বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

মীরা আলফাসার ‘মা’ হয়ে ওঠার গল্প

February 21, 2021 | 2 min read

ফ্রান্স থেকে শ্রীমা পন্ডিচেরীতে প্রথম আসেন ১৯১৪ সালের ২৯শে মার্চ, তাঁর স্বামী পল রিসারের সঙ্গে। শ্রীমা সেই সময়ে নিয়মিত ডায়েরি লিখতেন। শ্রী অরবিন্দের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের পর তিনি ডায়েরিতে লিখেছিলেন–“এখনো যদি হাজার হাজার মানুষ অজ্ঞানতার অন্ধকারে ডুবে থাকে, তাতেও কিছু যায় আসে না। কারণ যাকে আমরা কাল এখানে দেখেছি তিনি এই পৃথিবীতে এসে রয়েছেন। তাঁর উপস্থিতিই যথেষ্ট এটা প্রমাণ করতে যে, অন্ধকার কেটে এবার আলো ফুটবে। সেই দিন আসন্ন। আর এই পৃথিবীতে প্রভু তোমারই রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে।” 

পল রিসার এবং শ্রীমার উদ্যোগে শ্রী অরবিন্দের স্তূপীকৃত লেখা নিয়ে ‘আর্য্য’ পত্রিকা প্রকাশ পায়। এর প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয় ১৯১৪ সালের ১৫ই আগষ্ট শ্রী অরবিন্দের জন্মদিনে। পত্রিকার প্রচ্ছদপটে সম্পাদকমণ্ডলীর নাম ছিল- শ্রী অরবিন্দ ঘোষ, পল রিসার ও মীরা রিসার। শ্রীমা রিসারেরই পূর্ব নাম ছিল মীরা, যাকে আমরা মীরা আলফাসা (Mirra Alfassa) বলে জানি।   

শ্রীমা ‘আর্য্য‘ পত্রিকা ফরাসীতে অনুবাদ করতেন, ফরাসী পত্রিকা  ‘Revue’ -র জন্য। পত্রিকার হিসাবপত্র রক্ষা, গ্রাহক  তালিকা প্রস্তুতি এবং মুদ্রণের ব্যাপারেও তাঁর দায়িত্ব ছিল। ইউরোপে সেইসময় মহাযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। পল রিসার সংরক্ষিত সৈন্যবাহিনীর  তালিকায় ছিলেন, কাজেই তাঁকে ফ্রান্সে ফিরে যেতে হয়। সেই সঙ্গে শ্রীমাকেও। ১৯১৮ সালে যুদ্ধ শেষ হলে শ্রীমা ও পল রিসার ১৯২০ সালের ২৪শে এপ্রিল পন্ডিচেরীতে ফিরে আসেন এবং তখন থেকেই স্থায়ীভাবে শ্রীমা পন্ডিচেরীতে থেকে যান। 

১৯২০ সালে শ্রীমার আগমনের পর থেকেই পন্ডিচেরীতে শ্রী অরবিন্দ আশ্রমের সূচনা হয়। যে সাধনার দ্বারা দিব্যজীবন সৃষ্টি হবে, সাধকরা কীভাবে জীবন যাপন করলে তা সম্ভব হতে পারবে, শ্রী অরবিন্দের অনুমতি নিয়ে শ্রীমা তখন থেকে তারই সূত্রপাত করে দেন পন্ডিচেরী শ্রী অরবিন্দ আশ্রমে। তখন থেকেই শ্রীমা হয়ে যান ‘মা’। ১৯২২ সালের ১লা জানুয়ারী থেকে গৃহস্থালীর সম্পূর্ণ দায়িত্ব মা নিজে নিয়ে নেন এবং ১৯২৬ সালে ২৪শে নভেম্বর প্রথম আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। 

মায়ের সাধনা তখন দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। তিনি এ ব্যাপারে ডায়েরিতে লিখছেন (শ্রীমার ডায়েরী থেকে ডক্টর পশুপতি ভট্টাচার্যের অনুবাদ পুরোপুরি তুলে দেওয়া হল)–

আমার মনে আছে, সেটা ১৯২৬ সাল, যখন শ্রী অরবিন্দ আমার উপরে এখানকার সমস্ত কাজের ভার অর্পণ করলেন, কারণ তিনি তখন থেকে নিজেকে অন্তরালবর্তী করে রেখে অতিমানস চেতনার অভিব্যক্তিকে বাস্তবে ত্বরান্বিত করবার জন্য গভীর সাধনার মধ্যে নিমগ্ন হবেন এখানে যে কয়জন ছিল, তাদের সাহায্য করা ও পরিচালনা করার ভার আমায় দিয়ে তিনি তাদের ডেকে সে কথা জানিয়ে দিলেন, আর বললেন যে আমি তাঁর সংস্পর্শে থেকে তাঁরই ইচ্ছা অনুযায়ী সব কাজ করব এরপর থেকেই হঠাৎ দেখি যে সবকিছুই চটপট একটা নুতন আকার নিয়ে আশ্চর্য্য ভাবে গড়ে উঠছে অসাধারণ স্পষ্টরূপে উৎকৃষ্ট রকমের অনুভূতিগুলি ঘটছে নানা দেবসত্ত্বাদের সঙ্গে সংযোগ হয়ে নানাবিধ অঘটন ঘটতে লেগেছে মোটের উপর অনুপম অনুভূতির পর অনুভূতি আসছে, যাতে কাজ অনায়াসে অনেকখানি এগিয়ে যাচ্ছে তাড়াতাড়ি উন্নতির পর উন্নতি প্রকাশ পাচ্ছে

একদিন শ্রী অরবিন্দের কাছে গিয়ে খুব উদ্দীপনার সঙ্গে এই অগ্রগতির খবর তাঁকে জানিয়ে দিলাম শ্রী অরবিন্দ আমার দিকে চেয়ে শান্তভাবে বললেন,”হ্যাঁ, এগুলো হল অধিমানসের ক্রিয়া তা ভালই হচ্ছে, তুমি এখন এমন সব অঘটন ঘটাতে পারবে, যাতে সারা জগতে প্রখ্যাত হয়ে উঠে পৃথিবীর সবকিছু ওলটপালট করে দেবে”— তারপর একটু হেসে বললেন,”এতে তোমার সাফল্য আসবে কিন্তু এসব হল অধিমানসের ক্রিয়া এমন সাফল্য আমরা তো চাইছি না, আমরা চাইছি অতিমানসের অভিব্যক্তি এই পৃথিবীতে অতিমানসের প্রতিষ্ঠা তার জন্য আমাদের ঐ সব সাফল্য ত্যাগ করা চাই আমাদের সব আপাত লব্ধ সাফল্যকে বর্জন করে চলতে হবে যাতে নূতন অতিমানস জগতের পূর্ণ অভ্যুদয় আসতে পারে

আমার অভ্যন্তর চেতনাতে তখনই ব্যাপারটা বুঝে নিলাম কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ঐ সব আশ্চর্য দৈবক্রিয়া থেমে গেল… তারপর থেকে নতুন করে নতুন কাজ শুরু হল অন্য স্তরে

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Mirra Alfassa

আরো দেখুন