উত্তরবঙ্গ বিভাগে ফিরে যান

রান্না ঘরে আগুন লাগলে মা-বোনেরা ছেড়ে কথা বলবে না, হুশিয়ারি মমতার

March 7, 2021 | 4 min read

প্রার্থিতালিকা ঘোষণার পর উত্তরবঙ্গে প্রথমবার এলেন মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে আজ, রবিবার দুপুরে শিলিগুড়িতে ‘সিলিন্ডার মিছিল’ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। রান্নার গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির (Fuel price Hike) কোপ পড়েছে মধ্য-নিম্নবিত্তের হেঁসেলে। সেই হেঁসেলের ভার যাঁদের কাঁধে, বাংলার সেই মা-বোনেরা মূল্যবৃদ্ধির জেরে দুর্ভোগের সম্মুখীন।

দাম বৃদ্ধিতে জেরবার সেই মা-বোনদের সঙ্গে নিয়েই আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রাক্কালে দার্জিলিং মোড় থেকে হিলকার্ট রোড ধরে হাসমি চক (ভেনাস মোড়) পর্যন্ত মিছিল করেন মমতা। মিছিলে ছিলেন মিমি চক্রবর্তী, নুসরাত জাহান, দোলা সেন, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য-সহ তৃণমূল নেতৃত্ব। হাতে হাত ধরে, প্ল্যাকার্ড, গ্যাস সিলিন্ডারের কাট আউট হাতে আজ পদযাত্রা করেন তৃণমূল নেত্রী। প্ল্যাকার্ডে কেন্দ্রকে কটাক্ষ করে লেখা, তোমার মুখে কী আছে? পেট্রোলের দাম বেড়েছে। ডিজেলের দাম বেড়েছে। রান্নার গ্যাসের দাম বেড়েছে।

এদিন পদযাত্রায় প্ল্যাকার্ড, কাট আউটের ছত্রে ছত্রে ছিল কেন্দ্রকে আক্রমণের হাতিয়ার। পদযাত্রায় গ্যাস সিলিন্ডারের কাট আউটে লেখা, দেখো আমি বাড়ছি মাম্মি। শিলিগুড়ির সভায় এদিন মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কুৎসা, অপপ্রচার করতে আসেন। আজকে প্রচার করতে এসেছেন। কেন পেট্রোল, ডিজেলের দাম বেড়েছে। বাংলার সরকার বিনা পয়সায় চাল দিচ্ছে। আর সেটা ফোটাতে গেলে লাগছে ৯০০ টাকার গ্যাস।’

এদিন তিনি বিজেপি (BJP) সরকারকে কটাক্ষ করে আরো বলেন, ‘বাংলায় রান্নায় গ্যাসের দাম বাড়িয়ে বলছে মা বোনেদের সম্মান নেই। বাংলায় মেয়েরা রাত ১০টায় বেরোতে পারে, ভোর ৪টের সময় বেরোতে পারে। উত্তরপ্রদেশে মেয়েরা দুপুর ৩টে-তেও বেরোতে পারে না।’ ‘কোভিড ভ্যাকসিনে নিজের মুখ। উনি তার মানে খুনি।’ মোদিকে কটাক্ষ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বিজেপিকে ব্যঙ্গ করে বলেন, ‘লজ্জা, ঘেন্না, ভয় তিন থাকতে নয়।’ রাজ্যবাসীকে আস্বস্ত করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘রাজ্যে একটা সরকার আছে। তিস্তা উত্তরবঙ্গের, বাংলার অংশ। আমার রাজ্যকে বিক্রি করে দেবে এত সস্তা নয়।’ মোদিকে চ্যালেঞ্জ করে মমতা বলেন ‘বাংলার নির্বাচনের আগে ওয়ান টু ওয়ান মমতার সঙ্গে লড়ো।’

বিজেপির অপপ্রচারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠে এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘রোজ রোজ মিথ্যে কথা মানুষ নেবে না। আগের বার বলেছিল ১৫ লক্ষ টাকা দেবে। দিয়েছে? এবার বলতে এলে উল্টো দেবেন। ভোট দেবেন তৃণমূলকে।’ সবশেষে তিনি প্রশ্ন করেন, ‘খেলা হবে? জেতা হবে? দেখা হবে?

