দক্ষিণবঙ্গ বিভাগে ফিরে যান

ভোটের ফল প্রমাণ করেছে, মমতাই জঙ্গলমহলের মা

May 5, 2021 | 2 min read

‘জঙ্গলমহলের মা’। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) সম্পর্কে উর্দি পরা এসপি ভারতী ঘোষের এই মন্তব্যে একসময় তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। সেই ভারতী ঘোষ গেরুয়া শিবিরে ভিড়ে তৃণমূলনেত্রীকে অনেক গালমন্দ করলেও তাঁর সেই কথাটা রয়ে গিয়েছে। এখন অনেকেই বলছেন, মমতাকেই ‘মা’ বলে মেনেছে জঙ্গলমহল। তাই ঝাড়গ্রাম থেকে পুরুলিয়া জেলার সমগ্র জঙ্গলমহল তাঁকেই আশীর্বাদ করেছে। 
ঝাড়গ্রাম লোকসভা আসনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছিল বিজেপি (BJP)। এবার জেলার চারটি আসনেই জিতেছে তৃণমূল (TMC)। এমনকী, দিলীপ ঘোষ যে গোপীবল্লভপুর বিধানসভার কুলিয়ানা বুথের ভোটার, সেখানেও বিজেপি হেরেছে। এর থেকেই প্রমাণ হয়েছে,ঘরের ছেলের কথা তাঁর গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই বিশ্বাস করেননি।


লোকসভা নির্বাচনে ধাক্কা খাওয়ায় জঙ্গলমহলের হাল ধরেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। প্রার্থী বাছাইয়েও ছিল তীক্ষ্ণ নজর। ঝাড়গ্রামের মতো জেনারেল আসনে তিনি চুনীবালা হাঁসদার অভিনেত্রী মেয়ে বীরবাহাকে প্রার্থী করেছেন। ঝাড়খণ্ড পার্টি(নরেন)এর লোকজনকে পাশে পাওয়াই ছিল উদ্দেশ্য। হাতেনাতে সাফল্যও এসেছে। আবার বাঁকুড়া জেলার প্রাক্তন সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তীকে শহর থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে তালডাংড়ায় প্রার্থী করেছেন। কারণ আদিবাসীদের মধ্যে অরূপবাবু যথেষ্ট জনপ্রিয়। তার ফলে শুধু অরূপবাবুই জেতেননি, বাঁকুড়া জেলার জঙ্গলমহলের তিনটি আসনই তৃণমূল পেয়েছে। পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডিতে ২০ বছর বিধায়ক ছিলেন কংগ্রেসের নেপাল মাহাত। বর্ষীয়ান কংগ্রেস বিধায়কের বিরুদ্ধে যুবনেতা সুশান্ত মাহাতকে দাঁড় করিয়ে কিস্তিমাত করেছেন। 
জঙ্গলমহলে একমাত্র বলরামপুরে তৃণমূল হেরেছে। তাও মাত্র ৪২৩ ভোটে। এছাড়া ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলার জঙ্গলমহল বলে পরিচিত  সর্বত্রই  ঘাস ফুল ফুটেছে।


শুধু বিচক্ষণতার সঙ্গে প্রার্থী ঠিক করাই নয়, জঙ্গলমহলের ক্ষোভ দূর করতে মমতা একের পর এক পদক্ষেপ নিয়েছেন। তার মধ্যে মাওবাদী হানায় মৃতের আত্মীয়কে চাকরি ও আর্থিক অনুদান দেওয়াই ছিল তাঁর ‘মাস্টার স্ট্রোক’। লোকসভা ভোটের আগে আত্মসমর্পণকারীদের ‘সরকারি প্যাকেজ’ দেওয়া নিয়ে আরএসএসের কৌশলী প্রচার ছিল, মাওবাদীরা পুনর্বাসন পেল, কিন্তু যাঁরা মরল তাঁদের পরিবার কিছু পেল না। তার প্রভাবও পড়েছিল লোকসভা ভোটে। বিষয়টি নজরে আসা মাত্র মমতা ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আর্থিক অনুদান ও চাকরির ঘোষণা করেছিলেন। তবে, তা বিজেপির প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার মতো ঘোষণা নয়। একেবারে যেমন কথা তেমন কাজ। ঘোষণার পরই ক্ষতিগ্রস্তদের চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে আর্থিক অনুদান ও চাকরি।


বামজমানার অবসানের সঙ্গে মাওবাদী হামলা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সেই সময় যাঁরা মারা গিয়েছিলেন তাঁদের বেশিরভাগই ছিলেন সিপিএমের নেতা অথবা কর্মী। তাঁদের আত্মীয়রাই মমতার জমানায় চাকরি পেয়েছেন। সিপিএম-বিজেপি-কংগ্রেস নেতৃত্ব যতই দলতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অভিযোগ তুলুক না কেন, জঙ্গলমহলের মানুষ এসবের মধ্যে দিয়ে বুঝতে পেরেছেন, দলমত নির্বিশেষে পাওয়া যায় সরকারি প্রকল্পের সুযোগ। তারই প্রতিফলন ঘটেছে এবারের ভোটে।


একটা সময় শুকনো কাঠ, বাবুইঘাসের দড়ি আর চরম সঙ্কটে পিঁপড়ের ডিমই ছিল জঙ্গলমহলের সম্বল। বন্দুকের গুলির শব্দে ঘুম ভাঙত মাঝরাতে। তারপর এক বুক আতঙ্ক নিয়ে রাত জাগা। সেসব এখন অতীত। ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড, অন্ধ্রপ্রদেশে দাপট দেখালেও মাওবাদীরা পশ্চিমবঙ্গে ঢোকার সাহস দেখায় না। তাই অনাবিল শান্তি আর মাখনের মতো মসৃণ রাস্তার দৌলতে জঙ্গলমহল এখন অন্যতম ট্যুরিস্ট স্পট। এমনকী, যাঁরা এক সময় ‘কাজের সময় কাজি, কাজ ফুরোলেই কিষেনজি’ বলতেন তাঁরা আর ‘জঙ্গলমহলের হাসি’ নিয়ে কটাক্ষ করার সাহস পান না। 


মমতার জন্যই জঙ্গলমহল উৎসব অন্য মাত্রা পেয়েছে। আর পাঁচটা উৎসবের চেয়ে আলাদা হয়ে উঠেছে। জঙ্গলমহল উৎসব মানেই চাকরির সম্ভাবনা। খেলায় সফল হলেই পুলিসে চাকরির সুযোগ। মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত স্বল্প শিক্ষিত যুবক-যুবতীদের মধ্যে খেলার প্রতি আকর্ষণ যেমন বাড়িয়েছে, তেমনই তাঁদের সামনে খুলে দিয়েছে নতুন দিগন্ত। জঙ্গলমহলে চাল থেকে চাকরি, সবই দিয়েছে মমতার সরকার। তাই বিজেপির ‘ধাপ্পা’য় লোকসভা ভোটে জঙ্গলমহল বিভ্রান্ত হলেও বিধানসভা ভোটে শুধরে নিল।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#mamata banerjee bengal verdict, #jangalmahal

আরো দেখুন