রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

নিট মুক্ত হোক ডাক্তারির পড়াশোনা, চাইছেন বাংলার শিক্ষক- পড়ুয়াদের বড় অংশ

September 16, 2021 | 2 min read

কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশ্য ছিল, সমান মাপকাঠিতেই যাচাই করা হোক ডাক্তারি পড়তে ইচ্ছুক প্রার্থীদের। সেই লক্ষ্যেই শুরু করা হয়েছিল ডাক্তারির অভিন্ন সর্বভারতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষা বা নিট। তবে বাস্তবে দেখা গিয়েছে, এতে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেয়েছেন ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করা শহুরে পড়ুয়ারা। বিপাকে পড়েছেন আর্থসামাজিক ভাবে পিছিয়ে পড়া রাজ্য বোর্ডের পড়ুয়ারা, বিশেষত যাঁরা অ-হিন্দিভাষী। ব্যতিক্রম নয় বাংলাও।

অনেক রাজ্যেই স্থানীয় ভাষায় পড়াশোনা করা ছাত্রছাত্রীরা মেধা থাকা সত্ত্বেও নিটে সুযোগ পাননি। এর মধ্যে সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছে তামিলনাড়ু সরকার। সোমবার নিটকে এড়িয়ে সরাসরি উচ্চমাধ্যমিকের নম্বর দিয়েই যাতে ডাক্তারিতে ভর্তি হওয়া যায়, সেই মর্মে বিল পাশ করেছে তামিলনাড়ু। গরিব ও গ্রামীণ ছাত্রছাত্রীদর স্বার্থে বাংলার শিক্ষক-পড়ুয়াদের একটা বড় অংশও চাইছেন, ডাক্তারিতে ভর্তি নিট মুক্ত হোক। নিট প্রত্যাশী সল্টলেকের পার্বণী সেনগুপ্ত কিংবা বাঘাযতীনের শিবশঙ্কর নস্কর অথবা বসিরহাটের মহম্মদ রাজু মন্ডলরাও চান নিট উঠে যাক। তামিলনাড়ুর মতো সরাসরি উচ্চমাধ্যমিকের নম্বর থেকে ডাক্তারিতে ভর্তি না-হোক, আগের মতো অন্তত যেন রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা ফিরে আসে। তা হলে অন্তত তাঁদের আলাদা সিলেবাসে মনোনিবেশ করতে হয় না। যদিও এখনও স্বাস্থ্যভবন এ নিয়ে কোনও উদ্যোগ নেয়নি । স্বাস্থ্য-শিক্ষা শাখার এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘এখনও নিট এড়িয়ে জয়েন্ট এন্ট্রান্স ফিরিয়ে আনা কিংবা সরাসরি উচ্চমাধ্যমিকের ফল থেকে ডাক্তারিতে ভর্তি করার কোনও রূপরেখা নিয়ে ভাবনাচিন্তা হয়নি সরকারিস্তরে।’

অথচ লাগাতার চার-পাঁচ বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, বাংলা মাধ্যমের ছাত্রছাত্রীরা ডাক্তারিতে সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছেন। ২০১৬ থেকেই সাফল্যের হার তলানিতে ঠেকেছে রাজ্য বোর্ডের, মূলত বাংলা মাধ্যমের পরীক্ষার্থীদের। বাংলায় প্রশ্নপত্র হলেও বরাবরই দেখা যায়, ইংরেজির থেকে সে প্রশ্ন বোঝা আরও কঠিন। উত্তর দেওয়া আরও বেশি কঠিন। এর জেরে শেষ পর্যন্ত বাংলা মাধ্যমের ২০% পড়ুয়াও অসংরক্ষিত ক্যাটেগরিতে ভর্তি হয়ে উঠতে পারেন না ডাক্তারিতে। গত কয়েক বছরে দেখা গিয়েছে, রাজ্যভিত্তিক মেধাতালিকার প্রথম ২৫০ প্রার্থীর (জেনারেল) কেউ-ই বাংলা মাধ্যমের নয়। এমনকি, আম-পড়ুয়াদের পাশাপাশি উচ্চমাধ্যমিকের প্রথম কুড়িতে থাকা মেধাবীদের নিয়তিটাও খুব আলাদা নয়।

নিটের প্রস্ততি করায়, এমন একটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার, পেশায় চিকিৎসক অমিয়কুমার মাইতি মনে করেন, নিটের কল্যাণে কোচিং সেন্টারের বাড়বাড়ন্ত। এবং সেখানেও ইংরেজি ভাষার শহুরে পড়ুয়াদের দাপট চোখে পড়ার মতো। তাঁর কথায়, ‘উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় খুব ভালো ফল করা ছেলেমেয়েদের সিংহভাগই জেলাস্তরের। এঁদের একটা বড় অংশই আবার আর্থসামাজিক ভাবে দুর্বল। ফলে তাঁরা প্রচুর টাকা খরচ করে নামী কোচিং সেন্টারে নিটের প্রশিক্ষণ নিয়ে উঠতে পারেন না। আবার ইংরেজিতেও তাঁরা খুব সরগর নন। সেজন্য এই পড়ুয়াদের সাফল্যের হার একেবারেই সন্তোষজনক নয়।’ তাই তামিলনাডুকে অনুসরণ করার পক্ষেই সওয়াল করছেন তিনি।

নিটের প্রস্তুতিতে জীবনবিজ্ঞান পড়ান, শিক্ষিকা রুবাই ভট্টাচার্যের আক্ষেপ, নিটের প্রশ্নের ধরন রাজ্য বোর্ডের সিলেবাসের সঙ্গে বিশেষ মেলে না। বরং তা মেলে সিবিএসই সিলেবাসের সঙ্গে। ফলে ধাক্কা খায় মাতৃভাষায় পড়া ছাত্রছাত্রীরা। তিনি বলেন, ‘সারা দেশজুড়ে ডাক্তারিতে ভর্তির ক্ষেত্রে সমগোত্রীয় মেধার মাপকাঠি তৈরি করতে গিয়ে আখেরে সিবিএসই কিংবা আইসিএসই-কেই প্রাধান্য দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে রাজ্য বোর্ডের অনেক চূড়ান্ত সফল ও মেধাবী ছাত্রছাত্রী ডাক্তারি পড়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এতে কিন্তু দিনের শেষে সমাজই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আরও ভালো ডাক্তার পাওয়ার সুযোগ ও সম্ভাবনা থেকে।’

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#West Bengal, #Medical, #Neet, #neet exam

আরো দেখুন