আন্তর্জাতিক বিভাগে ফিরে যান

নেতানিয়াহুকে মসনদচ্যুত করলেন, কে এই বেনেট?

June 14, 2021 | 2 min read

১২ বছর পরে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরলেন বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। দেশের রাজনৈতিক ডামাডোলের মধ্যে নতুন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিলেন দক্ষিণপন্থী ইহুদি নাফতালি বেনেট। বেশ কিছু দিন ধরে ইজরায়েলের রাজনৈতিক মহলে ডামাডোল চলছিল। নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছিল। রবিবার ভোটাভুটিতে হেরে যান নেতানিয়াহু। তাঁর পক্ষে ভোট পড়ে ৫৯টি। বিপক্ষে ভোট পড়ে মাত্র একটি বেশি।

প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়া ৪৯ বছরের বেনেট বলেন, ‘‘আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, এই নতুন সরকার সব দলকে সঙ্গে নিয়েই দেশের উন্নতির কাজ করবে। আমরা গোটা ইজরায়েলের প্রতিনিধিত্ব করব।’’

ইজরায়েলের ১২০ আসনের পার্লামেন্টে মাত্র ৬ আসন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হলেন নাফতালি বেনেট। উগ্র জাতীয়তাবাদী দলের এই নেতা মধ্যপন্থীদের সঙ্গে জোট গড়তে রাজি হওয়ায় টলমল হয়ে গেল বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর চেয়ার। ডানপন্থী নেতানিয়াহুর দল ও সরকারে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসা বেনেটের এই উত্থান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আগ্রহের জন্ম দিয়েছে।

একসময়ের প্রযুক্তি উদ্যোক্তা বেনেটের ইজরায়েলের রাজনীতিতে আবির্ভাব ডানপন্থী, উগ্র ধর্মীয় ও জাতীয়তাবাদী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে। রাজনীতির পুরো সময়েই বেনেট ডানপন্থী ভোটারদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করেছেন। এখন ইয়েমিনা পার্টির নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। এই দলই অধিকৃত পশ্চিম তীরের একাংশকে ইসরায়েলের অংশ হিসেবে ঘোষণা করার দাবি জানিয়ে আসছে।

আক্রমণাত্মক বক্তব্যের জন্য পরিচিত বেনেটকে ঘিরে বিতর্ক কম হয়নি। অর্থনৈতিক নীতির দিক দিয়ে তিনি অতি উদারবাদী। ইরানের বিরুদ্ধে কট্টর অবস্থান রয়েছে তাঁর। মতাদর্শের মিল থাকা নেতানিয়াহুর কয়েকটি সরকারে দায়িত্ব পালন করেছেন বেনেট। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাঁদের মধ্যে বিরোধ বাড়তে থাকে।

নাফতালি বেনেট ইজরায়েলের স্পেশাল ফোর্সের সাবেক কমান্ডো। যুক্তরাষ্ট্র বংশোদ্ভূত মা–বাবার ঘরে জন্ম তাঁর। এখন স্ত্রী গালিত ও চার সন্তানকে নিয়ে ইজরায়েলের কেন্দ্রীয় রানানা শহরে থাকেন তিনি। ২০০৫ সালে ১৪৫ মিলিয়ন ডলারে টেক স্টার্ট–আপ বিক্রি করে রাজনীতিতে সক্রিয় হন বেনেট। পরের বছর সে সময় বিরোধী দলে থাকা লিকুদ পার্টির নেতা নেতানিয়াহুর চিফ অব স্টাফ হন তিনি। এই দায়িত্ব ছাড়ার পর ২০১০ সালে বেনেট ইয়েশা কাউন্সিলের প্রধানের দায়িত্ব নেন। এই কাউন্সিল অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে কাজ করে।

এরপর ২০১২ সালে উগ্র ডানপন্থী দল জিউস হোম পার্টির নেতৃত্বে আসেন নাফতালি বেনেট। ওই সময় পতনের মুখে থাকা এই দলকে চাঙা করেন তিনি। তাঁর নেতৃত্বে পার্লামেন্টে দলটির আসনসংখ্যা বেড়ে চার গুণ হয়। এ সময় একের পর এক ফিলিস্তিনিদের বিষোদগার করে তাঁর দেওয়া বক্তব্য সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়।

২০১৩ সালে বেনেট বলেছিলেন, ফিলিস্তিনি ‘সন্ত্রাসীদের হত্যা করা উচিত, মুক্তি দেওয়া নয়’। বেশ কয়েকবার তাঁর এসব বিতর্কিত বক্তব্য আদালত পর্যন্ত গড়ায়। একবার তিনি বলেছিলেন, পশ্চিম তীর অধিকৃত নয়, কারণ এখানে কখনো ফিলিস্তিনিদের রাষ্ট্র ছিল না। তাঁর আরেক বক্তব্য নিয়েও ঝড় উঠেছিল। তিনি বলেছিলেন, ইজরায়েল–ফিলিস্তিনিদের সংঘাতের কখনো অবসান হবে না। এটাকে মেনে নিতে হবে।

নেতানিয়াহুর সরকারে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ছাড়াও অর্থ ও শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন নাফতালি বেনেট। ২০১৮ সালে জিউস হোম পার্টির নাম বদলে ইয়েমিনা করেন তিনি। এই দল নিয়ে নেতানিয়াহুর জোট সরকারে যোগ দিয়েছিলেন বেনেট। তবে ওই বছরই এই জোট ভেঙে পড়ে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Benjamin Netanyahu, #Naftali Bennett

আরো দেখুন