আন্তর্জাতিক বিভাগে ফিরে যান

পিছিয়ে গেল তালিবানের সরকার গঠন, অনিশ্চয়তায় আফগানিস্তান

September 5, 2021 | 3 min read

আগাম ঘোষণা করা সত্ত্বেও আজও আফগানিস্তানে (Afganistan) সরকার গঠন করতে পারল না তালিবান। তাদের মুখপাত্র জ়বিউল্লা মুজাহিদ বলেছেন, ‘‘নতুন সরকার গঠন এবং মন্ত্রিসভায় কারা থাকবেন, সেই ঘোষণা হবে আগামী সপ্তাহে।’’ এ দিকে, পঞ্জশির দখলে এসেছে বলে দাবি করে গত কাল কাবুলে শূন্যে গুলিগোলা ছুড়ে উল্লাসে মেতে ওঠেন তালিবান যোদ্ধারা। সেই গুলিতে বেশ কয়েকটি শিশু-সহ অন্তত ১৭ জন সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। গত কালের পরে আজও কাবুলের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন মহিলারা। সরকারে মহিলাদের অন্তর্ভুক্তি, শিক্ষা, চাকরি-সহ বিভিন্ন মৌলিক অধিকারের দাবি তোলা সেই মিছিলে কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে তালিবান। রক্তাক্ত মুখ নিয়ে নার্গিস সাদ্দাত নামে এক সমাজকর্মী অভিযোগ করেছেন, তালিবান মেরে তাঁর মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে।

রাজপথে মহিলাদের এই নিগ্রহের ঘটনায় তালিবানের ‘সহনশীল’ ভাবমূর্তি তুলে ধরার চেষ্টা আরও এক বার ধাক্কা খেল। দোহা সফরের আগে আমেরিকান বিদেশসচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, তালিবানের দেওয়া প্রতিশ্রুতি মাফিক তাদের সরকারে বিভিন্ন গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বের পাশাপাশি মহিলা ও সংখ্যালঘুদের অধিকারকে সম্মান করা, সন্ত্রাসবাদে মদত না দেওয়া, প্রতিশোধ থেকে বিরত থাকার মতো বিষয়গুলি গুরুত্ব পাবে বলেই আমেরিকা-সহ আন্তর্জাতিক মহল আশা করে। এই নিয়ে দ্বিতীয় বার সরকার গঠনের ঘোষণা পিছিয়ে দেওয়ার কারণ জ়বিউল্লা ব্যাখ্যা করেননি। তবে সরকার গঠন নিয়ে তালিবানের সঙ্গে বিভিন্ন গোষ্ঠীর আলোচনার দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটির সদস্য খলিল হক্কানি সেই বিলম্বের কারণ স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, সব পক্ষের প্রতিনিধিত্ব রেখে বিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি সরকার গড়তে চাইছে তালিবান। সেই কারণেই দেরি হচ্ছে।

হক্কানি বলেন, ‘‘তালিবান নিজেদের মতো সরকার গড়ে নিতেই পারে। কিন্তু এমন একটা সরকার গড়ায় জোর দেওয়া হচ্ছে, যেখানে সমস্ত দল, গোষ্ঠী, সমাজের সমস্ত স্তরের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব থাকবে। তালিবান একা সারা বিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।’’ বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদেশি অর্থসাহায্যের পথ খোলা রাখার বড় দায় রয়েছে তালিবানের। সেই কারণেই একটি গ্রহণযোগ্য সরকার গঠনে বাড়তি যত্ন নিচ্ছে তারা। টুইটারে হক্কানি লিখেছেন, ‘‘নিরাপত্তার বিষয়টি তালিবান খুব ভালই সামলাতে পারবে। কিন্তু একটি কার্যকর সরকার চালাতে গেলে অল্পবয়সি, শিক্ষিত আফগানদের মতামত ও সহযোগিতা দরকার। জোট সরকারের ব্যর্থতা যাতে আবার ফিরে না আসে, সেই কারণে তথাকথিত অচল রাজনীতিকদের সরিয়ে রাখতে হবে।’’ তিনি আরও জানান, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার এবং সদ্য-প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আশরফ গনির ভাই হাসমত গনি নতুন সরকারে জায়গা পাবেন। হাসমত ইতিমধ্যেই তালিবানের নেতৃত্বাধীন সরকারকে সমর্থন করেছেন।

পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আজ আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেসের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। মানবিক চাহিদা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার স্বার্থে আফগানিস্তানের সঙ্গে বিশ্বের যোগাযোগ আরও নিবিড় করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। বিবৃতিতে ইমরান বলেছেন, ‘‘এই সমস্ত পদক্ষেপ শুধু নিরাপত্তাকেই জোরদার করবে না, আফগানদের দলে দলে দেশ ছাড়া বন্ধ হবে। ফলে উদ্বাস্তু সমস্যাও ঘটবে না।’’

তালিবানের এক কম্যান্ডার গত কাল রাতে দাবি করেন, পঞ্জশির তাঁরা দখল করে ফেলেছেন। কিন্তু সেই ঘোষণার পরে উল্লসিত তালিবান যোদ্ধাদের ছোড়া গুলিতে কাবুলে ১৭ জন মারা যাওয়ায় কিছুটা অপ্রস্তুতেই পড়েছেন তালিবান নেতৃত্ব। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবর, গুলিতে আহতের সংখ্যা চল্লিশের বেশি। তালিবান মুখপাত্র জ়বিউল্লা টুইটারে লিখেছেন, ‘‘কাবুল এবং সারা দেশের মুজাহিদদের বলছি, শূন্যে গুলি চালানো থেকে বিরত থাকুন। আপনাদের হাতে অস্ত্র রয়েছে, কিন্তু তা নষ্ট করার অধিকার কারও নেই। সাধারণ মানুষেরই গুলি লাগার সম্ভাবনা বেশি। কাজেই অকারণ গুলি চালাবেন না।’’ নর্দার্ন অ্যালায়েন্সের নেতা আহমেদ মাসুদ অবশ্য পঞ্জশিরের পতনের দাবি উড়িয়ে দিয়ে টুইট করেছেন, ‘‘পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমে এমন একটা মিথ্যে খবর ঘুরছে। পঞ্জশির দখল হয়ে গেলে সেটাই হবে এখানে আমার শেষ দিন।’’

আজ কাবুলে সমাজকর্মী মহিলাদের বিক্ষোভের যে ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে কিছুটা হতভম্বই দেখিয়েছে তালিবান কর্তা ও যোদ্ধাদের। দেখা যায়, হ্যান্ডমাইক নিয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিলেন এক কর্তা। সেটি ছিনিয়ে নিয়ে কথা বলতে শুরু করছেন এক মহিলা। বিক্ষোভকারী মহিলাদের দাবি, তালিবান তাঁদের রুখতে শূন্যে গুলি চালায়, তার পরে কাঁদানে গ্যাসও ছোড়ে। তাতেও অবশ্য দমানো যায়নি মেয়েদের। ক্রমশ অশান্ত হয়ে ওঠে বিক্ষোভ। পরে ক্যামেরার সামনে হাজির হন সমাজকর্মী নার্দিস সাদ্দাত। দেখা যায়, তাঁর মাথা থেকে গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে রক্ত।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Afghanistan Crisis, #Taliban Regime

আরো দেখুন