আজ মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বক্তব্যের কিছু অংশ :

উত্তরবঙ্গে রান্নার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়ে মিছিল। মমতার আক্রমণ, প্রধানমন্ত্রী বাংলায় কুৎসা করতে আসেন। প্রধানমন্ত্রী বাংলায় প্রচার করার আগে জবাব দিন কেন রান্নার গ্যাসের দাম বেড়েছে, কেন তেলের দাম বাড়ছে? কেন ৯০০ টাকায় গ্যাস কিনতে হচ্ছে? নরেন্দ্র মোদী আপনার দাম কত টাকা? মমতা বললেন, বাংলায় পরিবর্তন হবে না, দিল্লিতে পরিবর্তন হবে। আগামী দিনে পাঁচটি রাজ্যের নির্বাচনে সবকটিতে হারবে বিজেপি।

বাংলায় রাত ১০ টায় মহিলারা বেরোতে পারেন, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, বিহারে মেয়েরা বেরোতে পারেন না। তাঁদের নিরাপত্তা নেই। বাংলায় মহিলাদের নিরাপত্তা আছে। দিল্লি তো বিক্রি করে দিয়েছেন, ভারতীয় রেল বিক্রি করে দিয়েছেন, সেনা, এয়ার ইন্ডিয়া বিক্রি করে দিয়েছেন মোদী। লজ্জা হওয়া উচিত। কোভিডে এত লোক মারা গিয়েছেন, তখন একদিনও দেখতে আসেননি মোদী। তখন ভয়ে ঘরে বসেছিলেন। আমি সারা রাজ্যে ঘুরে দেখেছি, হাসপাতালে গিয়েছি। কোভিডের টিকায় মোদীর মুখের ছবি দেওয়া হয়েছে, রাস্তা, বাড়ি সব প্রধানমন্ত্রীর নামে।

আপানারা তো বড় তোলাবাজ। রেল, এয়ার ইন্ডিয়া, কোল ইন্ডিয়া বিক্রি করলে কত তোলাবাজি হয়? উজ্জ্বলা যোজনায় দূর্নীতি হয়েছে। সারা ভারত একটি সিন্ডিকেটের কথা জানে, মোদী-শাহ সিন্ডিকেট।

রান্না ঘরে আগুন লাগলে মা বোনেরা ছেড়ে কথা বলবে না, মনে রাখবেন। সারা পৃথিবীতে তেলের দাম কমলেও এখন দেশে তেলের দাম আকাশছোঁয়া। লোকসভা ভোটে উত্তরবঙ্গে এত আসন পেয়েছিল বিজেপি, তারপর কী করেছে কেন্দ্রীয় সরকার? হঠাৎ করে বলে তিস্তার জল দিয়ে দাও, একবার রাজ্যের সঙ্গে কথাও বলার প্রয়োজন করলেন না। প্রধানমন্ত্রী উল্টোপাল্টা মিথ্যা কথা বলছেন। প্রধানমন্ত্রীর আসনটিকেও সম্মান করছেন না উনি। উত্তরবঙ্গে একাধিক উন্নয়নের কাজ করেছে রাজ্য সরকার। কেন্দ্রীয় সরকার কিছু করেনি।

দেখে দেখে বাংলা বলেন মোদী। নরেন্দ্র মোদীকে সামনাসামনি তর্কে বসার চ্যালেঞ্জ মমতার। ভোটের আগে খেলা হবে, বললেন মমতা। কন্যাশ্রী, শিক্ষাশ্রী দেবে তৃণমূল, তোমার পাকাবাড়ি দরকার হবে না, রাজ্য সরকার পাকা বাড়ি বানিয়ে দেবে। বিজেপি বলেছিল সব চা বাগান খুলে দেবে, একটাও খুলতে পারেনি। রাস্তা তৈরি করে দিয়েছে রাজ্য সরকার, এখন কেন্দ্র বলছে রাস্তা তৈরি করবে।

নির্বাচনের আগে উজ্জ্বলা, আর নির্বাচনের পরে জুমলা। সারা দেশের মানুষকে বিনামূল্যে গ্যাস দিতে হবে। শুধু মিথ্যে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙে, স্বামী বিবেকানন্দকে ঠাকুর পদবী দিয়ে বাংলার ঐতিহ্যকে বোঝা যায় না। আমরা সবাইকে নিয়ে চলি। হিন্দু মুসলমান সকলকে নিয়ে আমাদের সরকার চলে। রোজ রোজ প্রধানমন্ত্রীর মিথ্যে কথা মানুষ শুনবে না। আগের বার নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ১৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে, দিয়েছিলেন? দেননি। এ বারেও বলবেন, কিন্তু আপনারা ভোটটা উল্টে দেবেন। তৃণমূলকে দেবেন।

এই নির্বাচন অস্তিত্ব রক্ষা করার লড়াই, এ বার যদি অস্তিত্ব রক্ষা করতে না পারলে বাংলা ভাগ করবেন মোদী। মোদী ভাষণ দেবেন শুনলেই সকলে ভয়ে ভয়ে থাকে। একগাড়ি কয়লার কত দাম, একটা ট্রেনের কত দাম। লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার দূর্নীতি হয়েছে। মানুষের রান্না ঘরে আগুন জ্বলছে। মানুষের সমস্যার কথা বলতে এসেছি। ভোট চাইতে আসিনি। মোদী যখন ফাঁকা ব্রিগেডে বক্তৃতা করেন, তখন আমি রাস্তায় থাকি। রাস্তাই আমাকে রাস্তা দেখায়।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Mamata Banerjee, #Narendra Modi, #fuel price hike

আরো দেখুন