পাখিদের খাদ্যভাসের কথা ভেবেই রাজপথে আম-জাম-পেয়ারা গাছ পুঁতছে পুরসভা
আম্পান ও যশ ঘূর্ণিঝড়ে শহরে উপড়ে পড়া গাছের ঘাটতি মিটিয়ে অক্সিজেনের সঙ্গে পাখিদের খাবারের জোগান দিতে প্রচুর ফলের গাছ লাগাচ্ছে কলকাতা পুরসভা (KMC)। পাখিদের খাদ্যভাসের কথা মাথায় রেখে মহানগরে আম, কাঠাল, সবেদা, জাম, পেয়ারা, কুল, আমলকির বড়জাতের চারা পোঁতা শুরু হচ্ছে।
প্রত্যেকটির উচ্চতা আট থেকে দশফুট যেমন হবে তেমনই লোহার ঘেরাটোপে থাকবে শিশুগাছগুলি। দৈনন্দিন নজরদারিও করবেন পুরকর্মীরা। রাজপথের ধারে, জলাশয়ের পাশে ও বিভিন্ন ছোট-বড় পার্কের চারপাশে ফলের চারা লাগানোর কাজ শনিবার থেকেই শুরু হয়েছে। পুরসভার মুখ্যপ্রশাসক ও পরিবহণমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, “আম্পানে শহরে বড় পনেরো হাজার গাছ উপড়ে পড়েছিল। যশে ৪০-৫০টি পড়েছে। পুরসভা প্রায় ৫০ হাজার গাছ নিম-দেবদারু লাগিয়েছে। এখন পাখিদের জন্য ফলের গাছ বসানো শুরু হচ্ছে।”
পুরসভার উদ্যান বিভাগ প্রথম ধাপে শহরে পাঁচ হাজার ফলের চারাগাছ বসাতে শুরু করেছে। তবে কমপক্ষে ২৫ হাজার ফলের গাছ বসানোর টার্গেট নিয়ে বরোভিত্তিক কর্মীরা এদিন থেকেই মাঠে নেমেছেন বলে জানিয়েছেন পুরপ্রশাসক বিধায়ক দেবাশিস কুমার। অক্সিজেন ঘাটতি মেটাতে গাছ পোঁতার পাশাপাশি কার্বন কমাতে আরও বেশি সংখ্যায় শহরে গ্রিন বাস চালুর কথা জানিয়েছেন পরিবহণমন্ত্রী।
পরপর দু’বছরে দু’টি বড় ঘুর্ণিঝড় (Amphan and Yaas) মহানগর ও শহরতলিতে প্রচুর ফলের গাছের ক্ষতি করে দিয়েছে। স্বভাবতই মহানগরের আকাশে উড়ে বেড়ানো হাজার হাজার পাখি প্রাকৃতিক খাদ্যভাণ্ডার ওই ফলগাছগুলি না থাকায় চরম সংকটে পড়েছে। তাই খাদ্যসংকটের ধাক্কায় মহানগরের পাখিগুলি পাশের জেলায় বা ভিন রাজ্যের দিকে সরে যাচ্ছে বলে পরিবেশবিদরা জানাচ্ছেন। পরিবেশবিদ সৌমেন্দ্রমোহন ঘোষের কথায়, “পাখিরা উড়ে এলেও লকডাউনে শহর বন্ধ থাকায় সাধারণ খাদ্য চাল-ডাল কিছুই মিলছে না। ফলের গাছও নেই।” তবে পুরসভা ফের ফলের গাছ লাগানো শুরু করায় বাস্তুতন্ত্র ও জীবভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলে মনে করছেন পক্ষিবিশেষজ্ঞরাও।
এদিন দেশপ্রিয় পার্কে পরিবেশ দিবসে মেহগনির চারার পাশাপাশি সবেদা গাছ লাগিয়েছেন স্বয়ং দেবাশিস কুমার। পরে তিনি জানান, “পাখিদের খাদ্যাভাসের কথা মাথায় রেখে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়েই আম, জাম, সবেদা, আমলকির মতো গাছ লাগানো হচ্ছে। তবে এই গাছগুলি ঠিক চারা নয়, একটু বড় জাতের, আট থেকে দশফুট উচ্চতার।” কিন্তু প্রাথমিক সমীক্ষার তথ্য, উত্তর ও মধ্য কলকাতায় ‘কংক্রিটের জঙ্গল’ বেশি হওয়ায় ফলের গাছ বসানোর জমি খুবই কম। তুলনায় দক্ষিণ কলকাতায় পরিকল্পিত নগরায়নের ছোঁয়া থাকায় ফলের গাছ বসানোর জায়গা কিছুটা আছে। পুরকর্তারা স্বীকার করছেন, সংযোজিত এলাকা যাদবপুর, বেহালা, টালিগঞ্জেই সবুজ ও ফলের গাছ দুটোই বেশি সংখ্যায় বসানোর পরিসর রয়েছে।