পুজোর ছুটিতে জঙ্গলমহল ঘুরতে যাওয়ার চাহিদা বাড়ছে

ঘন সবুজ জঙ্গলের বুক চিরে চলে গিয়েছে কালো মসৃণ রাস্তা। মাথার উপর ভেসে রয়েছে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ। কোলাহল থেকে দূরে নির্জন ডেস্টিনেশন বাঁকুড়ার জঙ্গলমহল হাতছানি দিচ্ছে। পুজোর ছুটি কাটানোর জন্য ইতিমধ্যেই জঙ্গলমহলের প্রায় সব হোটেল, লজের বুকিং শেষের পথে। তার জেরে করোনা পর্বের মাঝে মুখে হাসি ফুটছে জঙ্গলমহলের একাংশের।
গতবছর করোনার প্রথম ঢেউয়ের ধাক্কায় মার খেয়েছিল পর্যটন। পর্যটকদের পাশাপাশি আতঙ্কে ছিলেন ব্যবসায়ীরাও। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ কার্যত কেটে গিয়েছে। তাই আতঙ্ক দূরে সরিয়েই পর্যটকের ঢল নামতে চলেছে বাঁকুড়ার মুকুটমণিপুর, ঝিলিমিলি, সুতান, তালবেড়িয়া প্রভৃতি পর্যটন কেন্দ্রে। গভীর জঙ্গলে রৌদ্র ছায়ার খেলা দেখার জন্য ১২ মাইলে আছে তিনটি ভিউ পয়েন্ট। আদিবাসী গ্রাম পেরিয়ে সুতানও পর্যটকের মন ভালো করে দেবে।

জঙ্গলমহলের ব্যবসায়ীদের একাংশের বক্তব্য, মাওবাদী আতঙ্ক এখন অতীত। শান্তিতেই রয়েছেন আদিবাসীরা। তবে জীবিকা সঙ্কট আছেই। পর্যটনে বিপুল সম্ভাবনা থাকায় পরিকাঠামো বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। ভিউ পয়েন্টগুলিরও সংস্কার প্রয়োজন রয়েছে।
মুকুটমণিপুর, ঝিলিমিলিতে পর্যটকদের থাকার জন্য একাধিক লজ ও রিসর্ট রয়েছে। ঝিলিমিলিতে মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে ২০১৭ সালে উদ্বোধন হয়েছিল ট্রি হাউসের। ইতিমধ্যেই তার পুজোর বুকিং শেষ। সেখানকার এক কর্মী দেবব্রত দাস বলেন, পর্যটকদের থাকার জন্য এখানে ১০টি ঘর রয়েছে। কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের পর্যটকরা তা ফোনে বুকিং করে নিয়েছেন। দুর্গাপুজো থেকে লক্ষ্মীপুজো পর্যন্ত এখানকার প্রত্যেকটি ঘর বুক হয়ে গিয়েছে।

পর্যটকরা ঝিলিমিলি থেকে সুতান, তালবেড়িয়া প্রভৃতি স্পটগুলিও ঘুরে দেখতে পারবেন। তাছাড়া বাঁকুড়ার সীমানা সংলগ্ন পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রামেও ঘুরে আসতে পারেন। গভীর জঙ্গলে পাখির কলরব ছাড়া আর কোনও শব্দই কানে আসবে না। জঙ্গলের মাঝে পাথরের খাঁজ ধরে বয়ে চলা জলস্রোতও পর্যটকের নজর কাড়বে। দেখা মিলতে পারে ময়ূর সহ অন্যান্য জীবজন্তুরও।
এছাড়া নদী, পাহাড় ও জঙ্গলের মিলন মুকুটমণিপুরও এবার পুজোর ডেস্টিনেশন হতে চলেছে পর্যটকদের। সেখানেও পুজোর সপ্তমী থেকে লক্ষ্মীপুজো পর্যন্ত হোটেল, লজ বুকিং শেষের পথে। মুকুটমণিপুরে বর্তমানে ১১টি হোটেল, লজ রয়েছে। সেখানে মোটামুটি ৩০০ পর্যটক থাকতে পারেন। মুকুটমণিপুরের হোটেল, লজ মালিক সংগঠনের সম্পাদক সুদীপ সাউ বলেন, পুজোর জন্য বুকিং চলছে। তবে অধিকাংশ রুমের বুকিং হয়ে গিয়েছে। এবার করোনা পরিস্থিতির জন্য খাবারের দাম সামান্য বাড়লেও ঘরভাড়া একই আছে। মুকুটমণিপুরকে কেন্দ্র করে শুধু হোটেল, লজ ব্যবসায়ী নয়, এবার রোজগারের আশায় বুক বাঁধছেন হস্তশিল্পীদের পাশাপাশি অন্যান্য পেশার মানুষজনও। অনেকের দাবি, বর্তমান রাজ্য সরকারের হাত ধরে মুকুটমণিপুরের সৌন্দর্য আরও বেড়েছে। তার ফলে পর্যটকের সংখ্যাও বাড়ছে। এবার পুজোয় তাই বাড়তি লাভের আশায় রয়েছেন হস্তশিল্পীরা। পর্যটকরা অবশ্য মুকুটমণিপুর বা ঝিলিমিলিতে থাকার জায়গা না পেলেও খাতড়া, রানিবাঁধে সেই সুযোগ পেতে পারেন।
