত থাকেন আমার স্বামী। তাই বাড়ির কাজকর্ম ও পুজো‑অচর্না সবই আমাকে সামলাতে হয়।’

কথা হচ্ছিল কুমোরটুলির (Kumartuli) প্রতিমা শিল্পী জয়ন্ত পালের সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, ‘প্রায় একটা বছর যে পরিস্থিতির মধ্যে আমাদের মধ্যে কাটাতে হল, তা ভাবলে এখনও শিহরিত হয়। খুব কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে আমাদের সময়টা গিয়েছে। ব্যবসা লাটে ওঠার জোগাড় হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত সরস্বতী মায়ের আশিসে বাজার বেশ ভালো।’ শিল্পী জবা পালের কথায়, ‘আমাদের ঘরে সাজের প্রতিমার চাহিদাই ছিল বেশি। দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত বিক্রিবাট্টা কতটা ভালো হয়। তবে আশাকরি, আমাদের সব প্রতিমা বিক্রি হয়ে যাবে। শিল্পী সমর পালেরও একই প্রত্যাশা। বলছিলেন, আমরা ফি বছরই লক্ষ্ণী ও সরস্বতী প্রতিমা বায়নার বাইরে তৈরি করি। এবারও সরস্বতী প্রতিমা অতিরিক্ত তৈরি করেছি। যেভাবে মানুষ আসছেন প্রতিমা কিনতে, তাতে আশা করছি, সব বিক্রি হয়ে যাবে।’ শিল্পী তপন পাল, অনুপ পাল ও সজল পালদের কথাতেও প্রত্যয়ের সুর। তাঁরা বলছিলেন, ‘পুজোর শেষে সব শিল্পীর ঘরে দু‑একটা প্রতিমা শেষ পর্যন্ত থেকে যায়। এটাই স্বাভাবিক। তা নিয়ে আমাদের কোনও মাথাব্যথা নেই।’ মাথাব্যথা শুধু একটা আশঙ্কাকে ঘিরেই—আর যেন ফিরে না আসে কোভিডের দুঃসময়!

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Kumartuli, #saraswati pujo

আরো দেখুন