পিসি সরকারের যে জাদু কাঁপিয়ে দিয়েছিল বিবিসির অফিস

হঠাৎ শত শত দর্শকের টেলিফোনে বিবিসি’র স্যুইচবোর্ড কেঁপে উঠেছিল। সময়টা ছিল ১৯৫৬ সালের ৯ই এপ্রিল রাত সোয়া নটা। যুক্তরাজ্যের দর্শকরা মনে করেছিলেন, তখনই হয়তো তারা তাদের টেলিভিশনের পর্দায় ভয়াবহ খুনের ঘটনা প্রত্যক্ষ করলেন। সবাই ভড়কে গিয়েছিলেন। আতংকিত হয়ে তারা টেলিফোন করছিলেন বিবিসিতে।
বলা যাক ঘটনাটি। কসাইখানায় যেখানে মাংস কাটা হয়, সে রকম একটি টেবিলে রাখা হয়েছিল সতেরো বছর বয়সি এক তরুণীকে। আর রহস্যময় চেহারার এক জাদুকর টেবিলের উপর রাখা ঐ তরুণীর শরীর ধারালো ব্লেড দিয়ে দ্বিখন্ডিত করে মাংস কাটছেন। এই পরিস্থিতি এমন একটা উত্তেজনা তৈরি করেছিল যে, কিছু একটা ভুল হয়েছে বলে মনে করেছিলেন অনুষ্ঠান পরিচালন কমিটির সদস্যরা।
কারণ জাদুকর এবং তার সহকারী ঐ তরুণীকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। তরুনীর শরীর দ্বিখন্ডিত রেখেই জাদুকর তার মুখ এবং মাথা কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দেন। খানিকটা ঘাবড়ে গিয়েই উপস্থাপক রিচার্ড ডিম্বলবি ক্যামেরার সামনে এসে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। এর ফলে, আতংকিত দর্শকদের টেলিফোনের ঝড় উঠেছিল বিবিসির অফিসে। বিবিসি’ প্যানোরমা তরফে এই অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করা হয়েছিল। আর শ্বাসরুদ্ধকর সেই জাদু দেখাচ্ছিলেন জাদুসম্রাট পি সি সরকার।
পশ্চিমাদের কাছে এই অনুষ্ঠানকে পি সি সরকারের জন্য একটা অভ্যূত্থান বলা যায়। কারণ সে সময় লন্ডনের ডিউক অব ইয়র্ক থিয়েটার তিন সপ্তাহের জন্য ভাড়া নেয়া হয়েছিল পি সি সরকারের জাদু প্রদর্শনের জন্য। প্রথমে দর্শক পেতে তাঁকে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল।
কিন্তু প্যানোরমার সেই অনুষ্ঠানটি আলোড়ন সৃষ্টি করে তাঁর জন্য একটা বড় সুযোগ তৈরি করে দেয়। তিনিও সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন।
আকষ্মিকভাবে উপস্থাপক যে মাঝপথে অনুষ্ঠান শেষ করে দিয়েছিলেন, সে ব্যাপারে অনুষ্ঠান কর্তৃপক্ষের আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যায় বলা হয়েছিল যে, বরাদ্দ করা বা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মি: সরকার তাঁর জাদু শেষ করতে পারেননি। তাঁর জাদু অতিরিক্ত সময়ে চলে যাচ্ছিল।
এই যুক্তি দিয়ে কর্তৃপক্ষ বলেছিল, পরিস্থিতির কারণে ধারালো ব্লেড দিয়ে তরুনীর শরীর দ্বিখন্ডিত করার বিষয়টি সেকারণেই সেভাবে রেখেই অনুষ্ঠান শেষ করা হয়েছিল।
পরদিন লন্ডনে সংবাদপত্রে প্রথম পৃষ্ঠায় খবর হয়েছিল যে, টিভি পর্দায় মর্মাহত করার মতো একজন তরুণীকে দ্বিখন্ডিত করার ঘটনা দেখানো হয়েছে। কিন্তু পি সি সরকারকে যারা চিনতেন, তারা জানতেন যে, তিনি সময় মেনে চলতেন। নির্ধারিত সময়ের বাইরে তিনি কোনভাবে যেতেন না। তবে প্যানোরমা সেই অনুষ্ঠানের পর লন্ডনে পি সি সরকারের তিন সপ্তাহের শো’র সব টিকেট বিক্রি হয়ে গিয়েছিল।