দত্তক নিয়েও উন্নয়ন করেননি আলুওয়ালিয়া, ক্ষোভে হাতিঘিষা গ্রাম

পাঁচদশক আগে সমাজ বদলের স্বপ্ন দেখেছিলেন কানু সান্যাল। তাঁর হাত ধরেই নকশাল আন্দোলন অন্যমাত্রা পায়। কানু সান্যাল পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছেন ১১ বছর আগে। ২০১৪ সালেলোকসভা ভোটে জেতার পর কানুবাবুর বাড়িতে গিয়ে হাতিঘিষা গ্রাম পঞ্চায়েতকে আদর্শগ্রামে রূপায়িত করার কথা ঘোষণা করেছিলেন দার্জিলিংয়ের তৎকালীন এমপি বিজেপির (BJP) সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া (Surinderjeet Singh Ahluwalia)। অনেকে আশায় বুকবেঁধে স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু কিছুই হয়নি। এখনও সেই হাতিঘিষা গ্রাম ধুঁকছে। মৃতপ্রায় বললেও অত্যুক্তি হবে না। বিধানসভা ভোটযুদ্ধের ময়দানে এ নিয়ে চলছে জোর চর্চা।
শিলিগুড়িতে (Siliguri) হাতিঘিষা গ্রাম (Hatighisa Village) পঞ্চায়েতের অন্তর্গত গ্রামগুলির মধ্যে সেবদুল্লাজোত অন্যতম। ১৯৭৯ সাল থেকে এখানে থাকতেন নকশাল আন্দোলনের অন্যতম নেতা কানুবাবু। ২০১০ সালে ২৩ মার্চ বাড়ি থেকে তাঁর ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয়। সেই বাড়ি বর্তমানে সিপিআই (এমএল)’র পার্টি অফিস। ২০১৪ সালে ২১ নভেম্বর সেই অফিসে যান আলুওয়ালিয়া। কানু সান্যাল মেমোরিয়াল ট্রাস্টের তথা সিপিআই (এমএল)’র সদস্যা দীপু হালদার বলেন, ওইদিন এমপি বলেছিলেন, কানুবাবু সশস্ত্র আন্দোলন করে গ্রামে বদল আনতে পারেননি। তাঁর স্বপ্ন পূরণ হয়নি। তিনি চান এই গ্রামটি দত্তক নিয়ে হাল ফেরাতে। এ জন্য তৎকালীন এমপি গোটা গ্রাম পঞ্চায়েত দত্তক নিয়েছিলেন। সেই প্রতিশ্রুতি এখনও অধরা। গ্রাম যে তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই রয়েছে।
হাতিঘিষা গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস থেকে পাকা রাস্তা দিয়ে কিছুটা এগলেই সেবদুল্লাজোত। রাস্তার একপাশে মাঞ্ঝা নদী। নোংরা জল। আরএক পাশে বাঁশঝাড়, সুপারি, কলা, পাকুর প্রভৃতি গাছ। রাস্তার পাশে থাকা সজলধারা প্রকল্পের পাম্প বিকল। স্ট্যান্ডপোস্ট দিয়ে পড়ে না জল। বিদ্যুতের খুঁটিতেও নেই বাতি। গ্রামবাসীরা বলেন, এখানকার রাস্তা, নিকাশি, পানীয় জল, বিদ্যুৎ প্রভৃতি চাঙ্গা করে এই গ্রামকে আদর্শগ্রামে পরিণত করার স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল। কিন্তু এখনও মাঞ্ঝা নদীর নোংরা জল পান করতে হয়। নদীতে স্নান করার পর সেখানেই বদলাতে হয় পোশাক। নদীর পাড়ে বাথরুমেরও ব্যবস্থা নেই। কেউ কেউ কুয়োর জলে নাওয়া খাওয়া সারেন। এ জন্য পেটের রোগ লেগেই রয়েছে। আর সন্ধ্যা নামতেই গোটা গ্রাম অমাবস্যার অন্ধকারে ডুবে যায়। তখন রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতেই গা ছমছম করে।
শুধু সেবদুল্লাজোত নয়, গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত বাকি গ্রামগুলির হালও একই। জমিদারগুড়ি, হোহাসিং, মেরিভিউ, বীরসিং প্রভৃতি সহ ১৬টি সংসদ নিয়ে এই গ্রাম পঞ্চায়েত গঠিত। বর্তমানে এখানকার ভোটার সংখ্যা প্রায় ২৪ হাজার। পাঁচটি চা বাগান, ১২টি প্রাথমিক স্কুল, ১৫টি এসএসকে, একটি হাইস্কুল, ১৬টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র এবং তিনটি উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। চা বাগানের পাশাপাশি কৃষি ও দিনমজুরের পেশার সঙ্গে যুক্ত গ্রামবাসীরা। এখনও ১০ শতাংশ বাড়িতে শৌচাগার নেই। গ্রামবাসীদের একাংশ বলেন, এই পঞ্চায়েতকে ‘ডিজিটাল গ্রামে’ রূপান্তরিত করার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। ফ্রি ওয়াইফাই জোন গড়া, ইন্টারনেট পরিষেবাকে চাঙ্গা করে এই পঞ্চায়েতকে নতুন রুপ দেওয়ার স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল।
গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান সিপিএমের (CPM) জ্যৈষ্ঠমোহন রায় বলেন, দত্তক নেওয়ার পর পানীয় জলের সমস্যা মেটানো, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ব্যাঙ্ক প্রভৃতি গড়ার প্রস্তাব এমপি’কে দিয়েছিলাম। কিন্তু কিছুই হয়নি। এ ব্যাপারে এমপি’কে চিঠি দিয়েও কোনও লাভ হয়নি। শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা তৃণমূল কংগ্রেসের কাজল ঘোষও বিজেপির বিরুদ্ধে ভাঁওতাবাজির অভিযোগ তুলেছেন।
বিধানসভা ভোটের ময়দানে এ নিয়ে প্রশ্নের মুখে পদ্ম শিবির। যদিও বিজেপির শিলিগুড়ি সাংগঠনিক জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনোরঞ্জন মণ্ডলের দাবি, রাজ্য সরকারের অসহযোগিতার জেরেই ওই গ্রাম পঞ্চায়েত আদর্শগ্রামে পরিণত হয়নি।